ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহী মহানগরীর একটি ক্লিনিকে নবজাতক শিশু ও প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। শনিবার দুপুরে নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়। অবহেলায় নবজাতক সন্তান ও মায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১১ জুন নগরীর ল²ীপুর এলাকায় অবস্থিত মাইক্রোপ্যাথ ক্লিনিকে সুখি বেগম (৩৫) নামের ওই নারী মারা যান। সুখির মৃত্যুর আগে তাঁর নবজাতক শিশুটিও মারা যায়। সুখি বেগমের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায়। মা ও নবজাতকের মৃত্যুর পর রোগীর স্বজনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ‘কোন অভিযোগ নেই’ লেখা একটি কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে লাশ দ্রæত বাড়ি পাঠিয়ে দেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
পরে ১৫ জুলাই চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতি ও শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ এনে সুখী বেগমের ছোট ভাই মিজানুর রহমান আদালতে মামলা করেন। এতে ক্লিনিকের স্ত্রী রোগবিশেষজ্ঞ ডা. শারমীন সেলিনা সুলতানা, অ্যানেসথেসিয়ালোজিস্ট ডা. রাশিদুল ইসলাম, ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক বুলবুল, ওটি বয় মামুন ও দালাল আবদুল খালেককে আসামি করা হয়। আদালত মামলা গ্রহণ করে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দিয়েছেন।
মামলার সঠিক তদন্ত এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে বাদী মিজানুর রহমান শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১০ জুন ডাক্তার দেখানোর জন্য তাঁর বোনকে নগরীর আরেকটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে মাইক্রোপ্যাথের দালাল মামুন ও খালেক ভালো চিকিৎসার কথা বলে মাইক্রোপ্যাথে নিয়ে যায়। এরপর কোনরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সুখির সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের তোড়জোড় শুরু করা হয়। সিজারের কিছুক্ষণ পর নবজাতক শিশু মারা যায়। এর কিছুক্ষণ পর মারা যান সুখি। ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে মিজানুর রহমান বলেন, এটি হত্যার শামিল। তিনি বলেন, টাকার নেশায় অপ্রয়োজনীয় সিজার করে সুখি ও তাঁর সন্তানকে মেরে ফেলা হয়েছে।
মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন তাঁদের ক্লিনিকে একরকম জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ‘কোন অভিযোগ নেই’ লেখা কাগজে সই নেওয়া হয়েছে। লাশ নিয়ে যাওয়ার পর লকডাউন এবং করোনার কারণে আদালতে মামলা করতে দেরি হয়েছে। তিনি মামলার সঠিক তদন্ত এবং অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করেন। মিজানুর বলেন, এদের শাস্তি হলে এ ধরনের আর কোন ঘটনা ঘটবে না। তা না হলে ক্লিনিকটিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক মো. বুলবুল বলেন, ‘সেদিনই ঘটনার মিমাংসা হয়ে গেছে। এরপর তাঁরা কেন মামলা, সংবাদ সম্মেলন করছে তা বুঝতে পারছি না।’ চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কোন ডাক্তারই চায় না যে রোগী মারা যাক।’