পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন সময়ে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন প্রতিনিধিরা।
সিলেট
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার রশিদপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আট জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ৩০ জন আহত হন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ। দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে রশিদপুরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে লন্ডন এক্সপ্রেস ও এনা পরিবহনের দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসটির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ ও দমকল বাহিনী। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের উপ-পরিচালক কোবাদ আলী সরকার বলেন, ‘লন্ডন এক্সপ্রেসের বাসটি রাস্তার ভুল দিকে এসে এনা পরিবহনের বাসটিকে ধাক্কা দেয়। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, লন্ডন এক্সপ্রেসের ভুলেই এতগুলো প্রাণহানি ঘটেছে। তবে দুর্ঘটনার আসল কারণ পরে তদন্তে জানা যাবে।’তাৎক্ষণিকভাবে সাত জনের মৃত্যুর কথা জানায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রহিমা খাতুন নামের আরেক নারী মারা যান। তিনি সুনামগঞ্জের দুয়ারাবাজারের ভাওয়ামী গ্রামের মফিজ উদ্দিনের মেয়ে। নিহত অন্যরা হলেন– সিলেটের উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক আল মাহমুদ সাদ ইমরান খান (৩৩), এনা পরিবহনের বাসের চালক ওসমানীনগর উপজেলার ধরখা গ্রামের মঞ্জুর আলী (৩৮), এনার সুপারভাইজার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মিঠাভরা গ্রামের সালমান খান (২৫), হেলপার ধরখা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন (২৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার রাজানিয়াকান্দি পশ্চিম পাড়ার নুরুল আমিন (৫০), ঢাকার ওয়ারী এলাকার নাদিম আহমদ সাগর (২৯) ও সিলেট নগরের আখালিয়া নয়াবাজারের শাহ কামাল (২৭)।আহতদের মধ্যে ১৫ জন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সিলেট মহানগর পুলিশ জানায়, হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিসাধীনরা হচ্ছেন– রেজাউল করিম (৫০), শামিম (২৩), জসিম উদ্দিন (৩০), আলা উদ্দিন (৬০), সায়ান (১৬), সালাম (৪০), ডা. অন্তরা (৩০), চান বিবি (৬০), শারমিন (৩০), সীমা পারভিন (৩০), সানাত (৩৫), মাহি (৭), সুবর্ণা (৩০) ও সেলিনা পারভীন (৩০)।
বগুড়া:
বগুড়ায় বাসের ধাক্কায় সিএনজি অটোরিকশার চালকসহ চার জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোরে শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ নিহতদের উদ্ধার করেছেন। এ সময় অন্তত আধা ঘণ্টা যান চলাচল ব্যাহত হয়। বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার বজলুর রশিদ দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।নিহতদের দুই জন হলেন– বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ডেমাজানি গ্রামের ক্ষিতিশ চন্দ্র দাসের ছেলে কালী দাস (৭২) এবং ধুনট উপজেলার আনারপুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে শাহ্ জামাল (৩৪)। নিহত সিএনজি চালক ও অপর যাত্রীর পরিচয় পাওয়া যায়নি।পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সূত্র জানায়, শুক্রবার সকালে বগুড়ার শেরপুর থেকে সিএনজি অটোরিকশা চালক তিন যাত্রী নিয়ে বগুড়া শহরের দিকে রওনা হন। ভোর ৬টার দিকে তিনি শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে পৌঁছান। এসময় ঢাকা ছেড়ে আসা গাইবান্ধাগামী শাওন পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিএনজি অটোরিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তিন জন নিহত হন। খবর পেয়ে বগুড়ায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার করেন।
আহত একজনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার বজলুর রশিদ জানান, তাৎক্ষণিকভাবে অটোরিকশার নিহত চালক ও এক যাত্রীর পরিচয় পাওয়া যায়নি।স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সরকার ও আদালতের নির্দেশ থাকালেও বগুড়ায় দুটি মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ হয়নি। দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু সদস্যরা আর্থিক সুবিধা নিয়ে এসব অবৈধ যান চলাচলে সহযোগিতা করেন। গ্যাস তোলার অজুহাতে থ্রি-হুইলারগুলো দিনরাত মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ায়। এতে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ শেরপুর ক্যাম্পের ইন্সপেক্টর বানিউল আনাম জানান, সকাল ৮টা পর্যন্ত গ্যাস তোলার অনুমতি থাকলেও থ্রি-হুইলারগুলো নির্দেশ অমান্য করে সারাদিনই মহাসড়কে চলাচল করে থাকে। প্রায় প্রতিদিন ১৫-২০টি’সহ গত মাসে ৩৫০টি থ্রি-হুইলার জব্দ করা হয়েছিল। মালিকরা জরিমানা দিয়ে আবারও মহাসড়কে যাত্রী বহন করে থাকে। এসব অবৈধ যান ধ্বংস করার অনুমতি না থাকায় এদের রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
অটোরিকশা চালকসহ দু’জন নিহত: জেলায় অপর দুর্ঘটনায় ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশা চালকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তিষীগাড়ী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুপচাঁচিয়া থানার ওসি হাসান আলী এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিহতরা হলেন– দুপচাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের মোড়গ্রামের অটোরিকশা চালক আবদুর রউফ রাসেল (৩৩) এবং যাত্রী একই ইউনিয়নের বেলোহালী গ্রামের ডেকেরেটর ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন (৩৭)।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বেলা ২টার দিকে অটোরিকশা চালক রাসেল ডেকোরেটর ব্যবসায়ী মুক্তারকে নিয়ে চৌমুহনী থেকে দুপচাঁচিয়া সদরে আসছিলেন। তিষীগাড়ী এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাককে ওভারটেক করার চেষ্টা করে অটোরিকশাটি। তখন নওগাঁ ছেড়ে আসা বগুড়াগামী একটি ট্রাক পেছন থেকে অটোরিকশায় ধাক্কা দেয়। দুই ট্রাকের মাঝে চাপা পড়ে অটোরিকশা দুমড়েমুচড়ে যায়। স্থানীয়রা চালক রাসেল ও যাত্রী মুক্তারকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাকের চালক ও হেলপার পালিয়ে যান। পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে।দুপচাঁচিয়া থানার ওসি হাসান আলী জানান, কোনও অভিযোগ না থাকায় নিহত দু’জনের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার মেকিয়ারকান্দায় ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে রাসেল (২২) ও শহিদুল ইসলাম রনি (২৫) নামে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা ১২টায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, হালুয়াঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া মালবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ট্রাকটি রাস্তার পাশের ক্ষেতে পড়ে যায় এবং মোটরসাইকেল আরোহী দুজন ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। তারা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। স্থানীয়রা এসে ট্রাকের নিচ থেকে তাদের উদ্ধার করেন।
নিহত রাসেল ধোবাউড়া খরিয়া গ্রামের সাব্বির উদ্দিনের এবং রনি একই উপজেলার বাঘবেড় গ্রামের কুতুবুদ্দিনের ছেলে। দুই বন্ধু ধোবাউড়া থেকে হালুয়াঘাটে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। মৃতদেহ উদ্ধার করে ধোবাউড়া থানা কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে বলে জানান ওসি।
বরিশাল
বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের দপদপিয়া সেতুতে বালু বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের আরোহী দুই চাচাতো ভাই নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাকসহ চালক ইয়ার উদ্দিন ও হেলপার রেজাউল করিমকে পুলিশ আটক করে।
নিহতরা হলেন– ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী এলাকার সিরাজ মাতুব্বরের ছেলে শরীফ মাতুব্বর (২০) এবং একই বাড়ির ইউসুফ আলীর ছেলে আল-আমীন (২০)। সম্পর্কে তারা দুই জন চাচাতো ভাই।
কোতয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল হুদা বলেন, ‘জুমার নামাজ আদায় করতে ভাঙ্গা থেকে মোটরসাইকেলে করে ওই দুই যুবক চরমোনাই মাহফিলের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনাকবলিত স্থান অতিক্রমকালে বিপরীতমুখী বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুই চাচাতো ভাই গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আহত শরীফ মাতুব্বরকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আল-আমীনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে তিনিও মারা যান।’
এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই ঘাতক ট্রাকসহ চালক ও হেলপারকে আটক করেছে পুলিশ। দুর্ঘটনা কবলিত মোটরসাইকেলটিও জব্দ করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান।
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে তিন মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে শিমুল বিশ্বাস (৪০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চার জন। শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টার দিকে কালিগঞ্জ-কোটচাঁদপুর সড়কের পাতবিলা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে কালিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
নিহত শিমুল বিশ্বাস কোটচাঁদপুর পৌরসভার দুধসর গ্রামের হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ছেলে। আহতদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
কালিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মামুনুর রশিদ জানান, নিহত শিমুল বিশ্বাস মোটরসাইকেল যোগে কালিগঞ্জ থেকে কোটচাঁদপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে পাতবিলা তেলপাম্পের সামনে পৌঁছালে একটি যাত্রীবাহী বাস ক্রসের সময় পেছন থেকে আসা অন্য এটি মোটরসাইকেল ওভারটেকিং করতে যায়। ফলে দুই মোটসাইকেলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পেছন থেকে আসা আরও একটি মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই দুই মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই শিমুল মারা যান। এ সময় আহত হন আরও চার মোটরসাইকেল আরোহী।