মিহিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গায় করোনাকালীন সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে স্লিপ থেকে খরচ করার নির্দেশনা দেয়া হলেও সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের এ্যাসাইনমেন্ট ও প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতি দায়িত্বহীনতার পরিচয় সহ নানান সমস্যা নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগন জানান, অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে বিনামূল্যে এ্যাসাইনমেন্ট প্রদান, অনলাইন ক্লাস ও করোনায় বন্ধকালীন সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে মোবাইল-ফোনে খোঁজ খবর নেয়া বা শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করার সরকারী নির্দেশনা থাকলেও কোন কিছু করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। অভিভাবকদের দাবি পাশ্ববর্তী পাথরঘাটা, গোবিন্দকাটি, রাজবাড়ীসহ অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে বিদ্যালয়ের স্লিপের অর্থ দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে এ্যাসাইনমেন্ট তুলে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অনলাইনে ক্লাস ও শিক্ষার্থীদের সাথে মোবাইল ফোনে কখনো বা বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগ করছে শিক্ষক-শিক্ষিকাগন। বর্তমানে অভিযুক্ত বিদ্যালয়টিতে কোন প্রধান শিক্ষক না থাকায় এধরনের নানামুখি সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল ও অভিভাবকগণ। প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে উক্ত স্কুলের সকল সুবিধা গুলো ভোগ করছে কর্মরত সহকারি শিক্ষক-শিক্ষিকারা ও ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বহীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অভিভাবকগণ। এব্যাপারে অত্র বিদ্যালয়ে কথা বলতে গেলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হোসনেআরা খাতুন জানান, বিনামূল্যে এ্যাসাইনমেন্ট প্রদানের জন্য আমাদেরকে বিশেষ কোন সরকারি বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অন্যান্য স্কুল বিভিন্ন খরচ বাবদ যে বাৎসরিক সরকারী বরাদ্দ পেয়ে থাকেন সেই টাকা হতে বিনামূল্যে এ্যাসাইনমেন্ট প্রদান করছেন। যেখানে আমাদের বরাদ্দের টাকা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতে ইতিপূর্বেই ব্যয় হয়ে গেছে।এছাড়াও আমাদের বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় আমাদের পক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের এধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগের কথা বললে তিনি বলেন আমরা শিক্ষার্থীদের সহিত নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছি এবং সেই মোতাবেক রেজিষ্টার খাতাও পাকাপক্ত রেখেছেন তারা। অন্যদিকে, পাথরঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার মন্তল জানান, আমরা আমাদের স্কুলে বরাদ্দকৃত স্লিপের টাকা থেকে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের এ্যাসাইমেন্ট গুলো ফটোকপি করে বিনামূল্যে অভিভাবকদের হাতে তুলে দিচ্ছি। এখন কোন স্কুল কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে এটা আমার জানা নেই। অথচ ঝাউডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ অভিভাবকগন বলছেন আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করেনা স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারা আরো জানান, ফটোকপির দোকান গুলোও এসুযোগে উচ্চ মূল্যে এ্যাসাইনমেন্ট বিক্রয় করছে শিক্ষার্থীদের নিকট। এবিষয়ে জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিও) বাসুদেব কুমার সানার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বিদ্যালয় গুলোকে স্লিপ থেকে খরচ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। করোনা কালীন সময়ের পড়ালেখার ক্ষতি কিছুটা লাঘব করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে এ্যাসাইনমেন্ট প্রদান, অনলাইনে ক্লাস ও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের ব্যাপারে বিদ্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছি। এব্যাপারে প্রত্যেক বিদ্যালয়কে একটি নির্দিষ্ট সরকারী নির্দেশনাও প্রেরন করা হয়েছে। অথচ নির্দেশনা অনুযায়ী ঠিকমত বাস্তবায়ন হচ্ছে না ঝাউডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অত্র বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪৫০ জন যাদের শিক্ষার মান নিয়ে সংশয়ে আছে অত্র এলাকার সচেতন অভিভাবকগন। এবিষয়ে জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অভিভবকগন।