ঢাকা ০২:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম :
Logo অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ০৪ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। Logo ফরিদপুর জেলার মধুখালিতে “শ্যালিকার সঙ্গে পরকীয়ার জেরে দুলাভাইকে হত্যা” শীর্ষক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার পলাতক আসামি শরিফুল শেখ ও তথি বেগম’কে ফরিদপুরের কোতোয়ালি এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। Logo মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ী এলাকা হতে ২৩.৫ কেজি গাঁজাসহ ০১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০ Logo গ্রাম পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা Logo আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস রিপোর্টার্স ফোরামের শ্রদ্ধা

ঝড়-বজ্রপাতে ঢাকাসহ ৫ জেলায় নিহত ১১ জন

আলোর জগত ডেস্ক :  মধ্য চৈত্রে কালবৈশাখী ঝড়-বজ্রপাতে রাজধানী ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় ১১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে রোববার সন্ধ্যায় ঝড়ের সময় রাজধানীতে ভবন থেকে ইট পড়ে দুজন, দেয়াল ধসে একজন এবং গাছ ভেঙে পড়ে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া চার জেলায় বজ্রপাতে পাঁচজন নিহত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা সদরে ফেরার পথে মেঘনায় ঝড়ের কবলে পড়ে একটি ট্রলার ডুবে এক পুলিশ ও এক নারী আনসার সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে রোববার বিকেল থেকে সন্ধ্যায় কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, রোববার সন্ধ্যায় ৬টা ২২ মিনিটে শুরু হওয়া কালবৈশাখীর স্থায়িত্ব ছিল এক মিনিটের বেশি। রাজশাহী থেকে শুরু হওয়া একটি বজ্রমেঘ দেশের মধ্য, পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এতে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকায় ওই কালবৈশাখী আঘাত হানে। এর সঙ্গে বজ্রপাত ও বৃষ্টিও হয়। সারা দেশের মধ্যে ঝড়বৃষ্টির দাপট রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি ছিল। সোমবার ও আগামী মঙ্গলবারও এই ঝড়বৃষ্টি থাকতে পারে।

রোববার সন্ধ্যার সময় ঢাকার আকাশ কালো করে নামে ঝড়, যা কয়েক মিনিট স্থায়ী ছিল। এতে বিভিন্ন স্থানে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে। সংসদ ভবন এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ে এক নারী মারা যান বলে জানিয়েছেন শেরে বাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম। ওই নারীর নাম মিলি ডি কস্তা (৬০)। তিনি পাশের মনিপুরি পাড়ায় থাকতেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সন্ধ্যায় হাঁটতে বেরিয়েছিলেন।

পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক বলেন, ঝড়ের সময় পুরানা পল্টন মোড়ে চায়ের গলিতে উঁচু ভবন থেকে ইট পড়ে নিহত হন মো. হানিফ (৪৫) নামে এক চা দোকানি। হানিফকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি মাহমুদুল হক বলেন, আশেপাশে বহুতল অনেক ভবন রয়েছে। তবে কোন ভবন থেকে ইট পড়েছে, তা বোঝা যায়নি।

পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় ইট পড়ে দুলাল মিয়া (৪০) নামে এক ব্যক্তি মারা যান বলে মিরপুর থানার ওসি দাদন ফকির জানিয়েছেন। দুলাল বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় একটি টিনশেড ঘরে থাকতেন তিনি। সেখানে নির্মাণাধীন বাড়ির দেওয়াল থেকে ইট পড়ে তিনি আহত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে ওসি জানান।

কদমতলী থানা এলাকার পলাশপুরে দেয়ালচাপা পড়ে নিহত হন হাসান (৪০) নামে এক রিকশাচালক। কদমতলী থানার ওসি জামালউদ্দীন মীর বলেন, পলাশপুর ৫নম্বর সড়কে একটি বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেওয়াল পড়ে মারা যান হাসান। ঝড়ে কাকরাইলেও গাছের ডাল ভেঙে একটি প্রাইভেটকার ও একটি অটোরিকশার উপর পড়ে। এতে অটোরিকশা চালক সামান্য আহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ধানমন্ডি তিন নম্বর সড়কেও গাছের ডাল ভেঙে সড়কে পড়েছে। ঝড়ে শাহবাগ থানার সাইনবোর্ড উড়ে গেছে। মিন্টো রোডে পুলিশের ভবনের সামনে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ঝড়ে অন্তত ২৫টি স্থানে গাছ পড়ার ঘটনা ঘটেছে।

ঝড়ের মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা ডুবে এক নারী ও তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। নিহত মা ও পাঁচ বছর বয়সী ছেলের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, কেরানীগঞ্জের মাদারীপুর ঘাট দিয়ে কামরাঙ্গীরচরে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাটি।

মাদারীপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. এরফান বলেন, নৌকাটি ডুবে গেলে স্থানীয়রা এগিয়ে যায়। প্রথমে শিশুটিকে খুঁজে পেয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে মায়ের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়।

এদিকে, ঝড়ের সময় কদমতলি বাজারে একটি দোকানের টিন উড়ে গিয়ে গায়ে পড়লে আহত হয়েছেন রিক্শাচালক আব্দুল খালেক (৫২), শনির আখড়ায় গ্লাস পড়ে ইবু (১৩), কদমতলি এলাকায় বাড়ির টিন পড়ে শারমিন আক্তার (৩৫) এবং শনির আখড়ায় গ্লাস পড়ে হযরত আলী (১৭) ও মাজুম হোসেনসহ (১৬) আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ বক্সের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া জানান, ঝড়ের ঘটনায় বিভিন্ন এলাকায় ১৫ থেকে ১৬ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে রিকশাচালক খালেকের অবস্থা গুরুতর। আহতদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা চলছে।

ঝড়ে অনেক স্থানে গাছপালা ভেঙে গেছে, বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অনেক স্থানে শিলাবৃষ্টিও পড়েছে। প্রচণ্ড বাতাসে রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানে বহুতল ভবন কেঁপে ওঠে।

হঠাৎ এই ঝড়ে রাজধানীর রমনা এলাকায় হেয়ার রোডেও বেশ কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়েছে। এতে একজন সিএনজিচালক গুরুতর আহত হয়েছেন। কাকরাইল মসজিদ পার হয়ে কিছুদূর যেতেই দেখা যায়, সড়কে একটি সিএনজি ও একটি প্রাইভেট কারের ওপর একটি গাছ পড়ে আছে। একটু সামনে গেলে দেখা যায়, আরও একটি গাছ পড়ে রয়েছে দুইটি প্রাইভেট কারের ওপর। এসব গাছের কারণে একটি প্রাইভেট কারের সামনের গ্লাস ভেঙে গেলেও কেউ আহত হননি। তবে সিএনজিচালক মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আশপাশের এলাকায় আরও কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেলের ওপরও গাছ ভেঙে পড়েছে।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম বলেন, উপড়ে পড়া গাছ দ্রুত সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনের লোকজনকে খবর দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় আশপাশের এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া, গাছ পড়ে সড়ক আটকে যাওয়ায় সেখানে যানজটও তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ বলেন, গাছ পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ধসে পড়ায় রাজধানীসহ দেশের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে রাতেই অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ সচল করা হয়েছে। অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ চালু করার চেষ্টা চলছে।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনা সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বজ্রপাতে আসর আলী (৬৯) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ফখরুজ্জামান জুয়েল জানান, বাহাদুরপুর গ্রামের আসর আলী সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৃষ্টিপাত শুরু হলে বাড়ির উঠানে গৃহস্থালীর কাজ করার সময় হঠাৎ বজ্রপাতে নিহত হন।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার উত্তর পতনউষার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো গ্রামের দিনমজুর জুনেদ মিয়ার ছয় বছরের শিশুকন্যা সাদিয়া আক্তার ও চার বছরের মুন্নী আক্তার। তারা পতনঊষার মহিলা মাদ্রাসার শিশু শ্রেণির ছাত্রী ছিল। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নিহত দুই শিশুর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। গ্রামবাসী জানায়, সকালে সাদিয়া, মুন্নীসহ তিন শিশু বাড়ির উঠানে খেলা করছিল। এ সময় বজ্রপাতে দুই শিশু গুরুতর আহত হয়। তাদের দ্রুত মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা সদরে বজ্রপাতে রাব্বি মিয়া (১৮) নামের একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে রোকন মিয়া (২১) নামের একজন। নিহত রাব্বি মিয়া ইটনা সদরের নয়ানন্দী হাটি গ্রামের কাদির মিয়ার ছেলে। জানা যায়, রোববার ধনু নদীর বলদা ঘাটে স্টিল বডি নৌকা থেকে তীরে পাথর নামানোর কাজ করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। দুপুর ১২টার দিকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়। শ্রমিকরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়ির দিকে রওনা হন। দাসপাড়া গ্রামের সামনের রাস্তায় পৌঁছলে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে রাব্বি মিয়া ও একই গ্রামের রোকন মিয়া আহত হন। এলাকাবাসী তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডা. নাদিরুল আলম রাব্বিকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত রোকন মিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা। তার বাবার নাম শুক্কুর আলী। ইটনা থানার ওসি মুর্শেদ জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় রোববার দুপুর ১টার দিকে বজ্রপাতে দেলোয়ার হোসেন (১৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দেলোয়ার উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের জুহুর মিয়ার ছেলে। জামালগঞ্জ থানার ওসি আবুল হাসেম জানান, দেলোয়ার হোসেন বাড়ির পাশের হাওরে ঘাস কাটতে গিয়েছিল। দুপুর ১টার সময় আকস্মিক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। দেলোয়ারের হোসেনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে দুপুরের পর থেকে জেলার বিভিন্ন হাওরে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা সদরে ফেরার পথে মেঘনায় ঝড়ের কবলে পড়ে একটি ট্রলার ডুবে এক পুলিশ ও এক নারী আনসার সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। আহত অবস্থায় ১৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটেছে।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন উর রশিদ জানান, মেঘনার দক্ষিণ তীরে মুন্সীগঞ্জ লাগোয়া সোনারগাঁ উপজেলার চর কিশোরগঞ্জ এলাকা। উপজেলার ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় প্রিজাইডিং অফিসারসহ ১৬ জন ট্রলারে করে সোনারগাঁ উপজেলা সদরে ফিরছিলেন। মেঘনা নদীর মাঝ পথে ট্রলারটি কালবৈশাখীর কবলে পড়ে ডুবে যায়। এরপর সাঁতরে ১৪ জন তীরে উঠতে পারলেও এক পুলিশ ও এক নারী আনসার সদস্য নিখোঁজ রয়ে যায়। ঘটনাস্থলে কোস্টগার্ড উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে এক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আবার ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা সা‌ড়ে ৬টার দিকে ঝ‌ড়ো বাতাস কমে গেলে এই নৌপথের সব ফেরি পর্যায়ক্রমে চালু করা হয়। এরপর থেকে উভয়পাড়ের ঘাট এলাকায় আটকে পড়া বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ফেরিতে পারাপার করা হচ্ছে। এর আগে বি‌কেল সা‌ড়ে ৫টার দিকে ঝ‌ড়ো বাতা‌সের কারণে এ নৌপথের ফেরি চলাচল বন্ধ করা হলে যাত্রীসহ যানবাহন শ্রমিকরা দুর্ভোগে পড়েন।

তখন বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পরিচালক ফরিদুল ইসলাম জানান, বি‌কে‌লে ঝড়ো হাওয়ায় পদ্মা-যমুনায় প্রবল ঢেউ আর স্রোতের কারণে লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। লঞ্চগুলো অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছিল। সা‌ড়ে ৫টার দিকে প্রবল বাতাসে ঢেউয়ের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে নৌদুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মহিউদ্দিন রাসেল জানান, সন্ধ্যা সা‌ড়ে ৬টার দি‌কে ঝ‌ড়ো বাতাস ক‌মে গে‌লে ফেরি চলাচল শুরু হয়।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, বৈশাখ মাস আসতে না আসতেই রোববার বিকেল পৌনে ৫টায় জেলায় কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি হয়। বিভিন্ন উপজেলার ওপর দিয়ে চলে প্রকৃতির তাণ্ডব। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে উঠতি ফসলসহ গাছপালা ও কাঁচাপাকা ঘড়বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে আসা প্রচুর জলীয় বাষ্পের সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে বয়ে আসা শুষ্ক বায়ুর সংঘর্ষের ফলে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের আবহাওয়া আরও দু-তিন দিন চলতে পারে। মাসের বাকি সময় জুড়ে থেমে থেমে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, সোমবার ও মঙ্গলবার কালবৈশাখীর সঙ্গে দেশের অনেক এলাকায় দমকা হাওয়া ও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ স্থানের দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তবে রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা আছে। রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ স্থানে ও অন্যান্য বিভাগের কিছু কিছু স্থানে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় দেশের সব কটি নদীবন্দরকে ২ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ০৪ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০।

ঝড়-বজ্রপাতে ঢাকাসহ ৫ জেলায় নিহত ১১ জন

আপডেট টাইম : ০২:১২:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০১৯

আলোর জগত ডেস্ক :  মধ্য চৈত্রে কালবৈশাখী ঝড়-বজ্রপাতে রাজধানী ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় ১১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে রোববার সন্ধ্যায় ঝড়ের সময় রাজধানীতে ভবন থেকে ইট পড়ে দুজন, দেয়াল ধসে একজন এবং গাছ ভেঙে পড়ে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া চার জেলায় বজ্রপাতে পাঁচজন নিহত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা সদরে ফেরার পথে মেঘনায় ঝড়ের কবলে পড়ে একটি ট্রলার ডুবে এক পুলিশ ও এক নারী আনসার সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে রোববার বিকেল থেকে সন্ধ্যায় কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, রোববার সন্ধ্যায় ৬টা ২২ মিনিটে শুরু হওয়া কালবৈশাখীর স্থায়িত্ব ছিল এক মিনিটের বেশি। রাজশাহী থেকে শুরু হওয়া একটি বজ্রমেঘ দেশের মধ্য, পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এতে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকায় ওই কালবৈশাখী আঘাত হানে। এর সঙ্গে বজ্রপাত ও বৃষ্টিও হয়। সারা দেশের মধ্যে ঝড়বৃষ্টির দাপট রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি ছিল। সোমবার ও আগামী মঙ্গলবারও এই ঝড়বৃষ্টি থাকতে পারে।

রোববার সন্ধ্যার সময় ঢাকার আকাশ কালো করে নামে ঝড়, যা কয়েক মিনিট স্থায়ী ছিল। এতে বিভিন্ন স্থানে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে। সংসদ ভবন এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ে এক নারী মারা যান বলে জানিয়েছেন শেরে বাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম। ওই নারীর নাম মিলি ডি কস্তা (৬০)। তিনি পাশের মনিপুরি পাড়ায় থাকতেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সন্ধ্যায় হাঁটতে বেরিয়েছিলেন।

পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক বলেন, ঝড়ের সময় পুরানা পল্টন মোড়ে চায়ের গলিতে উঁচু ভবন থেকে ইট পড়ে নিহত হন মো. হানিফ (৪৫) নামে এক চা দোকানি। হানিফকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি মাহমুদুল হক বলেন, আশেপাশে বহুতল অনেক ভবন রয়েছে। তবে কোন ভবন থেকে ইট পড়েছে, তা বোঝা যায়নি।

পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় ইট পড়ে দুলাল মিয়া (৪০) নামে এক ব্যক্তি মারা যান বলে মিরপুর থানার ওসি দাদন ফকির জানিয়েছেন। দুলাল বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় একটি টিনশেড ঘরে থাকতেন তিনি। সেখানে নির্মাণাধীন বাড়ির দেওয়াল থেকে ইট পড়ে তিনি আহত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে ওসি জানান।

কদমতলী থানা এলাকার পলাশপুরে দেয়ালচাপা পড়ে নিহত হন হাসান (৪০) নামে এক রিকশাচালক। কদমতলী থানার ওসি জামালউদ্দীন মীর বলেন, পলাশপুর ৫নম্বর সড়কে একটি বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেওয়াল পড়ে মারা যান হাসান। ঝড়ে কাকরাইলেও গাছের ডাল ভেঙে একটি প্রাইভেটকার ও একটি অটোরিকশার উপর পড়ে। এতে অটোরিকশা চালক সামান্য আহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ধানমন্ডি তিন নম্বর সড়কেও গাছের ডাল ভেঙে সড়কে পড়েছে। ঝড়ে শাহবাগ থানার সাইনবোর্ড উড়ে গেছে। মিন্টো রোডে পুলিশের ভবনের সামনে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ঝড়ে অন্তত ২৫টি স্থানে গাছ পড়ার ঘটনা ঘটেছে।

ঝড়ের মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা ডুবে এক নারী ও তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। নিহত মা ও পাঁচ বছর বয়সী ছেলের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, কেরানীগঞ্জের মাদারীপুর ঘাট দিয়ে কামরাঙ্গীরচরে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাটি।

মাদারীপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. এরফান বলেন, নৌকাটি ডুবে গেলে স্থানীয়রা এগিয়ে যায়। প্রথমে শিশুটিকে খুঁজে পেয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে মায়ের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়।

এদিকে, ঝড়ের সময় কদমতলি বাজারে একটি দোকানের টিন উড়ে গিয়ে গায়ে পড়লে আহত হয়েছেন রিক্শাচালক আব্দুল খালেক (৫২), শনির আখড়ায় গ্লাস পড়ে ইবু (১৩), কদমতলি এলাকায় বাড়ির টিন পড়ে শারমিন আক্তার (৩৫) এবং শনির আখড়ায় গ্লাস পড়ে হযরত আলী (১৭) ও মাজুম হোসেনসহ (১৬) আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ বক্সের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া জানান, ঝড়ের ঘটনায় বিভিন্ন এলাকায় ১৫ থেকে ১৬ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে রিকশাচালক খালেকের অবস্থা গুরুতর। আহতদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা চলছে।

ঝড়ে অনেক স্থানে গাছপালা ভেঙে গেছে, বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অনেক স্থানে শিলাবৃষ্টিও পড়েছে। প্রচণ্ড বাতাসে রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানে বহুতল ভবন কেঁপে ওঠে।

হঠাৎ এই ঝড়ে রাজধানীর রমনা এলাকায় হেয়ার রোডেও বেশ কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়েছে। এতে একজন সিএনজিচালক গুরুতর আহত হয়েছেন। কাকরাইল মসজিদ পার হয়ে কিছুদূর যেতেই দেখা যায়, সড়কে একটি সিএনজি ও একটি প্রাইভেট কারের ওপর একটি গাছ পড়ে আছে। একটু সামনে গেলে দেখা যায়, আরও একটি গাছ পড়ে রয়েছে দুইটি প্রাইভেট কারের ওপর। এসব গাছের কারণে একটি প্রাইভেট কারের সামনের গ্লাস ভেঙে গেলেও কেউ আহত হননি। তবে সিএনজিচালক মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আশপাশের এলাকায় আরও কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেলের ওপরও গাছ ভেঙে পড়েছে।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম বলেন, উপড়ে পড়া গাছ দ্রুত সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনের লোকজনকে খবর দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় আশপাশের এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া, গাছ পড়ে সড়ক আটকে যাওয়ায় সেখানে যানজটও তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ বলেন, গাছ পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ধসে পড়ায় রাজধানীসহ দেশের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে রাতেই অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ সচল করা হয়েছে। অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ চালু করার চেষ্টা চলছে।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনা সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বজ্রপাতে আসর আলী (৬৯) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ফখরুজ্জামান জুয়েল জানান, বাহাদুরপুর গ্রামের আসর আলী সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৃষ্টিপাত শুরু হলে বাড়ির উঠানে গৃহস্থালীর কাজ করার সময় হঠাৎ বজ্রপাতে নিহত হন।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার উত্তর পতনউষার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো গ্রামের দিনমজুর জুনেদ মিয়ার ছয় বছরের শিশুকন্যা সাদিয়া আক্তার ও চার বছরের মুন্নী আক্তার। তারা পতনঊষার মহিলা মাদ্রাসার শিশু শ্রেণির ছাত্রী ছিল। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নিহত দুই শিশুর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। গ্রামবাসী জানায়, সকালে সাদিয়া, মুন্নীসহ তিন শিশু বাড়ির উঠানে খেলা করছিল। এ সময় বজ্রপাতে দুই শিশু গুরুতর আহত হয়। তাদের দ্রুত মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা সদরে বজ্রপাতে রাব্বি মিয়া (১৮) নামের একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে রোকন মিয়া (২১) নামের একজন। নিহত রাব্বি মিয়া ইটনা সদরের নয়ানন্দী হাটি গ্রামের কাদির মিয়ার ছেলে। জানা যায়, রোববার ধনু নদীর বলদা ঘাটে স্টিল বডি নৌকা থেকে তীরে পাথর নামানোর কাজ করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। দুপুর ১২টার দিকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়। শ্রমিকরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়ির দিকে রওনা হন। দাসপাড়া গ্রামের সামনের রাস্তায় পৌঁছলে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে রাব্বি মিয়া ও একই গ্রামের রোকন মিয়া আহত হন। এলাকাবাসী তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডা. নাদিরুল আলম রাব্বিকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত রোকন মিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা। তার বাবার নাম শুক্কুর আলী। ইটনা থানার ওসি মুর্শেদ জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় রোববার দুপুর ১টার দিকে বজ্রপাতে দেলোয়ার হোসেন (১৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দেলোয়ার উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের জুহুর মিয়ার ছেলে। জামালগঞ্জ থানার ওসি আবুল হাসেম জানান, দেলোয়ার হোসেন বাড়ির পাশের হাওরে ঘাস কাটতে গিয়েছিল। দুপুর ১টার সময় আকস্মিক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় বৃষ্টি হচ্ছিল। দেলোয়ারের হোসেনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে দুপুরের পর থেকে জেলার বিভিন্ন হাওরে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা সদরে ফেরার পথে মেঘনায় ঝড়ের কবলে পড়ে একটি ট্রলার ডুবে এক পুলিশ ও এক নারী আনসার সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। আহত অবস্থায় ১৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটেছে।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন উর রশিদ জানান, মেঘনার দক্ষিণ তীরে মুন্সীগঞ্জ লাগোয়া সোনারগাঁ উপজেলার চর কিশোরগঞ্জ এলাকা। উপজেলার ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় প্রিজাইডিং অফিসারসহ ১৬ জন ট্রলারে করে সোনারগাঁ উপজেলা সদরে ফিরছিলেন। মেঘনা নদীর মাঝ পথে ট্রলারটি কালবৈশাখীর কবলে পড়ে ডুবে যায়। এরপর সাঁতরে ১৪ জন তীরে উঠতে পারলেও এক পুলিশ ও এক নারী আনসার সদস্য নিখোঁজ রয়ে যায়। ঘটনাস্থলে কোস্টগার্ড উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে এক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আবার ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা সা‌ড়ে ৬টার দিকে ঝ‌ড়ো বাতাস কমে গেলে এই নৌপথের সব ফেরি পর্যায়ক্রমে চালু করা হয়। এরপর থেকে উভয়পাড়ের ঘাট এলাকায় আটকে পড়া বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ফেরিতে পারাপার করা হচ্ছে। এর আগে বি‌কেল সা‌ড়ে ৫টার দিকে ঝ‌ড়ো বাতা‌সের কারণে এ নৌপথের ফেরি চলাচল বন্ধ করা হলে যাত্রীসহ যানবাহন শ্রমিকরা দুর্ভোগে পড়েন।

তখন বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পরিচালক ফরিদুল ইসলাম জানান, বি‌কে‌লে ঝড়ো হাওয়ায় পদ্মা-যমুনায় প্রবল ঢেউ আর স্রোতের কারণে লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। লঞ্চগুলো অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছিল। সা‌ড়ে ৫টার দিকে প্রবল বাতাসে ঢেউয়ের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে নৌদুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মহিউদ্দিন রাসেল জানান, সন্ধ্যা সা‌ড়ে ৬টার দি‌কে ঝ‌ড়ো বাতাস ক‌মে গে‌লে ফেরি চলাচল শুরু হয়।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, বৈশাখ মাস আসতে না আসতেই রোববার বিকেল পৌনে ৫টায় জেলায় কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি হয়। বিভিন্ন উপজেলার ওপর দিয়ে চলে প্রকৃতির তাণ্ডব। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে উঠতি ফসলসহ গাছপালা ও কাঁচাপাকা ঘড়বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে আসা প্রচুর জলীয় বাষ্পের সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে বয়ে আসা শুষ্ক বায়ুর সংঘর্ষের ফলে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের আবহাওয়া আরও দু-তিন দিন চলতে পারে। মাসের বাকি সময় জুড়ে থেমে থেমে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, সোমবার ও মঙ্গলবার কালবৈশাখীর সঙ্গে দেশের অনেক এলাকায় দমকা হাওয়া ও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ স্থানের দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তবে রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা আছে। রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ স্থানে ও অন্যান্য বিভাগের কিছু কিছু স্থানে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় দেশের সব কটি নদীবন্দরকে ২ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।