ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অন্তত ৫০১ সৈন্য নিহত হয়েছেন। হামাসের সাথে গত ৮৩ দিনের যুদ্ধে এই সৈন্যরা নিহত হয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে।
আইডিএফ বলেছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে হামাসের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া যুদ্ধে পাঁচশ জনের বেশি ইসরায়েলি সৈন্য, কর্মকর্তা ও রিজার্ভ সেনা নিহত হয়েছেন। নিহত সৈন্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০১ জনে; যাদের অধিকাংশই ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, ওই দিন হামাসের যোদ্ধারা কমপক্ষে ২৭৪ ইসরায়েলি সৈন্য ও স্থানীয় ৩৮ নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। এছাড়া গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত আরও ১৬৭ সৈন্য নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহ এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী আরেক গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের হামলায় ইসরায়েলের আরও ৯ সৈন্যও নিহত হয়েছেন। পশ্চিম তীরে হামলায় নিহত হয়েছেন আরও দুই সেনা।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর নিহত ৫০১ সৈন্যের তালিকায় পশ্চিম তীরে নিজেদের ভুল গুলিতে নিহত একজন, লেবানন সীমান্তে গোলাবারুদ ছোড়ার সময় বিস্ফোরণে একজন, উত্তর ইসরায়েলে ট্যাংক দুর্ঘটনায় দুজন এবং আরও কয়েকটি মারাত্মক ঘটনায় কয়েকজনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আইডিএফের তালিকায় ৭ অক্টোবরের হামলার সময় নিহত পুলিশের ৫৭, জেরুজালেমে হামলায় নিহত একজন এবং পশ্চিম তীরে সংঘর্ষের সময় নিহত অন্য একজন কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দুই মাসের বেশি সময়ের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ২১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু,অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন।
সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ৫৪ হাজার ৯৬৮ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৬ হাজার ৭০০ জন। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
অন্যদিকে, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা।
জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১০৪ জন। বাকি ১৩৬ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা রয়েছেন। তাদের মধ্যে শিশু, নারী, তরুণ-তরুণী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধা— সব বয়সী মানুষ রয়েছেন।
ভয়াবহ যুদ্ধ শেষে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতিস্বীকার করে গত ২৫ নভেম্বর অস্থায়ী বিরতি ঘোষণা করে হামাস-ইসরায়েলি বাহিনী। পরে ১ ডিসেম্বর দু’পক্ষের পারস্পরিক হামলার শুরুর মধ্যে দিয়ে শেষ হয় সেই বিরতি। ৭ দিনের অস্থায়ী বিরতির সময় নিজের কব্জায় আটক জিম্মিদের মধ্যে থেকে ১১৮ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস; বিপরীতে এই সময়সীমায় ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এখনও হামাসের কব্জায় রয়েছেন অন্তত ১২৯ জন জিম্মি। কীভাবে তাদের মুক্ত করা হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়।