প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী একাদশ জাতীয় সংসদের হুইপ মো. সামশুল হকের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিনের বদলি চেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে দেওয়া এক লিখিত অভিযোগে এমন দাবি জানিয়েছেন নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
অভিযোগে তিনি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী। আমি অনুভব, পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, আমার আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মো. সামশুল হক চৌধুরী মহান জাতীয় সংসদের হুইপ এবং বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য হুইপের ক্ষমতায় গত ১২ নভেম্বর নিজের পছন্দের ওসি বদলি করে আনেন। মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নামে এই ওসির নানা-শ্বশুর বাড়ি পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে এবং হুইপের দূর সম্পর্কের আত্মীয়।’
মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী তার অভিযোগপত্রে বলেন, ‘আমি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে ওসি নেজাম উদ্দিন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন। এ সত্ত্বেও আমি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করিনি। ইতোমধ্যে গত ৫ ডিসেম্বর হুইপ নির্বাচনী আচরণবিধি সংক্রান্ত বিষয়ে পটিয়া আদালতে সশরীরে হাজিরা দিতে আসার পথে পটিয়ার প্রায় প্রতিটি এলাকায় পুলিশ প্রটেকশনের ব্যবস্থা করেন। এমনকি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আশপাশেও লোকজন চলাচল করতে দেয়নি। হুইপ সাহেব আদালতে হাজিরা শেষে নিজের গ্রামের বাড়ি শোভনদণ্ডীর রশিদাবাদে গেলে ওসি নেজাম উদ্দিনও ছুটে যান। সেখানে হুইপের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। গত ১ ডিসেম্বর শোভনদণ্ডী এলাকায় হুইপয়ের ভাইদের প্ররোচনায় আমার দলীয় কর্মী আশরাফুল আলম সাজ্জাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে আহত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় সে হাসপাতালে ভর্তি হয়। সে বিষয়ে থানায় আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ অভিযোগ জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি এ ওসি।’
‘আমি ওসি নেজাম উদ্দিনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারলাম, এ ওসি স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর নির্বাচনী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবেন। আপনি যেভাবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং পক্ষপাতহীন নির্বাচন পরিচালনা করতে চাচ্ছেন তা ব্যাহত হবে। আমি মনে করি, বর্তমান ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিনকে দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু এবং পক্ষপাতহীন নির্বাচন সম্ভব নয়। আমি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে ওসি নেজাম উদ্দিনকে অন্যত্র বদলির আবেদন করছি।’
মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী তার আবেদনে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধও জানিয়েছেন। এছাড়া অভিযোগপত্রের সঙ্গে তিনি আশরাফুল আলম সাজ্জাদের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় তার মা মঞ্জুরা বেগমের দায়ের করা অভিযোগের ফটোকপি ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকার দলিলাদীও সংযুক্ত করেছেন।
মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমার প্রতিনিধি নির্বাচন কমিশনের প্রাপ্তি ও জারি শাখায় এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। হুইপ সাহেব তার প্রভাব খাটাচ্ছেন।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই আসনে মোট ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। বাছাইয়ের সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী এমএ মতিনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।