অনলাইন ডেস্ক :
সরকারের ‘আচরণ’ দেখে পরবর্তী কর্মসূচির সিদ্ধান্ত
৩১ দফা নিয়ে বিএনপির ‘শীর্ষ নেতা’র অঙ্গীকার আদায় করল মঞ্চ
চলমান যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এ বৈঠকে প্রথমবারের মতো মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীর মহা-সমাবেশ, পরবর্তী কর্মসূচি এবং ক্ষমতায় গেলে বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে দেওয়া ৩১ দফা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।যদিও বৈঠকের বিষয়টি বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে জানানো নিয়ে মঞ্চের শরিকদের কেউ কেউ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে লন্ডন থেকে যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। আর গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, ভাসানী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানান, শুরুতে নেতাদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় ও পরিচয়পর্ব হয়। তারপর বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে যে ৩১ দফা ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সেটা ক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়। একইসঙ্গে চলমান আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তার বাইরে ২৮ অক্টোবর রাজধানীর মহা-সমাবেশের প্রস্তুতি ও সহিংসতা এড়িয়ে বড় জমায়েত করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া পরবর্তী কর্মসূচির একটা খসড়া ছিল সেটা নিয়েও সবার মতামত নেওয়া হয়েছে। ২৮ তারিখের সমাবেশে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা কিংবা সহিংসতার উসকানি দেওয়া হলে কর্মসূচির ধরন এক রকম হবে। আর শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ করা হলে কর্মসূচির ধরন আরেক রকম হবে- এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের ২৮ তারিখের মহা-সমাবেশ কীভাবে ভালোভাবে করা যায় সেটা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
কর্মসূচির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বুলু বলেন, কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সেটা নিয়ে আরও আলাপ-আলোচনা হবে। আরও ২-৩ দিন পর কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া গণতন্ত্র মঞ্চের দুই নেতা জানান, ২৮ তারিখের সমাবেশকে ঘিরে বিভিন্ন মহল থেকে এক ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে কোনো ধরনের উসকানিতে পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ করা। এক্ষেত্রে যদি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ করা যায়, তাহলে ২৮ অক্টোবরের পরে ২-৩ দিনের বিরতি দিয়ে আবার কর্মসূচি দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম দিকে বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ২৮ তারিখের সমাবেশে যদি কোনো বাধা আসে তাহলে কোনো বিরতি না দিয়ে লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে। তখন অবরোধ, ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা রয়েছে। এক কথায় সরকারের আচরণ দেখে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনো উসকানিতে পা না দিয়ে ২৮ অক্টোবর সমাবেশ সফল করা নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে এগুলো নিয়ে মঞ্চ আরও বৈঠক করবে, আলোচনা হবে। এখন কিছু চূড়ান্ত হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ একটি দলের নেতা বলেন, বিএনপির ‘শীর্ষ নেতা’র পক্ষ থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে তার দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার বা মেরামতের জন্য যে ৩১ দফা দেওয়া হয়েছে ক্ষমতায় গেলে তা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও করা হয়েছে।
এই নেতা আরও বলেন, পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে অবস্থান, বিক্ষোভ, ঘেরাও, অবরোধের মতো কর্মসূচি আছে। যদি প্রয়োজন পড়ে হরতালের মতো কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনার কথাও জানানো হয়েছে। তবে, সবকিছু রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সরকারের মনোভাবের ওপর নির্ভর করছে। এছাড়া বৈঠকে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বৈঠকের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ভেতরের কথা বাইরে এসে বলায় সরকারের মধ্যে যে এক ধরনের দুর্বলতা রয়েছে তার প্রকাশ পেয়েছে বলে সবাই মনে করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণতন্ত্র মঞ্চের আরেক নেতা বলেন, বিএনপির ‘শীর্ষ নেতা’র সঙ্গে এটি আমাদের প্রথম বৈঠক। এটি বিএনপির পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে না আনলে ভালো হতো। এটা আমাদের কাছে ভালো লাগেনি।