দেবহাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের সেই বাইসাইকেল হেলিকপ্টার এখনো সবার হৃদয়ে গেঁথে আছে। এখন থেকে ২০-৩০ বছর পূর্বে আমাদের এলাকায় সচারচর হেলিকপ্টার দেখা যেতো। উপজেলার সকল রোডে দেখা যেত সাইকেলের পিছনে ছিট বানিয়ে হেলিকপ্টার বানিয়ে মানুষকে বহন করতে। তখন এ এলাকার রাস্তাঘাট ছিল অধিকাংশ কাঁচা। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই হেলিকপ্টার আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে। এখন আর হেলিকপ্টার মোটেই দেখা যায় না। সেই সাইকেল নামক হেলিকপ্টার এখন বিলুপ্ত প্রায়। দেবহাটায় ঐতিহ্যের সেই বাইসাইকেল হেলিকপ্টার এখনো বহন করে চলেছে মুনসুর আলী। তিনি যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সেই আগের মতো বহন করে চলেছেন। হেলিকপ্টার বলতে বাইসাইকেলের পিছনে একটি কাঠ বেঁধে তার উপর সাদা পলিথিনের মধ্যে গদি আটকিয়ে দিয়ে সুন্দর করে বেঁধে দেওয়া হয়। সেটাই হল সিট। ঐ সিটে মানুষ বসে তার গন্তব্যস্থলে পৌছে যায়। এর নাম হলো হেলিকপ্টার। তবে এটা রাস্তায় চলে, আকাশ দিয়ে নয়। মুনসুর আলীর কাছ থেকে জানা যায়, তিনি স্বাধীনতার আগে থেকে এই বাইসাইকেল হেলিকপ্টারে করে যাত্রী বহন করে আসছেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হলো, এই বাইসাইকেল হেলিকপ্টার এর উৎপত্তি কিভাবে। উত্তরে তিনি জানান, ১৯৭১ সালের আগে যখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে জিম্মি ছিলো তখন দেশের মানুষের খাওয়া হতো না, শাঁখরা গ্রামের শুকুর আলী এটা প্রথম আবিস্কার করেন। মানুষের তখন অভাব ছিলো সংসার চলতো না। তাই সংসার চালানোর জন্য তিনি প্রথমে তার বাইসাইকেলের পিছনে একটা কাঠ বেধে কাঠের উপরে সাদা পলিথিন এর ভিতরে সেই সময়ের বিখ্যাত নকশী কাঁথা ভাজ করে দিয়ে যাত্রী বহন করা শুরু করে। তারপর পরে একে একে এটা চালু হয়েছিলো। মুনসুর আলী জানান, এখন বর্তমান সময়ে মটর সাইকলে, মটর ভ্যান, ইজিবাইক ইত্যাদি তৈরি হওয়ার পর থেকে আমাদের এই সাইকেল হেলিকপ্টারে তেমন যাত্রী ওঠে না। এখন তিনি দেবহাটার বিভিন্ন বাজারে বাজারে ঘুরে যারা বাজার করে কিন্তু বাজার বাড়িতে দিয়ে আসার লোক নাই। তাদের বাজার গুলো বাড়িতে পৌছয়ে দিয়ে যে অর্থ পান তাই দিয়ে কোন রকম সংসার চলে তার। মুনসুর আলী এ জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়ে পথ চলতে পারেন এটাই প্রত্যাশা এলাকার সচেতন মহলের।