ঢাকা ০৫:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪

শীতে শিশুর যত্নে ঘরোয়া উপায়

আলোর জগত ডেস্ক :  চলে আসছে শীত। আর শীতকাল মানেই শুষ্ক আবহাওয়া। এই আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি অসুবিধার মুখে পড়ে তারা, যাদের স্কিন প্রচণ্ড শুষ্ক। শীতকালে তাদের চামড়া রুক্ষ হয়ে যায়। অনেকের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, চামড়া ফেটে রক্তও পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের নিয়ে বেশি অসুবিধায় পড়ে মায়েরা। সন্তানের চামড়া শুষ্ক যাতে না হয়, সেজন্য নানা পন্থা অবলম্বন করেন মায়েরা। তাঁদের মাথায় সর্বদা একটাই চিন্তা, যাতে কোনও ভাবেই সন্তানের চামড়া শুষ্ক না হয়ে যায়৷ সেই বিষয়ে সতর্ক থাকেন প্রতিটি মা। চিকিৎসকরা বলছেন, চিন্তা করার কিছু নেই, একদম ঘরোয়া পদ্ধতিতেই এই কাজটা করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন কেবল নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি। চলুন আমরা এগুলো জেনে নিই।

১. চিকিৎসকদের মতে, সদ্যোজাতের চামড়া শুষ্ক হওয়া থেকে আটকাতে পারে ভাল তেল মালিশ। ফলে গোসলের আগে সদ্যোজাতকে তেল মালিশ করা আবশ্যক৷ সেই তেলের মধ্যে যদি থাকে অলিভ ও অশ্বগন্ধা তবে তা চামড়ার জন্য খুব ভাল বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা৷ কারণ এই দুটি পদার্থ চামড়াকে নরম ও টোন করে৷

এছাড়া বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার কার্যকর উপায় হচ্ছে গরম তেল মালিশ করা। বংশানুক্রমে চলে আসা এই ত্বক পরিচর্যার পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুর চামড়া আরও মসৃন হয় ও উজ্জ্বল হয়। আপনার শিশুকে আপনি রোজ নিয়ম করে গরম তেল মালিশ করুন।

২. সদ্যোজাত সন্তানকে শীতকালে রোজ গোসল করানোর কোনও প্রয়োজন নেই বলেই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে, দুইদিন অন্তর একবার গোসল করালেই ভাল। সেক্ষেত্রে অবশ্যই হালকা গরম পানি ব্যবহার করা উচিত। কারণ, অতিরিক্ত গরম পানি শিশুর চামড়ার উপরে থাকা পাতলা চামড়া নষ্ট করে এবং অনেকক্ষণ ধরে কোনও শিশুকে গোসল করালে, ওই শরীরের আদ্রতা নষ্ট হয়।

৩.  গোসলের আগে শিশুকে অবশ্যই রৌদ্রে নিয়ে যান। রৌদ্রে ভিটামিন ডি থাকে, যা সুস্থ ত্বকের জন্যে খুব জরুরি।

৪. গোসলের পর শিশুর গা মোছানোর দিকে নজর রাখুন। নরম তোয়ালে ব্যবহার করুন যাতে অত্যধিক ঘষাঘষিতে তার গায়ে ফুসকুড়ি না পড়ে। বাচ্চাদের ত্বকের পরিচর্যার এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

৫. গোসলের পর শিশুর জন্য বিশেষ ধরনের ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা৷ তাঁদের মতে, সেই ক্রিমে অবশ্যই অ্যালোভেরা, আমন্ড অয়েল ও দুধ থাকা প্রয়োজন। যা গোসলের পর শরীর শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করে৷

৬. শিশুদের ত্বক বড়দের ত্বকের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল। সুতরাং তাদের ত্বকের যত্ন নিতে আপনাকেও সংবেদনশীল হতে হবে। শিশুর ত্বকের যত্ন নিতে সপ্তাহে একবার বডি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তবে বাইরের জিনিস না কিনে বাড়িতেই হলুদ, দুধ ও চন্দনের গুঁড়োর মিশ্রণ বানিয়ে তা শিশুর ত্বকের জন্যে ব্যবহার করতে পারেন।

৭. শিশুর সংবেদনশীল চামড়ার কথা মাথায় রেখে ঘরে বেসন, দুধ, হলুদ ও গোলাপজল দিয়ে বানান একটি বিশেষ স্ক্রাব। বাচ্চার নরম ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এই জিনিসটির জুড়ি মেলা ভার।

৮.  প্রস্তুতকারকরা যত কিছুই বলুক না কেন, ভুলেও বেবি সোপ দিয়ে আপনার শিশুর ত্বকের পরিচর্যা নিতে যাবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সাবানে যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকে, তা এখন সর্বজনবিদিত আর তাই তা এড়িয়ে চলাই ভালো।

৯. দুধের সর আর বাদাম তেল এ’দুটি উপাদানও ব্যবহার করতে পারেন শিশুর ত্বকের পরিচর্যার জন্যে। দুধের সর শিশুদের চর্মরোগ নিরাময়ের ব্যাপারেও খুব উপকারী।

১০. বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবল শীতেও শিশুদের উল, লেপ বা ব্ল্যাঙ্কেট জাতীয় বস্তু দিয়ে চাপা দেওয়া উচিত নয়। কারণ, এগুলো খসখসে প্রকৃতির হয়, যা শিশুর শরীরের নরম অংশে আঘাত করে৷ চোখে দেখা না গেলেও এটা হয়ে থাকে৷ শিশুকে ঢাকার জন্য শীতে নরম অথচ গরমদায়ক পোশাক বা কাপড় ব্যবহার করাই ভাল বলে চিকিৎসকরা জানান।

১১. ডায়াপার পরানোর আগে যদি ঐ জায়গাতে বেবি অয়েল মাখিয়ে নেন তাহলে ডায়াপারের ঘষা থেকে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে ৷ অনেকে ডায়াপার পরাবার আগে পাউডার ব্যবহার করেন ৷ কিন্তু পাউডার ব্যবহারে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ৷

ডায়াপার  র‍্যাশ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডায়াপার র‍্যাশের ওষুধ ব্যবহার করুন ৷ তখন তেল ব্যবহার করবেন না ৷ ডায়াপার লাইন খেয়াল করুন এবং পাল্টে দিন প্রয়োজনে ৷ ব্যবহৃত ডায়াপার প্যাচিয়ে প্যাকেটমত করে ফেলুন এবং দ্রুত ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন ৷বাচ্চার জন্য সবসময়ই উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন ডায়াপার ব্যবহার করবেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ মির্জাগঞ্জের আরিফুল স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান

শীতে শিশুর যত্নে ঘরোয়া উপায়

আপডেট টাইম : ০৫:১৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

আলোর জগত ডেস্ক :  চলে আসছে শীত। আর শীতকাল মানেই শুষ্ক আবহাওয়া। এই আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি অসুবিধার মুখে পড়ে তারা, যাদের স্কিন প্রচণ্ড শুষ্ক। শীতকালে তাদের চামড়া রুক্ষ হয়ে যায়। অনেকের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, চামড়া ফেটে রক্তও পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের নিয়ে বেশি অসুবিধায় পড়ে মায়েরা। সন্তানের চামড়া শুষ্ক যাতে না হয়, সেজন্য নানা পন্থা অবলম্বন করেন মায়েরা। তাঁদের মাথায় সর্বদা একটাই চিন্তা, যাতে কোনও ভাবেই সন্তানের চামড়া শুষ্ক না হয়ে যায়৷ সেই বিষয়ে সতর্ক থাকেন প্রতিটি মা। চিকিৎসকরা বলছেন, চিন্তা করার কিছু নেই, একদম ঘরোয়া পদ্ধতিতেই এই কাজটা করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন কেবল নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি। চলুন আমরা এগুলো জেনে নিই।

১. চিকিৎসকদের মতে, সদ্যোজাতের চামড়া শুষ্ক হওয়া থেকে আটকাতে পারে ভাল তেল মালিশ। ফলে গোসলের আগে সদ্যোজাতকে তেল মালিশ করা আবশ্যক৷ সেই তেলের মধ্যে যদি থাকে অলিভ ও অশ্বগন্ধা তবে তা চামড়ার জন্য খুব ভাল বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা৷ কারণ এই দুটি পদার্থ চামড়াকে নরম ও টোন করে৷

এছাড়া বাচ্চাদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার কার্যকর উপায় হচ্ছে গরম তেল মালিশ করা। বংশানুক্রমে চলে আসা এই ত্বক পরিচর্যার পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুর চামড়া আরও মসৃন হয় ও উজ্জ্বল হয়। আপনার শিশুকে আপনি রোজ নিয়ম করে গরম তেল মালিশ করুন।

২. সদ্যোজাত সন্তানকে শীতকালে রোজ গোসল করানোর কোনও প্রয়োজন নেই বলেই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে, দুইদিন অন্তর একবার গোসল করালেই ভাল। সেক্ষেত্রে অবশ্যই হালকা গরম পানি ব্যবহার করা উচিত। কারণ, অতিরিক্ত গরম পানি শিশুর চামড়ার উপরে থাকা পাতলা চামড়া নষ্ট করে এবং অনেকক্ষণ ধরে কোনও শিশুকে গোসল করালে, ওই শরীরের আদ্রতা নষ্ট হয়।

৩.  গোসলের আগে শিশুকে অবশ্যই রৌদ্রে নিয়ে যান। রৌদ্রে ভিটামিন ডি থাকে, যা সুস্থ ত্বকের জন্যে খুব জরুরি।

৪. গোসলের পর শিশুর গা মোছানোর দিকে নজর রাখুন। নরম তোয়ালে ব্যবহার করুন যাতে অত্যধিক ঘষাঘষিতে তার গায়ে ফুসকুড়ি না পড়ে। বাচ্চাদের ত্বকের পরিচর্যার এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

৫. গোসলের পর শিশুর জন্য বিশেষ ধরনের ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা৷ তাঁদের মতে, সেই ক্রিমে অবশ্যই অ্যালোভেরা, আমন্ড অয়েল ও দুধ থাকা প্রয়োজন। যা গোসলের পর শরীর শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করে৷

৬. শিশুদের ত্বক বড়দের ত্বকের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল। সুতরাং তাদের ত্বকের যত্ন নিতে আপনাকেও সংবেদনশীল হতে হবে। শিশুর ত্বকের যত্ন নিতে সপ্তাহে একবার বডি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তবে বাইরের জিনিস না কিনে বাড়িতেই হলুদ, দুধ ও চন্দনের গুঁড়োর মিশ্রণ বানিয়ে তা শিশুর ত্বকের জন্যে ব্যবহার করতে পারেন।

৭. শিশুর সংবেদনশীল চামড়ার কথা মাথায় রেখে ঘরে বেসন, দুধ, হলুদ ও গোলাপজল দিয়ে বানান একটি বিশেষ স্ক্রাব। বাচ্চার নরম ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এই জিনিসটির জুড়ি মেলা ভার।

৮.  প্রস্তুতকারকরা যত কিছুই বলুক না কেন, ভুলেও বেবি সোপ দিয়ে আপনার শিশুর ত্বকের পরিচর্যা নিতে যাবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সাবানে যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকে, তা এখন সর্বজনবিদিত আর তাই তা এড়িয়ে চলাই ভালো।

৯. দুধের সর আর বাদাম তেল এ’দুটি উপাদানও ব্যবহার করতে পারেন শিশুর ত্বকের পরিচর্যার জন্যে। দুধের সর শিশুদের চর্মরোগ নিরাময়ের ব্যাপারেও খুব উপকারী।

১০. বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবল শীতেও শিশুদের উল, লেপ বা ব্ল্যাঙ্কেট জাতীয় বস্তু দিয়ে চাপা দেওয়া উচিত নয়। কারণ, এগুলো খসখসে প্রকৃতির হয়, যা শিশুর শরীরের নরম অংশে আঘাত করে৷ চোখে দেখা না গেলেও এটা হয়ে থাকে৷ শিশুকে ঢাকার জন্য শীতে নরম অথচ গরমদায়ক পোশাক বা কাপড় ব্যবহার করাই ভাল বলে চিকিৎসকরা জানান।

১১. ডায়াপার পরানোর আগে যদি ঐ জায়গাতে বেবি অয়েল মাখিয়ে নেন তাহলে ডায়াপারের ঘষা থেকে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে ৷ অনেকে ডায়াপার পরাবার আগে পাউডার ব্যবহার করেন ৷ কিন্তু পাউডার ব্যবহারে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ৷

ডায়াপার  র‍্যাশ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডায়াপার র‍্যাশের ওষুধ ব্যবহার করুন ৷ তখন তেল ব্যবহার করবেন না ৷ ডায়াপার লাইন খেয়াল করুন এবং পাল্টে দিন প্রয়োজনে ৷ ব্যবহৃত ডায়াপার প্যাচিয়ে প্যাকেটমত করে ফেলুন এবং দ্রুত ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন ৷বাচ্চার জন্য সবসময়ই উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন ডায়াপার ব্যবহার করবেন।