ঢাকা ০৬:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব কোটি কোটি টাকার ড্রেন অকেজ, পানিতে তলিয়ে আছে তিনশ বিঘা ধান

ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো

 

রাজশাহীর বাঘায় দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব প্রায় আড়াই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দুই কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত (বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের)খাল খনন প্রকল্প। স্থানীয় সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এই খাল খনন প্রকল্পের ফলক উন্মোচনের পর শতভাগ কাছের মধ্যে ৮০ ভাগ খনন কাজ শেষ হলেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর কতৃক আদালতে মামলা করায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এই প্রকল্পটি।

ফলে উপজেলার নওটিকা , আরিপপুর,বেলগাছি,বারখাদিয়া,হিজোল পল্লী ও তেপুখুরিয়া-সহ ৬ টি বিলে জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে প্রায় ৩ শ’ বিঘা জমির ধান-সহ অন্যান ফসল। সম্প্রতি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট কৃষকদের পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন বাজুবাঘা ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান।
তিনি তার অভিযোগ জানান,উপজেলার মশিদপুর পদ্মা নদীর মুখে রয়েছে একটি সুইজ গেট। সেখান থেকে সরকারি ভাবে ক্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে এক সময় উপজেলার ৬ টি বিল-হিজোল পল্লী, আরিফপুর, বাজিতপুর, নওটিকা, তেপুখুরিয়া ও বারখাদিয়ায় পানি প্রবেশ করানো হতো। এর ফলে উপকৃত হতেন কৃষকরা। অনেকেই এই খালটির নাম করণ করে ছিলেন চন্দনা নদী।পরবর্তীতে মুল নদী পদ্মার রুপ পরিবর্তন হওয়ায় কতিপয় প্রভাবশালী ক্যানেলের কয়েকটি স্থানে মাটির ব্যাড়া দিয়ে মাছ চাষ-সহ বিলের মধ্যে পুকুর খনন শুরু করেন। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হন কৃষক। এ নিয়ে এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন-সহ স্থানীয় সাংসদের বিশেষ তদবিরে গত প্রায় আড়াই বছর পূর্বে বরেন্দ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দুই কোটি টাকা ব্যায়ে পুরাতন ওই ক্যানেলটি সংস্কার কাজ শুরু করেন। এর ফলে শত-শত কৃষক শস্তির নিশ্বাস ফেললেও কতিপয় প্রভাবশালীরা আবারও সেখানে বাধা সৃষ্টি করে এবং খাল ক্ষননের মধ্যে তাদের জমি চলে যাওয়ার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দেন।
মামলার বাদি তমেজ উদ্দিন, মোজাহার হোসেন, আবুল কাশেম ও রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের রের্কডকৃত দখলীয় সম্পত্তির উপর প্রায় ৩৫ বছর আগে জিয়া সরকারের সময় খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্দ্যোগ নেয়। এ সময় আমাদের সম্পত্তি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানোর পর তারা খাল খনন বন্ধ রাখেন। কিন্তু বর্তমান সরকার আমলে এসে স্থানীয় সাংসদের সুপারিশে একটি প্রকল্প বরাদ্দ হয়। এটি রক্ষা করতে আমরা পৃথক ভাবে আদালতে ৪টি মামলা দায়ের করি।

অপরদিকে প্রকল্পের স্থানীয় রক্ষানোবেক্ষনকারি ও উপজেলা আ’লীগের সহ দপ্তর সম্পাদক কৃষিবিদ মহিউল হাসান টিনি বলেন, যারা রেকড বলে মামলা করেছেন তারা ১৯৭৪ সালের রেকড়ে অংশিদার হয়েছেন সত্য। তবে ১৯২২ এবং ১৯৬২ সালে এটি খাস ক্ষতিয়ান ভুক্ত ক্যানেল ও ডোবা-নালা হিসাবে চিহৃত। তিনি বলেন, শুকনো মৌসুমে বিলে পানি রাখা এবং বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি নিস্কাশনের জন্য স্থানীয় সাংসদের কাছে থেকে সুপারিশ নিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে গত প্রায় আড়াই বছর পূর্বে ৭টি ভাগে জায়গা ভাগ করে খাল খনন কাজ শুরু করা হয় এবং ১০০ ভাগ কাজের মধ্যে ৮০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্য করা হয়েছে। পরবর্তীতে কতিফয় প্রভাবশালী ঐ ডোবা ধানী জমি দাবি করে আদালতে মামলা দেয়ায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও নওটিকা গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তাঁর ৫ বিঘা জমির ধান-সহ ওই এলাকার অসঙ্খ কৃষকের প্রায় ২-৩ শ বিঘা জমির ধান পানির নিচে তুলিয়ে গেছে। এর একটি কারণ অপরিকল্পিত ভাবে বিলের মধ্যে পুকুর খনন এবং বরাদ্দকৃত ড্রেনের কাজ বন্ধ করে দেয়া। তাঁর মতে, যদি ড্রেনের কাজ বন্ধ করা না হতো তাহলে এই জলাবন্ধতার সৃষ্টি হতো না এবং পানির নিচে ধান তলিয়ে থাকতো না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা বলেন, এই এলাকায় নদীর সাথে বিলকে সম্পৃক্ত করে গত আড়াই বছর পূর্বে সরকারিভাবে খাল খনন শুরু করা হয়েছিল। মোট ৮ কিলোর মধ্যে ৬ কিলো খনন শেষে হয়েছে। পরবর্তীতে স্থানীয় কিছু সংক্ষক মানুষ খাল খননে বাধা দেয়া সহ আদালতে মামলা করায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যাই। একই কথা বলেন উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান। তাঁর মতে জনসার্থে এই খালটি সম্পন্য করা খুবই জরুরী
এ বিষয়ে খালন খনন এলাকার বাসিন্দা ও বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড: লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, সরকার জনগণ এবং দেশের কল্যানে অনেক কিছুই করে থাকেন। এখানে ৮ কিলোমিটার ড্রেন নির্মান প্রকল্পের মধ্যে ২ কিলো মিটার বন্ধ রয়েছে । সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চাইলে কৃষকদের কিঞ্চিত ক্ষতিপুরণ দিয়ে বাঁকি ড্রেন সম্পুর্ণ করলে বিলের পানি নিস্কাশন হবে এবং পানির নিচে আর কখনোই ধান তলিয়ে থাকবে না।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব কোটি কোটি টাকার ড্রেন অকেজ, পানিতে তলিয়ে আছে তিনশ বিঘা ধান

আপডেট টাইম : ০৫:৪৮:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২১

ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো

 

রাজশাহীর বাঘায় দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব প্রায় আড়াই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দুই কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত (বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের)খাল খনন প্রকল্প। স্থানীয় সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এই খাল খনন প্রকল্পের ফলক উন্মোচনের পর শতভাগ কাছের মধ্যে ৮০ ভাগ খনন কাজ শেষ হলেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর কতৃক আদালতে মামলা করায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এই প্রকল্পটি।

ফলে উপজেলার নওটিকা , আরিপপুর,বেলগাছি,বারখাদিয়া,হিজোল পল্লী ও তেপুখুরিয়া-সহ ৬ টি বিলে জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে প্রায় ৩ শ’ বিঘা জমির ধান-সহ অন্যান ফসল। সম্প্রতি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট কৃষকদের পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন বাজুবাঘা ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান।
তিনি তার অভিযোগ জানান,উপজেলার মশিদপুর পদ্মা নদীর মুখে রয়েছে একটি সুইজ গেট। সেখান থেকে সরকারি ভাবে ক্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে এক সময় উপজেলার ৬ টি বিল-হিজোল পল্লী, আরিফপুর, বাজিতপুর, নওটিকা, তেপুখুরিয়া ও বারখাদিয়ায় পানি প্রবেশ করানো হতো। এর ফলে উপকৃত হতেন কৃষকরা। অনেকেই এই খালটির নাম করণ করে ছিলেন চন্দনা নদী।পরবর্তীতে মুল নদী পদ্মার রুপ পরিবর্তন হওয়ায় কতিপয় প্রভাবশালী ক্যানেলের কয়েকটি স্থানে মাটির ব্যাড়া দিয়ে মাছ চাষ-সহ বিলের মধ্যে পুকুর খনন শুরু করেন। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হন কৃষক। এ নিয়ে এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন-সহ স্থানীয় সাংসদের বিশেষ তদবিরে গত প্রায় আড়াই বছর পূর্বে বরেন্দ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দুই কোটি টাকা ব্যায়ে পুরাতন ওই ক্যানেলটি সংস্কার কাজ শুরু করেন। এর ফলে শত-শত কৃষক শস্তির নিশ্বাস ফেললেও কতিপয় প্রভাবশালীরা আবারও সেখানে বাধা সৃষ্টি করে এবং খাল ক্ষননের মধ্যে তাদের জমি চলে যাওয়ার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দেন।
মামলার বাদি তমেজ উদ্দিন, মোজাহার হোসেন, আবুল কাশেম ও রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের রের্কডকৃত দখলীয় সম্পত্তির উপর প্রায় ৩৫ বছর আগে জিয়া সরকারের সময় খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্দ্যোগ নেয়। এ সময় আমাদের সম্পত্তি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানোর পর তারা খাল খনন বন্ধ রাখেন। কিন্তু বর্তমান সরকার আমলে এসে স্থানীয় সাংসদের সুপারিশে একটি প্রকল্প বরাদ্দ হয়। এটি রক্ষা করতে আমরা পৃথক ভাবে আদালতে ৪টি মামলা দায়ের করি।

অপরদিকে প্রকল্পের স্থানীয় রক্ষানোবেক্ষনকারি ও উপজেলা আ’লীগের সহ দপ্তর সম্পাদক কৃষিবিদ মহিউল হাসান টিনি বলেন, যারা রেকড বলে মামলা করেছেন তারা ১৯৭৪ সালের রেকড়ে অংশিদার হয়েছেন সত্য। তবে ১৯২২ এবং ১৯৬২ সালে এটি খাস ক্ষতিয়ান ভুক্ত ক্যানেল ও ডোবা-নালা হিসাবে চিহৃত। তিনি বলেন, শুকনো মৌসুমে বিলে পানি রাখা এবং বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি নিস্কাশনের জন্য স্থানীয় সাংসদের কাছে থেকে সুপারিশ নিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে গত প্রায় আড়াই বছর পূর্বে ৭টি ভাগে জায়গা ভাগ করে খাল খনন কাজ শুরু করা হয় এবং ১০০ ভাগ কাজের মধ্যে ৮০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্য করা হয়েছে। পরবর্তীতে কতিফয় প্রভাবশালী ঐ ডোবা ধানী জমি দাবি করে আদালতে মামলা দেয়ায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও নওটিকা গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তাঁর ৫ বিঘা জমির ধান-সহ ওই এলাকার অসঙ্খ কৃষকের প্রায় ২-৩ শ বিঘা জমির ধান পানির নিচে তুলিয়ে গেছে। এর একটি কারণ অপরিকল্পিত ভাবে বিলের মধ্যে পুকুর খনন এবং বরাদ্দকৃত ড্রেনের কাজ বন্ধ করে দেয়া। তাঁর মতে, যদি ড্রেনের কাজ বন্ধ করা না হতো তাহলে এই জলাবন্ধতার সৃষ্টি হতো না এবং পানির নিচে ধান তলিয়ে থাকতো না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা বলেন, এই এলাকায় নদীর সাথে বিলকে সম্পৃক্ত করে গত আড়াই বছর পূর্বে সরকারিভাবে খাল খনন শুরু করা হয়েছিল। মোট ৮ কিলোর মধ্যে ৬ কিলো খনন শেষে হয়েছে। পরবর্তীতে স্থানীয় কিছু সংক্ষক মানুষ খাল খননে বাধা দেয়া সহ আদালতে মামলা করায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যাই। একই কথা বলেন উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান। তাঁর মতে জনসার্থে এই খালটি সম্পন্য করা খুবই জরুরী
এ বিষয়ে খালন খনন এলাকার বাসিন্দা ও বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড: লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, সরকার জনগণ এবং দেশের কল্যানে অনেক কিছুই করে থাকেন। এখানে ৮ কিলোমিটার ড্রেন নির্মান প্রকল্পের মধ্যে ২ কিলো মিটার বন্ধ রয়েছে । সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চাইলে কৃষকদের কিঞ্চিত ক্ষতিপুরণ দিয়ে বাঁকি ড্রেন সম্পুর্ণ করলে বিলের পানি নিস্কাশন হবে এবং পানির নিচে আর কখনোই ধান তলিয়ে থাকবে না।