১১:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আর প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না: ডয়চে ভেলেকে শেখ হাসিনা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:২৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • ২৬৬ Time View

আলোর জগত ডেস্ক :   ভবিষ্যতে তরুণদের সুযোগ করে দিতে আর প্রধানমন্ত্রী থাকতে চান না শেখ হাসিনা। তাই তিনি চান বর্তমান ও টানা তৃতীয় মেয়াদটিই যেন হয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শেষ মেয়াদ। ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।গতকাল বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোল ও এশিয়া বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহ।

শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমার তৃতীয় মেয়াদ। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী হয়েছি। সব মিলিয়ে চতুর্থবার। আমি আর চাই না। একটা সময়ে এসে সবারই বিরতি নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। যেন তরুণ প্রজন্মের জন্য জায়গা করে দেওয়া যেতে পেরে।

এক মাস আগেই চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার দল আওয়ামী লীগ ও জোট মিলে এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসন জিতেছে। সাক্ষাৎকারে তিনি নিশ্চিত করেছেন, পরবর্তী মেয়াদে আর প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য চেষ্টা করতে চান না।

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে গত এক দশকে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বছরে গড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাণিজ্য বেড়েছে। বিদেশি বিনিয়োগও এসেছে। এই উন্নয়নের পরও বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বলা হচ্ছে, এখনও বাংলাদেশের প্রতি চারজনে একজন দরিদ্র। শেখ হাসিনা তার সম্ভাব্য শেষ মেয়াদে এই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইকেই অগ্রাধিকার দিতে চান।

সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান- এসব মৌলিক চাহিদা। প্রত্যেক মানুষই তার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে চায়। আমাদের সেটাই নিশ্চিত করতে হবে।

বিরোধী দল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কোনো দল যদি তাদের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে না যেতে পারে, জনগণের বিশ্বাস, আস্থা অর্জন করতে না পারে, আর যদি ভোট না পায়, সে দায়-দায়িত্ব কার? সে তো ওই দলগুলোর দুর্বলতা।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি জানান, নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার হাজার হাজার শিশু-কিশোর-তরুণ যারা বেড়ে উঠছে, তাদের জন্য মধ্যবর্তী বিকল্প উপায় ভাবার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমরা একটা দ্বীপ বেছে নিয়েছি। সেখানে আমরা বাঁধ দিয়েছি। সাইক্লোন শেল্টার ও ঘরবাড়ি তৈরি করেছি। আমরা তাদের সেখানে নিয়ে যেতে চাই এবং কাজ দিতে চাই। তাহলে তরুণ ও নারীরা অর্থ উপার্জন করতে পারবে।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত গেলে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বলে জানিয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই এই দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে যেতে চায় বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে ভারত ও চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভূমিকা রাখতে পারে।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার দল আওয়ামী লীগ ও এর জোটের দলগুলো মিলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসন জিতেছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি নিশ্চিত করেন, পরবর্তী মেয়াদে আর প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য চেষ্টা করতে চান না।

এর আগে গত মঙ্গলবার গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, যখনই আমি রাজনীতি থেকে অবসর নেব, আমি আমার গ্রামে চলে যাব এবং এটিই আমার সিদ্ধান্ত।

এর পরের দিন বুধবার বিকালে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা বলেন, যে গ্রামে জন্মেছি ও বেড়ে উঠেছি সে গ্রামের স্মৃতি বড় মধুর। গ্রামের কাদামাটি মেখে বড় হয়েছি। এ স্মৃতি কোনো দিন ভোলা যায় না, মোছা যায় না।

তিনি আরও বলেন, গ্রামের নির্মল বাতাস এখনো আমাকে টানে। ইটপাথরের এই নগরী আর ভালো লাগে না। গ্রামের নির্মল বায়ু, খোলামেলা আকাশে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেয়া যায়। এ কারণে অবসরে গ্রামে থাকা আমার খুব আকাঙ্ক্ষা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আর প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না: ডয়চে ভেলেকে শেখ হাসিনা

Update Time : ০২:২৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

আলোর জগত ডেস্ক :   ভবিষ্যতে তরুণদের সুযোগ করে দিতে আর প্রধানমন্ত্রী থাকতে চান না শেখ হাসিনা। তাই তিনি চান বর্তমান ও টানা তৃতীয় মেয়াদটিই যেন হয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শেষ মেয়াদ। ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।গতকাল বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোল ও এশিয়া বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহ।

শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমার তৃতীয় মেয়াদ। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী হয়েছি। সব মিলিয়ে চতুর্থবার। আমি আর চাই না। একটা সময়ে এসে সবারই বিরতি নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। যেন তরুণ প্রজন্মের জন্য জায়গা করে দেওয়া যেতে পেরে।

এক মাস আগেই চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার দল আওয়ামী লীগ ও জোট মিলে এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসন জিতেছে। সাক্ষাৎকারে তিনি নিশ্চিত করেছেন, পরবর্তী মেয়াদে আর প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য চেষ্টা করতে চান না।

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে গত এক দশকে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বছরে গড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাণিজ্য বেড়েছে। বিদেশি বিনিয়োগও এসেছে। এই উন্নয়নের পরও বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বলা হচ্ছে, এখনও বাংলাদেশের প্রতি চারজনে একজন দরিদ্র। শেখ হাসিনা তার সম্ভাব্য শেষ মেয়াদে এই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইকেই অগ্রাধিকার দিতে চান।

সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান- এসব মৌলিক চাহিদা। প্রত্যেক মানুষই তার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে চায়। আমাদের সেটাই নিশ্চিত করতে হবে।

বিরোধী দল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কোনো দল যদি তাদের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে না যেতে পারে, জনগণের বিশ্বাস, আস্থা অর্জন করতে না পারে, আর যদি ভোট না পায়, সে দায়-দায়িত্ব কার? সে তো ওই দলগুলোর দুর্বলতা।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি জানান, নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার হাজার হাজার শিশু-কিশোর-তরুণ যারা বেড়ে উঠছে, তাদের জন্য মধ্যবর্তী বিকল্প উপায় ভাবার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমরা একটা দ্বীপ বেছে নিয়েছি। সেখানে আমরা বাঁধ দিয়েছি। সাইক্লোন শেল্টার ও ঘরবাড়ি তৈরি করেছি। আমরা তাদের সেখানে নিয়ে যেতে চাই এবং কাজ দিতে চাই। তাহলে তরুণ ও নারীরা অর্থ উপার্জন করতে পারবে।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত গেলে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বলে জানিয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই এই দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে যেতে চায় বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে ভারত ও চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভূমিকা রাখতে পারে।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার দল আওয়ামী লীগ ও এর জোটের দলগুলো মিলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসন জিতেছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সম্প্রচার মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি নিশ্চিত করেন, পরবর্তী মেয়াদে আর প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য চেষ্টা করতে চান না।

এর আগে গত মঙ্গলবার গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, যখনই আমি রাজনীতি থেকে অবসর নেব, আমি আমার গ্রামে চলে যাব এবং এটিই আমার সিদ্ধান্ত।

এর পরের দিন বুধবার বিকালে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা বলেন, যে গ্রামে জন্মেছি ও বেড়ে উঠেছি সে গ্রামের স্মৃতি বড় মধুর। গ্রামের কাদামাটি মেখে বড় হয়েছি। এ স্মৃতি কোনো দিন ভোলা যায় না, মোছা যায় না।

তিনি আরও বলেন, গ্রামের নির্মল বাতাস এখনো আমাকে টানে। ইটপাথরের এই নগরী আর ভালো লাগে না। গ্রামের নির্মল বায়ু, খোলামেলা আকাশে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেয়া যায়। এ কারণে অবসরে গ্রামে থাকা আমার খুব আকাঙ্ক্ষা।