কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচনের পর একের পর এক সংঘর্ষ ও সহিংস ঘটনা ঘটছে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলার জিয়ারকান্দি, সাতানী, জগতপুর ও কলাকান্দি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে মারামারিসহ সহিংস কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনকে দিন। নৌকার সমর্থকদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা।
গত রবিবার ৭ জানুয়ারি কুমিল্লা-১(দাউদকান্দি-তিতাস) আসনের নির্বাচনের পরের দিনই দাউদকান্দি উপজেলায় এক বিতর্কের ঘটনায় জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মো.আজমল সরকারের গালে থাপ্পড় মারেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আ.লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মোসাম্মৎ পারুল আক্তার। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দরা আজমল সরকারকে রক্ষা করেন। এছাড়া সাতানী ইউনিয়নের মঙ্গলকান্দিতে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষেরই ৩ জন আহত হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন মঙ্গলকান্দি গ্রামের ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার ইব্রাহিম সরকারের মেয়েকে একটি পক্ষ মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে আহত করে। তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসা অপর একজনও আহত হয়। দুজনকেই তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রশিদ মেম্বার, সালাম ও রহিম মিয়ার বাড়িতে হামলা হয়েছে। উপজেলা আ.লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন ও উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক মো.জসিম সরকারের নেতৃত্বে গত সোমবার সকালে ১৫-২০টি মোটরসাইকেল নিয়ে ৪০-৫০ জনের একটি দল তাদের বাড়িতে হামলা চালায় ও বাড়িঘর ভাংচুর করে বলে জানান ভুক্তভোগী রহিম, সালাম ও রশিদ মেম্বারের ছেলের বউ।তারা বলেন, ইব্রাহিম মেম্বার যখন ইলেকশন করে তখন আমরা রশিদ মেম্বারের ইলেকশন করেছি। এজন্যই তারা তার প্রতিশোধ হিসেবে আমাদের উপর আক্রমণ করে। ঘটনা বিষয়ে জানতে চাইলে রশিদ মেম্বারের ছেলে রিয়াদ বলেন, ইব্রাহিম মেম্বারের মেয়ের উপর কে বা কারা আক্রমণ করেছে আমরা জানি না। তারা আমাদের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম হাজী কামাল উদ্দিনের বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হকের মাছিমপুর বাজারে দখলীকৃত ভূমির ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোর পূর্বক ভূমি দখলের চেষ্টা করে কলাকান্দি ইউনিয়ন যুব দলের আহবায়ক মো.হাবিবুর রহমান হাবিবগং। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে তদন্ত করে বলে জানা গেছে। উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো.আলম সরকারের নেতৃত্বে হাবিব সরকার, ইকবাল হোসেন বাবুল, আনিসুর রহমান জুয়েলসহ ২০-৩০ জনের একটি দল গত বুধবার সকালে ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হক ও তার ভাই মরহুম হাজী কামাল উদ্দিনের ছেলে আমান উল্লাহকে চড় থাপ্পড় মেরে নৌকা সম্বলিত একটি ব্যানার মোজাম্মেল হকের দখলীকৃত ভূমিতে সাঁটিয়ে দেয়। আলম বাহিনীর ভয়ে বিষয়টি তিতাস থানা পুলিশকে অবহিত করেন ভূমির মালিক ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হক। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে বলে জানা গেছে।
এছাড়া গত বুধবার সন্ধ্যায় বাতাকান্দি বাজারের ওয়ার্কশপ মালিক খোকনকে চড় থাপ্পড় মারে সোহেল সিকদারের চাচাতো ভাই মেহরাব আলম সিকদার সবুজ। ওই ব্যবসায়ী প্রাণের ভয়ে কারো কাছে বিচার চাইতে পারেননি বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে গত শুক্রবার ১২ জানুয়ারি দাউদকান্দিতে স্থানীয় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম নয়নকে ইঞ্জিনিয়ার সবুর এমপি সাহেবের সমর্থকরা মারধর করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা গেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দাউদকান্দি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কম্যাণ্ড কাউন্সিলের সাবেক কম্যাণ্ডার প্রয়াত আবদুল কুদ্দুস সাহেবের পুত্র উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম নয়নকে একদল সন্ত্রাসী মারধর করতে করতে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।