ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় দেড় মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন সাড়ে ১১ হাজার ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই প্রায় ৮ হাজার।
এই পরিস্থিতিতে গাজায় হত্যাযজ্ঞ চলতে দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও জরুরি ত্রাণ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি মার্টিন গ্রিফিথস। তিনি বলেছেন, গাজায় চলমান ‘হত্যাযজ্ঞ’ অবশ্যই শেষ হওয়া উচিত।
একইসঙ্গে ভূখণ্ডটিতে যুদ্ধবিরতিরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের ত্রাণ প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, ‘গাজায় হত্যাযজ্ঞ প্রতিদিনই নতুন ভয়াবহ উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে, হাসপাতালে হামলা হচ্ছে এবং বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে তা দেখছে, অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়া শিশুরা মারা যাচ্ছে এবং বেঁচে থাকার সকল মৌলিক উপায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গাজার সামগ্রিক জনগোষ্ঠী।’
তিনি বলেন, ‘এই অবস্থা চালিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে সম্মান করতে হবে, মানবিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে এবং যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, গাজায় মৌলিক পরিষেবাগুলো পুনরায় চালু করতে এবং প্রয়োজনীয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার সুযোগ দেওয়ার জন্য সেখানে মানবিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘এই ধরনের যুদ্ধবিরতি ত্রাণ বিতরণ সহজতর করতে, বন্দিদের মুক্তির সুযোগ দিতে এবং বেসামরিক নাগরিকদের স্বস্তি দিতেও অত্যাবশ্যক।’
প্রসঙ্গত, গাজার বৃহত্তম চিকিৎসাকেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালটি কয়েকদিন ধরে ঘেরাও করে রাখার পর বুধবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই মেডিকেল কমপ্লেক্সে অভিযান চালায়।
পরে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বুধবার জানায়, ‘ইসরায়েলি সৈন্যরা আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সের ভেতরে অনেক রোগী, আহত ব্যক্তি এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পাশাপাশি বেশ কিছু চিকিৎসা ও নার্সিং কর্মীদের ওপরও আক্রমণ করেছে, তাদের পোশাক খুলতে বাধ্য করেছে এবং অপমান করেছে।’
ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা আল-শিফা হাসপাতালের নির্দিষ্ট এলাকায় হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে।
হাসপাতালটিতে হামাসের ঘাঁটি রয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। এছাড়া ইসরায়েলের এই দাবিকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছে, তাদের কাছেও আল শিফা হাসপাতালের নিচে সুড়ঙ্গে হামাসের একটি ‘কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সেন্টার’ থাকার তথ্য রয়েছে।
তবে এ দাবি অস্বীকার করেছে হামাস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে আল শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি অভিযানের নিন্দা জানিয়ে একে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।