ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাউক) সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিন বছর যাবত দুককের দায়ের করা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তিনি। নিজের নিয়োগ নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। দুদক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে তার বিষয়ে বারবার পদক্ষেপ নিতে তাগাদা দিলেও নীরব ভুমিকা পালন করে প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুধু অর্থের বিনিময়ে রাউক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে এখনো স্বপদে বহাল আছেন কামরুজ্জামান। শুধু তাই নয়, চার্জশিটভুক্ত আসামি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দুদক ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও রাজশাহীর বড় বড় প্রকল্পেগুলোও তার অধীনেই পরিচালিত হচ্ছে।
সূত্র বলছে, ২০০৪ সালের ১৬ আগস্ট রাউকে ১০টি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই নিয়োগে সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামান ২৪ নম্বর পেয়ে অনুত্তীর্ণ হন। তারপরও তাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিতে বিধি ভেঙে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল বাতিল করে চাকরি দেন তৎকালীন নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও রাউক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান। যোগসাজশ ছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব মুহা. আব্দুর রব জোয়ার্দারের।
২০০৭ সালে গণপূর্ত অডিট অধিদপ্তর এহেন বিধিবহির্ভূত নিয়োগের আপত্তি জানায়। এ নিয়ে ২০১২ সালের ১৪ জানুয়ারি তৎকালীন দুদকের উপ-পরিচালক মো: আব্দুল করিম চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও নিয়োগপ্রার্থীর নামে একটি মামলা দায়ের করেন। ২০০৫ সালে তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান অবসরে যান এবং ২০০৭ সালে অবসরে যান নির্বাহী প্রকৌশলী মুহা: আব্দুর রব যোয়ার্দার। তবে ওই মামলার এখনো চার্জশিটভুক্ত আসামি থেকে যান সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামান।
সূত্র আরও জানায়, পরবর্তীকালে এ নিয়ে তৎকালীন রাউক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নাজিবুল ইসলাম আইন মন্ত্রণালয়ে একটি মতামত চেয়ে চিঠি পাঠান। এতে উল্লেখ করেন- অভিযুক্তদের বেতন, ছুটি, গ্র্যাচুইটি, পেনশনসহ অন্য সুবিধাদি দেওয়া যাবে কি না? এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব স্বাক্ষরিত চিঠিতে ওই মতামতের জবাবে সুবিধা পাবেন না মর্মে জানান। এ ধরনের চিঠি রাউক পাওয়ার পরও ওই আইনের বাস্তবায়ন হয়নি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাউকের এক কর্মচারী জানান, ২০১৮ সালে তৎকালীন দুদকের উপ-পরিচালক মো: ফরিদুর রহমান রাজশাহীর শাহমখদুম থানায় একটি চার্জশিট দাখিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিন আসামি সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। ওই পিটিশনে চার সপ্তাহের জন্য স্টে অর্ডার পান শেখ কামরুজ্জামান। একই সঙ্গে চার সপ্তাহের মধ্যে তাকে নিরপরাধ প্রমাণের তথ্যাদি আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তীসময়ে তিনি আর কোনো স্টে অর্ডার পাননি।
‘পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান একটি আপিল করেন, যার শুনানি আজ পর্যন্ত হয়নি। তবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী- চার্জশিটভুক্ত আসামির বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তের বিধান রয়েছে। কিন্তু এই বিধান থাকার পরও তা চেয়ারম্যানের কাছে উপেক্ষিত। বিবাদীর আপিল শুনানিকে পুঁজি করে বর্তমান চেয়ারম্যান, আইন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভিযুক্ত কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। অথচ ২০১৭ সালে দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: আলমগীর হোসেন, ২০১৯ সালে দুদকের প্রধান কার্যালয় ঢাকা থেকে মনোয়ারা বেগম, ২০১৯ সালের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এবং সবশেষ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখা-১৭ থেকে দুদকের চার্জশিটভুক্ত আসামি শেখ কামরুজ্জামানের বিষয়ে জানতে চায়। কিন্তু এসব চিঠির পাওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি রাউক।’
শেখ কামরুজ্জামানের অভিযোগের বিষয়ে সবশেষ অবস্থা রাউক চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়ে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর চিঠি পাঠান গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব লুৎফুন নাহার। তারপরও রাউক চেয়ারম্যান এ বিষয়ে নীরব। তবে মাস দুয়েক আগেই রাউকের আইন বিষয়ক কর্মকর্তা সহ-প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের বিষয়ে আইনসম্মত পদক্ষেপ নিতে চেয়ারম্যানকে জানিয়েছিলেন- ‘তার বিরুদ্ধে (শেখ কামরুজ্জামান) প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’
২০০৭ সাল থেকে রাউকের আইন বিষয়ক কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন বর্তমান এস্টেট অফিসার মো. বদরুজ্জামান। তিনি বলেন, আমি অতিরিক্ত আইন বিষয়ক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করলেও এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
তিনি আরও বলেন, এমনকী আগে যা জানতাম তাও সব ভুলে গেছি। আমাকে এসব বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করবেন না প্লিজ। আমি ওপেন হার্ট সার্জারি করা রোগী। এসব ঝামেলায় নেই।
এ বিষয়ে জানতে শেখ কামরুজ্জামানের দপ্তরে দুদিন গিয়ে এবং মোবাইলে বারবার কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাউক) বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আনওয়ার হোসেন বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আপনাদের এ বিষয়ে জানা থাকলে আমাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। তবে কারো নামে চার্জশিট হলেই যে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে হবে এমন কোনো আইন নেই।