ঢাকা ১১:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

শিবির নেতা থেকে ছাত্রলীগ সেক্রেটারি জাকির টার্গেট এখন দলের টিকেট

বিশেষ প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার থেকে ফিরে ঃ  এস এম জাকির হোসাইন, মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বাসিন্দা তিনি। শিবির নেতা থেকে হয়ে উঠা ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেশ পরিচিতি তার। এবার চাচ্ছেন নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনের আওয়ামীলীগের মনোনয়ন। সে লক্ষ্যেই এলাকায় বিভিন্ন সভা-সংযোগ করছেন নিয়মিত। জাকির উপজেলার হালগরা গ্রামের হাফিজ মাওলানা আব্দুল জলিল (বড় হাফিজ) এর ছেলে। ৫ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি অষ্টম।

জাকিরের পিতা-মাতা, ভাই-বোনসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে  জড়িত। তার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজন কেউই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের আদর্শে বিশ্বাস করেনা। তবে দলের টিকেট পেতে বর্তমান সংসদ সদস্য, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিষেদাগারকে বেছে নিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে স্থানীয় ভাবে দলের ভেতরে দল ও কোন্দল তৈরি হয়েছে। চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে নেতা-কর্মীদের মাঝে। আলোচনায় উঠে আসছে তার শিবির নেতা থেকে ছাত্রলীগ হয়ে উঠার গল্প। অদৃশ্য কোন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে রাতারাতি হয়ে উঠেছেন সম্পদশালী, বিশাল বিত্তের মালিক তিনি।

মন্ত্রীর বদনাম করতে গিয়ে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ঠ হচ্ছে বিষয়টি থুড়াই কেয়ার করছেন তিনি। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, জাকির জামায়াত ঘরনার পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই জামায়াত শিবিরের পরিবেশে বেড়ে উঠেন তিনি। এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ভর্তি হন জামায়াত প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা জামেয়া ক্বাসিমিয়া নরসিংদিতে। এই মাদ্রাসায় জামায়াত শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারের ছাত্ররাই লেখা পড়া করে। শিবিরের কর্মী, সাথী বা সদস্য পর্যায়ের না হলে সেখানে পড়া লেখা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। জাকির সেখান থেকে  আলীম পাশ করেন। এই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল জামায়াতের প্রাক্তন নায়েবে আমীর দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বেয়াই মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরী। সারাদেশে শিবিরের দূর্ঘ হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত জামেয়া ক্বাসিমিয়া নরসিংদি। সেখানে শিবিরের সাথী শপথ নেন জাকির।

আলিম পাশের পর শিবির পরিচালিত ফোকাস কোচিং সেন্টারে শিবিরের বিশেষ ব্যাচে তাদের কয়েকজনকে যত্নসহকারে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয়।তারপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । তখন ২০০৯ সাল। তখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্দার আড়ালে শিবিরের তৎপরতা ব্যাপক। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবিরের প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ তাই সেখানে যারা শিবির করে তারা হয় ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল করেন। আর ভেতরে শিবিরের কাজ চালিয়ে যায়। ক্ষমতাসীন দলের লেবাসে ছাত্র রাজনীতি করা হচ্ছে ছাত্র শিবিরের একটি রাজনৈতিক কৌশল। এছাড়া প্রশিক্ষিত কর্মীকে ক্ষমতাসীন দলে প্রবেশ করিয়ে নিজেদের আদর্শ বাস্তবায়ন করা, অন্যান্য সংগঠনের অভ্যন্তরীণ খবর জেনে নিরাপদে নিজেদের সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাওয়াই হচ্ছে তাদের রাজনৈতিক কৌশল। সেভাবে জাকিরকে শিবিরের নেতাদের নির্দেশে ছাত্রলীগের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্রলীগ হয়ে দায়িত্ব পালন করেন শিবিরের গোয়েন্দা সদস্যের। এর আগে ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি শিশির মোহাম্মদ মনিরের নজরে আসেন তিনি। হয়ে যান সংগঠনের সদস্য প্রার্থী ও হল সেক্রেটারী।

এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ বছর শিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন জাকির। বিভিন্ন প্রোগ্রামে বক্তব্য রেখেছেন, শিবিরের রিপোর্ট রেখেছেন, শিবিরের সাথে হাতে হাত আর কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে শিবিরের কেন্দ্রিয় সভাপতি নির্বাচন নিয়ে আভ্যন্তরীন কোন্দল দেখা দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কেন্দ্রিয় কার্যকরী পরিষদের ২৫ জন সদস্য দল থেকে পদত্যাগ করেন। সে সময় সদস্যদের  প্রত্যক্ষ ভোটে শিশির মনির সভাপতি নির্বাচিত হন কিন্তু তৎকালীন সভাপতি রেজাউল করিমকে পূনরায় সভাপতি ঘোষনা করা হলে বিষয়টি মেনে নেননি শিবিরের সদস্যরা। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দের সাথে শিবিরের সদস্য প্রার্থী পদ থেকে পদত্যাগ করেন জাকিরও । কারণ সিলেটি হিসেবে তিনিও চেয়েছিলেন শিশির মনিরই সভাপতি হোন।

পদত্যাগ করলেও ছাত্রলীগে তার অবস্থান ঠিক রাখেন এবং আরও পাকাপোক্ত করতে থাকেন কারণ শিবির করার বিষয়টি ছিল গোপনীয়। এক পর্যায়ে জিয়া হলের ছাত্রলীগের সেক্রেটারী হন জাকির । এরপর হন কেন্দ্রিয় সহ সম্পাদক। ইতিমধ্যে ছাত্রলীগের ২ টি পদ পেয়ে খোলস পরিবর্তন করে পরের সম্মেলনে সাধারন সম্পাদকের পদ লাভ করে সবাইকে  চমকে দেন। বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। বিশেষ করে সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলের শিবির নেতারা অনেকেই অবগত। ততদিন তারা বিষয়টি প্রকাশ করেনি। তাদের মতে সাবেক শিবির নেতা হলেও তিনি এখনও সবার সাথে যোগাযোগ রাখছেন।ছাত্রলীগকে সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল করতে তার সময় বিভিন্ন কমিটিতে শিবিরের মতাদর্শের ছাত্রদের কমিটিতে যায়গা করে দেন যা দেশের সবাই মোটামুটি জানেন।এখনও নিজ এলাকায় আসলে গোপনে শিবির নেতাদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করেন তিনি।  এদিকে স্থানীয় এক সূত্র নিশ্চিত করে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি পদ পেতে যত অর্থ ব্যায় করেছেন জাকির তার জোগানদাতা ছিলেন তারই এক শিল্পপতি নিকটাত্মীয় ও প্রভাবশালী বিএনপি নেতা।

যাকে গুরু হিসেবে এখনও সম্মান করেন জাকির। অন্যদিকে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাকির ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েই পেয়ে যান আলাদীনের চেরাগ। রাতারাতি আংগুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠার মত অবস্থা হয় তার। ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটি, তদবির ও সুপারিশ বানিজ্য করেই বিত্তবান হয়ে উঠেন তিনি। গ্রামের বাড়ীতে করেন প্রাসাদসম বাড়ী। ভাইদের বিভিন্ন উন্নত দেশে পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। এলাকার বিভিন্ন তদবির বানিজ্যের নিরাপদ লেনদেনের জন্য জুড়ী শহরের কলেজ রোডে একটি রেস্তোরাঁও, শহরে একটি হসপিটালের শেয়ার,স্টেশন রোডে ২ কোটি টাকা দামের জায়গা সহ আরও অনেক নামে বেনামে জমি ও বিনিয়োগ করেন তিনি। ঢাকার বাংলামোটর এলাকায় ফ্লাট ও সিলেট শহরের উপশহরে কেনেন পাচতলা বাড়ী। পারিবারিক সূত্র জানায়, অবৈধ এসব উপার্জন দিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়িও কিনেছেন তিনি। নিজেও চড়েন হেরিয়ার ব্র্যানডের দামী গাড়ীতে। সদ্য ফ্রান্স ও কানাডায় বাড়ীও করেছেন এ তথ্য অনেকেই জানেন। ফ্রান্সে নিজের এক ভাইকে কয়েকটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানও করে দিয়েছেন তিনি। এদিকে, দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিজের মতে আনতে গিয়ে চরম কোন্দল ও গ্রুপিং সৃষ্টি করেছেন জাকির।

আলাপ করে কাজ না হলে অর্থের লোভে ফেলেন। আর তাতেও কাজ না হলে হামলা-মামলার স্বিকার হতে হয় নেতা-কর্মীদের। জুড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের কমিটি তার অনুসারী না হওয়ায় কেন্দ্র ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে তদবির করে এ কমিটি বিলুপ্ত করান এবং কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কার করান জাকির। দল ও দলের বাইরের ভাড়া করা লোকজন দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন সাইবার গ্রুপ। এ গ্রুপ তাকে পজিটিভভাবে সোসাল মাধ্যমে উপস্থাপন করার পাশাপাশি তার বিরোধীদের চরিত্র হননের কাজে লাগে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি জানান, জাকিরের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার বিষয়টি এখন সবার মুখে মুখে। সে শিবির নেতা থেকে কীভাবে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হলেন বিষয়টি দলের কেউ জানেন না, এখন আবার দলের টিকেট পাওয়ার টার্গেট করছেন। সেই শিবির নেতা জাকিরের মুঠ ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেন নি।

আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

শিবির নেতা থেকে ছাত্রলীগ সেক্রেটারি জাকির টার্গেট এখন দলের টিকেট

আপডেট টাইম : ০৯:০০:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার থেকে ফিরে ঃ  এস এম জাকির হোসাইন, মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বাসিন্দা তিনি। শিবির নেতা থেকে হয়ে উঠা ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেশ পরিচিতি তার। এবার চাচ্ছেন নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনের আওয়ামীলীগের মনোনয়ন। সে লক্ষ্যেই এলাকায় বিভিন্ন সভা-সংযোগ করছেন নিয়মিত। জাকির উপজেলার হালগরা গ্রামের হাফিজ মাওলানা আব্দুল জলিল (বড় হাফিজ) এর ছেলে। ৫ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি অষ্টম।

জাকিরের পিতা-মাতা, ভাই-বোনসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে  জড়িত। তার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজন কেউই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের আদর্শে বিশ্বাস করেনা। তবে দলের টিকেট পেতে বর্তমান সংসদ সদস্য, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিষেদাগারকে বেছে নিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে স্থানীয় ভাবে দলের ভেতরে দল ও কোন্দল তৈরি হয়েছে। চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে নেতা-কর্মীদের মাঝে। আলোচনায় উঠে আসছে তার শিবির নেতা থেকে ছাত্রলীগ হয়ে উঠার গল্প। অদৃশ্য কোন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে রাতারাতি হয়ে উঠেছেন সম্পদশালী, বিশাল বিত্তের মালিক তিনি।

মন্ত্রীর বদনাম করতে গিয়ে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ঠ হচ্ছে বিষয়টি থুড়াই কেয়ার করছেন তিনি। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, জাকির জামায়াত ঘরনার পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই জামায়াত শিবিরের পরিবেশে বেড়ে উঠেন তিনি। এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ভর্তি হন জামায়াত প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা জামেয়া ক্বাসিমিয়া নরসিংদিতে। এই মাদ্রাসায় জামায়াত শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারের ছাত্ররাই লেখা পড়া করে। শিবিরের কর্মী, সাথী বা সদস্য পর্যায়ের না হলে সেখানে পড়া লেখা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। জাকির সেখান থেকে  আলীম পাশ করেন। এই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল জামায়াতের প্রাক্তন নায়েবে আমীর দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বেয়াই মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরী। সারাদেশে শিবিরের দূর্ঘ হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত জামেয়া ক্বাসিমিয়া নরসিংদি। সেখানে শিবিরের সাথী শপথ নেন জাকির।

আলিম পাশের পর শিবির পরিচালিত ফোকাস কোচিং সেন্টারে শিবিরের বিশেষ ব্যাচে তাদের কয়েকজনকে যত্নসহকারে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয়।তারপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । তখন ২০০৯ সাল। তখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্দার আড়ালে শিবিরের তৎপরতা ব্যাপক। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবিরের প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ তাই সেখানে যারা শিবির করে তারা হয় ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল করেন। আর ভেতরে শিবিরের কাজ চালিয়ে যায়। ক্ষমতাসীন দলের লেবাসে ছাত্র রাজনীতি করা হচ্ছে ছাত্র শিবিরের একটি রাজনৈতিক কৌশল। এছাড়া প্রশিক্ষিত কর্মীকে ক্ষমতাসীন দলে প্রবেশ করিয়ে নিজেদের আদর্শ বাস্তবায়ন করা, অন্যান্য সংগঠনের অভ্যন্তরীণ খবর জেনে নিরাপদে নিজেদের সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাওয়াই হচ্ছে তাদের রাজনৈতিক কৌশল। সেভাবে জাকিরকে শিবিরের নেতাদের নির্দেশে ছাত্রলীগের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্রলীগ হয়ে দায়িত্ব পালন করেন শিবিরের গোয়েন্দা সদস্যের। এর আগে ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি শিশির মোহাম্মদ মনিরের নজরে আসেন তিনি। হয়ে যান সংগঠনের সদস্য প্রার্থী ও হল সেক্রেটারী।

এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ বছর শিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন জাকির। বিভিন্ন প্রোগ্রামে বক্তব্য রেখেছেন, শিবিরের রিপোর্ট রেখেছেন, শিবিরের সাথে হাতে হাত আর কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে শিবিরের কেন্দ্রিয় সভাপতি নির্বাচন নিয়ে আভ্যন্তরীন কোন্দল দেখা দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কেন্দ্রিয় কার্যকরী পরিষদের ২৫ জন সদস্য দল থেকে পদত্যাগ করেন। সে সময় সদস্যদের  প্রত্যক্ষ ভোটে শিশির মনির সভাপতি নির্বাচিত হন কিন্তু তৎকালীন সভাপতি রেজাউল করিমকে পূনরায় সভাপতি ঘোষনা করা হলে বিষয়টি মেনে নেননি শিবিরের সদস্যরা। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দের সাথে শিবিরের সদস্য প্রার্থী পদ থেকে পদত্যাগ করেন জাকিরও । কারণ সিলেটি হিসেবে তিনিও চেয়েছিলেন শিশির মনিরই সভাপতি হোন।

পদত্যাগ করলেও ছাত্রলীগে তার অবস্থান ঠিক রাখেন এবং আরও পাকাপোক্ত করতে থাকেন কারণ শিবির করার বিষয়টি ছিল গোপনীয়। এক পর্যায়ে জিয়া হলের ছাত্রলীগের সেক্রেটারী হন জাকির । এরপর হন কেন্দ্রিয় সহ সম্পাদক। ইতিমধ্যে ছাত্রলীগের ২ টি পদ পেয়ে খোলস পরিবর্তন করে পরের সম্মেলনে সাধারন সম্পাদকের পদ লাভ করে সবাইকে  চমকে দেন। বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। বিশেষ করে সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলের শিবির নেতারা অনেকেই অবগত। ততদিন তারা বিষয়টি প্রকাশ করেনি। তাদের মতে সাবেক শিবির নেতা হলেও তিনি এখনও সবার সাথে যোগাযোগ রাখছেন।ছাত্রলীগকে সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল করতে তার সময় বিভিন্ন কমিটিতে শিবিরের মতাদর্শের ছাত্রদের কমিটিতে যায়গা করে দেন যা দেশের সবাই মোটামুটি জানেন।এখনও নিজ এলাকায় আসলে গোপনে শিবির নেতাদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করেন তিনি।  এদিকে স্থানীয় এক সূত্র নিশ্চিত করে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি পদ পেতে যত অর্থ ব্যায় করেছেন জাকির তার জোগানদাতা ছিলেন তারই এক শিল্পপতি নিকটাত্মীয় ও প্রভাবশালী বিএনপি নেতা।

যাকে গুরু হিসেবে এখনও সম্মান করেন জাকির। অন্যদিকে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাকির ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েই পেয়ে যান আলাদীনের চেরাগ। রাতারাতি আংগুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠার মত অবস্থা হয় তার। ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটি, তদবির ও সুপারিশ বানিজ্য করেই বিত্তবান হয়ে উঠেন তিনি। গ্রামের বাড়ীতে করেন প্রাসাদসম বাড়ী। ভাইদের বিভিন্ন উন্নত দেশে পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। এলাকার বিভিন্ন তদবির বানিজ্যের নিরাপদ লেনদেনের জন্য জুড়ী শহরের কলেজ রোডে একটি রেস্তোরাঁও, শহরে একটি হসপিটালের শেয়ার,স্টেশন রোডে ২ কোটি টাকা দামের জায়গা সহ আরও অনেক নামে বেনামে জমি ও বিনিয়োগ করেন তিনি। ঢাকার বাংলামোটর এলাকায় ফ্লাট ও সিলেট শহরের উপশহরে কেনেন পাচতলা বাড়ী। পারিবারিক সূত্র জানায়, অবৈধ এসব উপার্জন দিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়িও কিনেছেন তিনি। নিজেও চড়েন হেরিয়ার ব্র্যানডের দামী গাড়ীতে। সদ্য ফ্রান্স ও কানাডায় বাড়ীও করেছেন এ তথ্য অনেকেই জানেন। ফ্রান্সে নিজের এক ভাইকে কয়েকটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানও করে দিয়েছেন তিনি। এদিকে, দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিজের মতে আনতে গিয়ে চরম কোন্দল ও গ্রুপিং সৃষ্টি করেছেন জাকির।

আলাপ করে কাজ না হলে অর্থের লোভে ফেলেন। আর তাতেও কাজ না হলে হামলা-মামলার স্বিকার হতে হয় নেতা-কর্মীদের। জুড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের কমিটি তার অনুসারী না হওয়ায় কেন্দ্র ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে তদবির করে এ কমিটি বিলুপ্ত করান এবং কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কার করান জাকির। দল ও দলের বাইরের ভাড়া করা লোকজন দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন সাইবার গ্রুপ। এ গ্রুপ তাকে পজিটিভভাবে সোসাল মাধ্যমে উপস্থাপন করার পাশাপাশি তার বিরোধীদের চরিত্র হননের কাজে লাগে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি জানান, জাকিরের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার বিষয়টি এখন সবার মুখে মুখে। সে শিবির নেতা থেকে কীভাবে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হলেন বিষয়টি দলের কেউ জানেন না, এখন আবার দলের টিকেট পাওয়ার টার্গেট করছেন। সেই শিবির নেতা জাকিরের মুঠ ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেন নি।