আবুজাফর এম. ছালেহ্, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)
স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের পতনের লক্ষ্যে ১ দফা দাবি নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন নিজেদের গদি রক্ষার্থে পুলিশ বাহিনী, হেলমেট বাহিনী, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ তাদের পালিত সকল বাহিনীকে অস্ত্রসস্ত্রসহ ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশনা দিয়েছিল স্বয়ং শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় গত ০৪ আগস্ট ২০২৪ খ্রি. কারফিউ চলমান ছিল এবং তাতে মহড়া দিচ্ছিল সরকারের পেটুয়া বাহিনী। কিন্তু এদেশের সাহসী সন্তানেরা কারফিউ ভঙ্গ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। সেসময় মিরপুর ১০ নাম্বারের গোল চত্ত্বরে ছাত্রদের সাথে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার ১ নং মাধবখালী ইউনিয়নের নতুন শ্রীনগর গ্রামের বাসিন্দা মো. হারুন-অর-রশিদ হাওলাদারের ছেলে মো. আরিফুল। যিনি পেশায় একজন আতর, টুপি এবং ইসলামি বই বিক্রেতা হলেও প্রথম থেকেই ছাত্রদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছিলেন। গত ০৪ আগস্ট বিকেলে মিরপুর ১০ নাম্বারের ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভবনের ছাদ থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়িভাবে গুলি ছুঁড়তে থাকে সরকারের লেলিয়ে দেয়া বাহিনী। সেখানে মূহুর্তেই একজন শিশুসহ মোট ০৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে। শিশুটির চিৎকারে যখন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই তাকে রক্ষা করার জন্য ছুটে যান আরিফুল। শিশুটিকে নিরাপদ স্থানে নেয়ার প্রাক্কালে আরিফুলকে উদ্দেশ্য করে মুহুর্মুহু গুলি ছুঁড়তে থাকলে পরপর ০৪টা গুলি এসে তাঁর বাম পায়ে এসে পড়ে। এর মধ্যে দুইটা গুলি ফুঁড়ে বেরিয়ে যায় এবং বাকি দুটো গুলি তাঁর পায়ের মধ্যে আটকে থাকে। আরিফুল শিশুটিসহ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আন্দোলনরত ছাত্রদের মধ্য থেকে কয়েকজন তাঁকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা সেখান থেকে তাঁকে আগারগাঁও পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে নিজের থেকে ৬০,০০০(ষাট হাজার) টাকা খরচের পরে ছাত্রদের পক্ষ থেকে বাকি চিকিৎসার খরচ চালানো হয়। দীর্ঘ প্রায় একমাস চিকিৎসা চালিয়ে টাকার অভাবে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। খবর পেয়ে মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় তাঁর চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করার আশ্বাস প্রদান করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা বাবদ তাঁকে ২০ হাজার টাকা এবং পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক তাঁকে ১০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। পটুয়াখালী-০১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রী আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন চৌধুরী আরিফুলের সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং তাঁর সুচিকিৎসার ব্যাপারে সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন। বর্তমানে বাম পায়ে লোহার খাচা লাগানো আরিফুল ব্যক্তিগত জীবনে ০৪ মাস বয়সী একটা পুত্র সন্তান আরাফের জনক। বৃদ্ধ পিতামাতা, স্ত্রী ও পুত্র নিয়া তাঁর সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি নিজেই। তাঁর সংসারের অন্যান্য সদস্যরা এখন অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে। তাঁর স্ত্রী কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন-” দুই বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছিল, আমাদের ০৪ মাস বয়সী একটা ছেলে আছে। আমার স্বামী দেশের জন্য লড়াই করে পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। সরকারের কাছে আবেদন করছি তাঁকে সুচিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা হোক।” আরিফুলের বৃদ্ধা মা শামিমা বেগম বলেন- “আমার ছেলেটা আজ কতদিন যাবৎ পঙ্গু হয়ে পড়ে আছে, মাঝেমাঝে খিচুনি দিয়ে মারাত্মক জ্বর আসে, ব্যথা সহ্য করতে না পেরে নিজের মাথা খুঁটিতে ঠোকায়। সে এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে! তাঁকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে আবেদন জানাই।” আরিফুলের সাথে কথা বলে জানা যায়- সে আগের মতো সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করে পরিবারের হাল ধরতে চান এবং যারা তাঁর উপরে অন্যায়ভাবে গুলি চালিয়েছে তাদের বিচার চান। তিনি সরকারের এবং সমাজের বিত্তশালী লোকদের প্রতি সাহায্যের জন্য বিনীত প্রার্থনা করেন। আরিফুলের বিকাশ নাম্বার : ০১৩০৫৫৪৫৫৯২