ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেছেন, সরকারকে বলতে চাই, আপনারা যদি নির্বাচন করতে চান, তাহলে নির্বাচনের নামে তামাশা বন্ধ করেন। কোটি কোটি টাকা খরচ না করে গণভবন থেকে তালিকা পাঠিয়ে দেন। কে কোন আসনের সংসদ সদস্য হবে এ তালিকা পাঠিয়ে দেন। নির্বাচন নামে নাটকের মাধ্যমে এ দেশের মানুষের অর্থ ধ্বংস করবেন, দেশকে ধ্বংস করবেন– এটা আমরা মানি না।
তিনি বলেন, দেশের পৌনে ১২টা বেজে গেছে। আমার মনে হয়, আগামী ৭ জানুয়ারি দেশের ১২টা বাজার অ্যালার্ম বেজে উঠবে। দেশে ভোট দেওয়া লাগবে না, নির্বাচনের আগেই ভোট দেওয়ার পরিস্থিতি চলছে। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দেওয়া লাগবে না, অটো পাস হয়ে যাবে। তার মানে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে এ দেশের মানুষকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে। এ ধরনের শিক্ষাক্রম আমরা বাতিল চাই।
শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে জাতিসত্তার বিরোধী শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন ও নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সমাবেশ শেষে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে বায়তুল মোকাররমের সামনে এসে মিছিলটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে পুলিশ মিছিলটি আটকে দেয়। পরে সেখানেই সমাবেশ শেষ করা হয়।
বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, এ শিক্ষা কারিকুলাম যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এমন নাগরিক তৈরি হবে যারা হবে শামসুদ্দিন মানিকের মতো। যারা কি না ১১৬ জন শীর্ষ ওলামার তালিকা করেছিল। এসব ওলামাকে অপমান করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোনো বিচার হয়নি। সরকার যেহেতু ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপথগামী করতে চায়, সে অবস্থায় আমরা আর বসে থাকতে পারি না।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়ে ইসলামী আন্দোলন মহাসচিব বলেন, আমরা অন্যায়কে সমর্থন করতে পারি না। যে নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগেই ফলাফল তৈরি হয়ে যায়, এমন নির্বাচন বাতিল করতে হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে দুই জোড়া করে চশমা থাকে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলনের এ নেতা বলেন, একটা কাঠের চশমা অপরটি গ্লাসের চশমা। যখন কোনো ধনী লোক অন্যায় করে তখন তারা কাঠের চশমা চোখে দেয়। যখন প্রতিপক্ষ অন্যায় করে তখন গ্লাসের চশমা ব্যবহার করে। এজন্য বলতে চাই, এই কাঠের চশমা দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। গ্লাসের চশমা ব্যবহার করা শিখুন, আর না হলে ক্ষমতা থেকে নেমে যান। এ দেশে শিক্ষিত মানুষের অভাব নেই।
ইসলামী আন্দোলন আগামী দিনের কর্মসূচির বিষয়ে মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, পীর সাহেব চরমোনাই যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, তা লাগাতার চলবে। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।
তিনি বলেন, আগামী ২৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) এক তরফা জাতীয় নির্বাচন বাতিল এবং বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তনের দাবিতে সব জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। এরপরও যদি আমাদের দাবি মানা না হয় এবং অগ্রাহ্য করা হয়, তাহলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, বর্তমানে যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের বেশিরভাগের নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টারে লক্ষ্য করলে দেখবেন, হয় তারা আওয়ামী লীগ মনোনীত অথবা তারা আওয়ামী লীগের মদদ প্রাপ্ত অথবা আওয়ামী লীগের থেকে টাকা খাওয়া। এটাকে জাতীয় নির্বাচন বলা হয় না। এক দলের যে নির্বাচন হয় তাকে বলা হয় দলীয় কাউন্সিল।
তিনি বলেন, আগামী ৭ তারিখ যে নির্বাচন হবে এটাকে বলা হবে আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিল। এটা কোনো নির্বাচন নয়। অতএব আগামী ৭ জানুয়ারি যে কাউন্সিল হবে এর অর্থ আওয়ামী লীগ দেবে, জাতীয়ভাবে এ অর্থ আওয়ামী লীগ নিতে পারেন না। যদি নেয় তাহলে এই টাকার জবাব দিতে হবে।
এসময় সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম। আরও বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি মাইদুল হাসান সিয়াম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতি ইউসুফ পিয়াস, ইসলামী যুব আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হাফিজুল হক ফাইয়াজ, ইসলামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মশিউর রহমান, অধ্যাপক নাসির উদ্দীন খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদূর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম প্রমুখ।