মিহিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় দু’দিনে বিপুল পরিমাণ নকল প্রসাধানী, ভেজাল ঘি ও মধু উদ্ধার, ৬ জনের কাছ থেকে একলক্ষ ২২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে।সাতক্ষীরায় নকল পণ্য, ভেজাল ও মাদকের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে নেমেছে প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালত, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৬) ও বিএসটিআই যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করছে।অভিযানকে ঘিরে জনমনে ফিরে এসেছে স্বস্তি।এক শ্রেণির প্রতারক চক্র নকল পণ্য বাজারজাত করে ক্রেতা ও ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। আবার ভেজাল মিশিয়ে ক্রেতাদের ঠকিয়ে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছিল লক্ষ লক্ষ টাকা। একই সাথে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদকের বিষবাষ্প ছড়িয়ে যুব সমাজকে ধ্বংসের দ্বারে ঠেলে দিচ্ছে একটি চক্র। এতে করে জেলায় নকল ও ভেজাল পণ্যে বাজার সয়লাব। নকল ও ভেজাল পণ্য ব্যবহারের বিরূপ প্রভাব পড়তে থাকে জনস্বাস্থ্যের উপর। সর্বনাশা মাদকের কারণে দেখা দেয় আইন-শৃংখলার অবনতি। এমন পরিস্থিতিতে অতীষ্ঠ হয়ে ওঠে সর্বসাধারণ। সেই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে এবং অপরাধ দমনে মাঠে নামে প্রশাসন। জেলার ভেজাল ব্যবসায়ীদের ডেরায় হানা দেয় যৌথবাহিনী। ডেরা থেকে খুঁজে বের করে আনে বিপুল পরিমাণ নকল ও ভেজাল পণ্য। দু’দিনে ৬জনের নিকট থেকে একলক্ষ ২২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।র্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, র্যাব-৬, সিপিসি-১ এর সদস্যরা নকল পণ্য বাজারজাতকরণ ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ঘি তৈরির কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। ৯ সেপ্টেম্বর র্যাব-৬, সিপিসি-১ সাতক্ষীরার, কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার মো: ইশতিয়াক হোসাইন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুমনা আইরিন ও খুলনা অঞ্চলের বিএসটিআই কর্মকর্তা মো: সাফায়েত হোসেনের নেতৃত্বে সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজার এলাকায় নকল প্রসাধনী বাজারজাত করার অপরাধে শহরতলীর মাগুরা এলাকার গোবিন্দ সাধুর ছেলে প্রবির কুমার সাধুকে বিএসটিআই আইন ২০১৮ এর ৩০ ধারা মোতাবেক (মামলা নং ২১১০, তারিখ: ০৯-০৯-২০২১ মূলে) ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইভাবে পলাশপোল এলাকার মো: আব্দুর রশিদের ছেলে মো: জাহাঙ্গীর হোসেন এবং লুৎফর রহমানের ছেলে মো: মিলন হোসেনকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫২ ধারা মোতাবেক (মামলা নং ২১১১/২০২১, ২১১২/২০২১ তাং: ০৯-০৯-২০২১ মূলে) ৫হাজার করে দুজনকে মোট ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।এদিকে সাতক্ষীরা জেলার সদর থানার ঘোষপাড়া এলাকায় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ঘি তৈরির কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ওই এলাকার শাবাদ ঘোষের ছেলে বিমল ঘোষকে বিএসটিআই আইন ২০১৮ এর ৩০ ধারা মোতাবেক (মামলা নং ২১১৩, তাং: ০৯-০৯-২০২১ মূলে) ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।এদিকে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের অংশ হিসেবে র্যাব-৬, সিপিসি-১, সদস্যরা পৃথক অভিযানে ৭৮ বোতল ফেন্সিডিল ও ৯০০ গ্রাম গাঁজাসহ ০৩ জনকে আটক করেছে। আটককৃত হলো-দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের গোবরাখালি এলাকার আব্দুস সামাদ গাজীর ছেলে মো: জাহিদুল ইসলাম (২৫), সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী নতুন গ্রাম এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম (২০) এবং একই উপজেলার শিকড়ি এলাকার গোলাম বারী সরদারের ছেলে মো: মিলন সরদার (২৭)।র্যাব জানায়, গত ০৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা কোম্পানির একটি আভিযানিক দল সাতক্ষীরা জেলার সদর থানাধীন ফিংড়ি ইউনিয়নের ফিংড়ি গ্রামের সাধু ওয়েল মিলের সামনে পাকা চাতালের উপর হতে ৫৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ মো: জাহিদুল ইসলাম (২৫)কে হাতে নাতে আটক করেন।পরবর্তীতে তাকে সাতক্ষীরা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা হয় যার নং-২৮, তাং ০৯-০৯-২০২১, ধারা: মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২০১৮ সালের ৩৬ (১) সারনী ১৪(গ)।
র্যাব আরও জানায়, একইদিন র্যাব-৬, সাতক্ষীরা কোম্পানির সদস্যরা সাতক্ষীরা সদর থানার কুশখালী ইউনিয়নের বাউকোলা ভাদড়া গ্রামস্থ মেসার্স কে.এন ব্রিকস (ইটভাটা) এর সামনে পাকা রাস্তার উপর হতে ২৩ বোতল ফেন্সিডিল ও ৯০০ গ্রাম গাঁজা সহ আরিফুল ইসলাম (২০) ও মো: মিলন সরদার (২৭)কে হাতে নাতে আটক করেন।পরবর্তীতে তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। এঘটনায় মামলা হয়েছে। যার নং ২৭, তাং ০৮-০৯-২০২১, ধারা: মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২০১৮ সালের ৩৬ (১) সারনী ১৪ (খ)/১৯(ক)।এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর র্যাব-৬, সিপিসি-১ সাতক্ষীরার, কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার মো: ইশতিয়াক হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শাহিদুজ্জামান এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আ. ন. ম আবুজর গিফারীর নেতৃত্বে জেলার শ্যামনগর থানাধীন হরিনগর বাজারে নিম্ন মানের ভেজাল মিশ্রিত মধুর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভেজাল চক্রের সদস্য রাশিদুল ইসলামের নিকট হতে ৯৫টি প্লাস্টিকের ড্রামে মোট ৪,২৭৫ লিটার এবং হাসান বাবুর নিকট হতে ৮টি প্লাস্টিকের ড্রামে ৩৬০ লিটার সহ মোট ৪,৬৩৫ লিটার ভেজাল মধু উদ্ধার করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আইন ২০১৮ এর ২১ ধারা লংঘনের অপরাধে ২৯ ধারা মোতাবেক দু’জনকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরবর্তীতে আটককৃত নিম্ন মানের ভেজাল মিশ্রিত মধু, জেলা কর্মকর্তা বিএসটিআই খুলনার মো: সাফায়েত হোসেন এর নেতৃত্বে ধ্বংস করা হয়েছে।র্যাব-৬, সিপিসি-১ এর কাম্পানি কমান্ডার জানান, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত অপরাধী ও প্রতারক গ্রেপ্তার এবং অবৈধ অস্ত্র গোলাবাররুদ ও মাদক উদ্ধারসহ বিভিন্ন সময়ে তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দালাল চক্র এবং অসাধু ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।