ঢাকা ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সচেতনতায় জয় করা যাবে ডায়াবেটিসকে

ফিচার ডেস্ক :  দেশের ৫০ লক্ষাধিক লোক এখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস আছে এমন রোগী অন্তত শতকরা ৫০ ভাগ জানে না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস শরীবে নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, অনিয়ন্ত্রিত থাকলে শরীরের যেকোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকেজো করে দিতে পারে।

ডায়াবেটিস কী :  ইনসুলিন অগ্ন্যাশয় হতে নিঃসৃত একটি হরমোন। এটি আমাদের বিপাকক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। ইনসুলিনের মূল কাজ হলো রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখা। ইনসুলিনের অভাবে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। দেখা দেয় ডায়াবেটিসের। ডায়াবেটিস একবার হলে ধরেই নিতে হবে এটা সারা জীবনের রোগ। এ জন্য চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সুনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস হলে ভয়ের কিছু নেই। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকলে মানুষ স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম ও চলাফেরা করতে পারেন। ডায়াবেটিস হলেই সব খাবার বন্ধ হবে, এটা ভুল ধারণা। সুশৃঙ্খল জীবনব্যবস্থা ডায়াবেটিস চিকিৎসার একটি অংশ। বেশির ভাগ টাইপ টু- ডায়াবেটিসই বংশগত। তবে বংশে কারো ডায়াবেটিস না থাকলেও ডায়াবেটিস হতে পারে। তবে এটা সংক্রামক রোগ নয়। মায়ের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকলে বাচ্চার ডায়াবেটিস না হওয়ারই কথা।

ঝুঁকিতে যাঁরা

(ক) যদি বংশে ডায়াবেটিস থাকে।

(খ) শরীরের ওজন যাঁদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।

(গ) শারীরিক পরিশ্রম যাঁরা কম করেন।

(ঘ) যাঁরা অতিরিক্ত খাবার পছন্দ করেন, অর্থাৎ ভোজনবিলাসী।

(ঙ) যাঁরা জীবনযাপনে শৃঙ্খলা মেনে চলেন না।

রোগ নির্ণয় :  ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, বারবার পানির তেষ্টা পাওয়া, সব সময় ক্ষুধা লাগা—এই তিনটিকে ডায়াবেটিসের মূল লক্ষণ বলে ধরা হয়। এ ছাড়া সারা রাত না খেয়ে সকালে রক্তের গ্লুকোজ, খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর রক্তের গ্লুকোজ, যেকোনো সময় রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ ও হিমগ্লোবিন এ১সি নামক রক্ত পরীক্ষা ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব :  ডায়াবেটিস হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, ডায়াবেটিস রোগীদের শতকরা ৫০ ভাগ এ ধরনের রোগে মারা যায়। পায়ে ডায়াবেটিসজনিত ঘা এবং অবশেষে পা কেটে ফেলা লাগতে পারে। স্নায়ুতন্ত্রের কাজ নষ্ট করে দেওয়ার জন্য যে অবস্থার উদ্ভব হয়, তাকে ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথি বলে। প্রায় ৫০ ভাগ ডায়াবেটিস রোগী এতে আক্রান্ত হয়। হাতে-পায়ে ব্যথা, অনুভূতিহীনতা, দুর্বলতা, শিনশিন করা ইত্যাদি হতে পারে। ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি হলে চোখে রেটিনা নষ্ট হয়ে যায়, যা অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। ১৫ বছর ধরে ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীর ২ শতাংশ অন্ধ হয়ে যায় এবং ১০ শতাংশের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। ডায়াবেটিস কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এ ধরনের অবস্থাকে ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি বলে। ১০-২০ ভাগ ডায়াবেটিস রোগী কিডনিজনিত জটিলতায় মারা যায়।

চিকিৎসা :  ভয় পাবেন না। দেশেই ডায়াবেটিসের চিকিৎসা আছে, আধুনিক চিকিৎসা। দেশে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞও আছেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে বিপদের আশঙ্কা কম; বরং অন্যদের চেয়ে ভালো থাকা যায়। কারণ, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি যেভাবে নিজেকে সুশৃঙ্খল করেন, তাতে জীবনমান বেড়েই যায়। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পা করতে হবে বড় আর জিহ্বা ছোট, মানে পরিশ্রম করবেন বেশি, খাবেন কম। এভাবে অর্ধেক ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন এ রোগ। সঙ্গে ওষুধ তো আছেই। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রতিরোধ করুন ডায়াবেটিস :  অতিরিক্ত ওজন অপনার শত্রু। আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটুন অথবা অন্য যেকোনো ব্যায়াম করুন। অপরিমিত খাদ্য গ্রহণ বর্জন করুন। আঁশযুক্ত খাবার খান (যেমন—শাকসবজি, কলা ইত্যাদি)। ফাস্টফুড বেশি খাওয়া এবং কোমল পানীয় পান থেকে বিরত থাকুন। এগুলো আপনার ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পদ্ধতির উন্নয়ন ও শারীরিক পরিশ্রম অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে দেখা গেছে সর্বোচ্চ ৬৫ ভাগ ক্ষেত্রে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

সচেতনতায় জয় করা যাবে ডায়াবেটিসকে

আপডেট টাইম : ০১:২১:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ মার্চ ২০১৯

ফিচার ডেস্ক :  দেশের ৫০ লক্ষাধিক লোক এখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস আছে এমন রোগী অন্তত শতকরা ৫০ ভাগ জানে না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস শরীবে নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, অনিয়ন্ত্রিত থাকলে শরীরের যেকোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকেজো করে দিতে পারে।

ডায়াবেটিস কী :  ইনসুলিন অগ্ন্যাশয় হতে নিঃসৃত একটি হরমোন। এটি আমাদের বিপাকক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। ইনসুলিনের মূল কাজ হলো রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখা। ইনসুলিনের অভাবে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। দেখা দেয় ডায়াবেটিসের। ডায়াবেটিস একবার হলে ধরেই নিতে হবে এটা সারা জীবনের রোগ। এ জন্য চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সুনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস হলে ভয়ের কিছু নেই। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকলে মানুষ স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম ও চলাফেরা করতে পারেন। ডায়াবেটিস হলেই সব খাবার বন্ধ হবে, এটা ভুল ধারণা। সুশৃঙ্খল জীবনব্যবস্থা ডায়াবেটিস চিকিৎসার একটি অংশ। বেশির ভাগ টাইপ টু- ডায়াবেটিসই বংশগত। তবে বংশে কারো ডায়াবেটিস না থাকলেও ডায়াবেটিস হতে পারে। তবে এটা সংক্রামক রোগ নয়। মায়ের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকলে বাচ্চার ডায়াবেটিস না হওয়ারই কথা।

ঝুঁকিতে যাঁরা

(ক) যদি বংশে ডায়াবেটিস থাকে।

(খ) শরীরের ওজন যাঁদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।

(গ) শারীরিক পরিশ্রম যাঁরা কম করেন।

(ঘ) যাঁরা অতিরিক্ত খাবার পছন্দ করেন, অর্থাৎ ভোজনবিলাসী।

(ঙ) যাঁরা জীবনযাপনে শৃঙ্খলা মেনে চলেন না।

রোগ নির্ণয় :  ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, বারবার পানির তেষ্টা পাওয়া, সব সময় ক্ষুধা লাগা—এই তিনটিকে ডায়াবেটিসের মূল লক্ষণ বলে ধরা হয়। এ ছাড়া সারা রাত না খেয়ে সকালে রক্তের গ্লুকোজ, খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর রক্তের গ্লুকোজ, যেকোনো সময় রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ ও হিমগ্লোবিন এ১সি নামক রক্ত পরীক্ষা ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব :  ডায়াবেটিস হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, ডায়াবেটিস রোগীদের শতকরা ৫০ ভাগ এ ধরনের রোগে মারা যায়। পায়ে ডায়াবেটিসজনিত ঘা এবং অবশেষে পা কেটে ফেলা লাগতে পারে। স্নায়ুতন্ত্রের কাজ নষ্ট করে দেওয়ার জন্য যে অবস্থার উদ্ভব হয়, তাকে ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথি বলে। প্রায় ৫০ ভাগ ডায়াবেটিস রোগী এতে আক্রান্ত হয়। হাতে-পায়ে ব্যথা, অনুভূতিহীনতা, দুর্বলতা, শিনশিন করা ইত্যাদি হতে পারে। ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি হলে চোখে রেটিনা নষ্ট হয়ে যায়, যা অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। ১৫ বছর ধরে ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীর ২ শতাংশ অন্ধ হয়ে যায় এবং ১০ শতাংশের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। ডায়াবেটিস কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এ ধরনের অবস্থাকে ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি বলে। ১০-২০ ভাগ ডায়াবেটিস রোগী কিডনিজনিত জটিলতায় মারা যায়।

চিকিৎসা :  ভয় পাবেন না। দেশেই ডায়াবেটিসের চিকিৎসা আছে, আধুনিক চিকিৎসা। দেশে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞও আছেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে বিপদের আশঙ্কা কম; বরং অন্যদের চেয়ে ভালো থাকা যায়। কারণ, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি যেভাবে নিজেকে সুশৃঙ্খল করেন, তাতে জীবনমান বেড়েই যায়। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পা করতে হবে বড় আর জিহ্বা ছোট, মানে পরিশ্রম করবেন বেশি, খাবেন কম। এভাবে অর্ধেক ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন এ রোগ। সঙ্গে ওষুধ তো আছেই। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রতিরোধ করুন ডায়াবেটিস :  অতিরিক্ত ওজন অপনার শত্রু। আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটুন অথবা অন্য যেকোনো ব্যায়াম করুন। অপরিমিত খাদ্য গ্রহণ বর্জন করুন। আঁশযুক্ত খাবার খান (যেমন—শাকসবজি, কলা ইত্যাদি)। ফাস্টফুড বেশি খাওয়া এবং কোমল পানীয় পান থেকে বিরত থাকুন। এগুলো আপনার ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পদ্ধতির উন্নয়ন ও শারীরিক পরিশ্রম অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে দেখা গেছে সর্বোচ্চ ৬৫ ভাগ ক্ষেত্রে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।