ঢাকা ০২:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

আকাশে ডানা মেলার আগেই ঝড়ে গেল শতাধিক শামুকখোল ছানার প্রাণ

ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল চত্বরে অর্জুন গাছটির ডালে ডালে বাসা বেঁধেছিল শামুকখোল পাখি। ফুটিয়েছিল শতাধিক ছানা। আকাশে ডানা মেলার অপেক্ষায় ছিল ছানাগুলো। সেই অপেক্ষার শেষ হয়েছে মত্যু ঘণ্টায়।

শনিবার দুপুরের পর গাছটি কেটে ফেলা হয়। গাছ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশির ভাগ ছানা মারা যায়। যেগুলো বেঁচে ছিল, সেগুলো জবাই করে নিয়ে যান হাসপাতালের নির্মাণশ্রমিক ও রোগীর স্বজনেরা।
এই হাসপাতালের গাছগুলোতে বরাবরই প্রজনন মৌসুমে শামুকখোল পাখিরা এসে বাসা বেঁধে বাচ্চা ফোটায়। হাসপাতাল চত্বরের যে গাছগুলোর আশপাশে মানুষের আনাগোনা বেশি, সেগুলোতেই পাখিরা বেশি বাসা বাঁধে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পাখিরা মানুষের সহানুভূতি পেতে তাদের নাগালের মধ্যেই বাসা বাঁধে।

গত বছর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাখির বিষ্ঠার কারণে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার অজুহাতে কিছু গাছের ডালপালা কেটে দিয়েছিল। তারপরও পাখিরা হাসপাতাল ছেড়ে যায়নি। গাছ কাটার ঘটনায় রাজশাহীর পাখিপ্রেমীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এরপর পাখিরা বাচ্চা ফুটিয়ে চলে যাওয়ার সময় পেয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের সামনে নালা নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানেই কাটা হয়েছে গাছটি। বিকেলে গিয়ে সেখানে ২০ থেকে ৩০টি মৃত পাখির বাচ্চা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
রোগীর এক স্বজন জানান, তিনি কয়েকজন শ্রমিককে অন্তত ৩০টি পাখির বাচ্চা বস্তায় ভরে নিয়ে যেতে দেখেছেন। রোগীর স্বজনেরাও কিছু বাচ্চা কুড়িয়ে নিয়ে গেছেন।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক জানান, এই বাচ্চাগুলো আর দুই সপ্তাহ সময় পেলেই উড়ে চলে যেত। তিনি বলেন, প্রকৃতির স্বাস্থ্যের ওপরই মানুষের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। প্রকৃতি সুস্থ না থাকলে মানুষ বাঁচতে পারবে না। আর কদিন পর গাছটি কাটা হলে পাখির ছানাগুলো প্রাণ হারাত না।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, এটা কেন হলো, সেটাও তিনি খতিয়ে দেখবেন। আর এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

আকাশে ডানা মেলার আগেই ঝড়ে গেল শতাধিক শামুকখোল ছানার প্রাণ

আপডেট টাইম : ০৬:৪৬:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল চত্বরে অর্জুন গাছটির ডালে ডালে বাসা বেঁধেছিল শামুকখোল পাখি। ফুটিয়েছিল শতাধিক ছানা। আকাশে ডানা মেলার অপেক্ষায় ছিল ছানাগুলো। সেই অপেক্ষার শেষ হয়েছে মত্যু ঘণ্টায়।

শনিবার দুপুরের পর গাছটি কেটে ফেলা হয়। গাছ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশির ভাগ ছানা মারা যায়। যেগুলো বেঁচে ছিল, সেগুলো জবাই করে নিয়ে যান হাসপাতালের নির্মাণশ্রমিক ও রোগীর স্বজনেরা।
এই হাসপাতালের গাছগুলোতে বরাবরই প্রজনন মৌসুমে শামুকখোল পাখিরা এসে বাসা বেঁধে বাচ্চা ফোটায়। হাসপাতাল চত্বরের যে গাছগুলোর আশপাশে মানুষের আনাগোনা বেশি, সেগুলোতেই পাখিরা বেশি বাসা বাঁধে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পাখিরা মানুষের সহানুভূতি পেতে তাদের নাগালের মধ্যেই বাসা বাঁধে।

গত বছর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাখির বিষ্ঠার কারণে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার অজুহাতে কিছু গাছের ডালপালা কেটে দিয়েছিল। তারপরও পাখিরা হাসপাতাল ছেড়ে যায়নি। গাছ কাটার ঘটনায় রাজশাহীর পাখিপ্রেমীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এরপর পাখিরা বাচ্চা ফুটিয়ে চলে যাওয়ার সময় পেয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের সামনে নালা নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানেই কাটা হয়েছে গাছটি। বিকেলে গিয়ে সেখানে ২০ থেকে ৩০টি মৃত পাখির বাচ্চা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
রোগীর এক স্বজন জানান, তিনি কয়েকজন শ্রমিককে অন্তত ৩০টি পাখির বাচ্চা বস্তায় ভরে নিয়ে যেতে দেখেছেন। রোগীর স্বজনেরাও কিছু বাচ্চা কুড়িয়ে নিয়ে গেছেন।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক জানান, এই বাচ্চাগুলো আর দুই সপ্তাহ সময় পেলেই উড়ে চলে যেত। তিনি বলেন, প্রকৃতির স্বাস্থ্যের ওপরই মানুষের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। প্রকৃতি সুস্থ না থাকলে মানুষ বাঁচতে পারবে না। আর কদিন পর গাছটি কাটা হলে পাখির ছানাগুলো প্রাণ হারাত না।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, এটা কেন হলো, সেটাও তিনি খতিয়ে দেখবেন। আর এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।