জুলকার নাইন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট-শিবগঞ্জ সড়কের সোনাজল নামক জায়গায় গণপরিবহন ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত দলের একজন অন্যতম মূলহোতাসহ ৩ ডাকাত সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র, ছিনতাই করা মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (২৩ আগষ্ট) রাত ৮টার দিকে ডাকাতির পর হতে ভোলাহাট থানা ও ডিবি পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত পুলিশের কয়েকটি টিম এই অভিযান পরিচালনা করে। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ আগষ্ট) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানায় পুলিশ।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা গণপরিবহনে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আটককৃতরা হলো- ডাকাত দলের অন্যতম মূল হোতা শিবগঞ্জ উপজেলার বালিয়াদীঘি মধ্যবাজার গ্রামের মো. ভল্লুর ছেলে মো. রেজাউল করিম (৪০), একই গ্রামের মৃত সমশের আলীর ছেলে মো. আনারুল ইসলাম ওরফে আনুগুরু (৪৫) ও শাহবাজপুর ইউনিয়নের শান্তির মোড়-হামিদ নগর এলাকার মো. মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে তাজেল আলী (৩৫)।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এএইচএম আব্দুর রকিব বলেন, সোমবার (২৩ আগষ্ট) রাত ৮টার দিকে ডাকাতির ঘটনার পর থেকেই ডাকাত সদস্যদের আটক ও মালামাল উদ্ধার করতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ডাকাতির ঘটনায় ১৫-১৬ জন ডাকাত সদস্য অংশ নিলেও রাত-দিনের অভিযানে পুলিশ অন্যতম একজন মূলহোতাসহ ৩ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে৷ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে এবং পুলিশকে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। খুব শীগ্রই বাকি সদস্যদেরও আটক করা হবে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রথমে একটি মোটরসাইকেল আটকে তার কাছে কিছু না পেয়ে মোটরসাইকেল দিয়েই রাস্তায় ব্যারিকেট দেয় ডাকাত সদস্যরা। পরে ভোলাহাট থেকে ঢাকাগামী ৩টি বাস থেকে ডাকাতি করে তারা। ডাকাতরা লাঠি ও হাতুড় দিয়ে ঢাকা কোচের সামনের অংশ ভাঙচুর করে ভেতরে ঢুকে যাত্রীদের পিটিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করে। শেষের বাসটিতে সম্পূর্ণ ছিনতাই করার আগেই ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। তবে পেছনে আটকে থাকা ৩০-৩২টি পরিবহনে ডাকাতি হয়নি।
জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, আটককৃতদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া ১২টি মোবাইল ফোন, কয়েকটি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত হাঁসুয়া, হাতুড়ি, রামদাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত সদস্যরা জানায়, তারা মোট নগদ ৯৫ হাজার টাকা ছিনতাই করেছিল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এএইচএম আব্দুর রকিব বলেন, র্যাবের হাতে আটক হওয়া ৪ জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের থেকেও ডাকাতির ঘটনায় জড়িত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আটককৃত ডাকাত সদস্যরা প্রায় সবকিছুই স্বীকার করেছে, তারপরেও অধিক তদন্তের স্বার্থে রিমান্ডে নেয়ার বিষয়ে পরে ভাবা হবে।
তিনি আরও বলেন, ডাকাতির ঘটনায় ২জন মূলহোতা নেতৃত্ব দেয়। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে আটককৃত আনোয়ার। বাকি আরেক মূলহোতা ও ডাকাত সদস্যদের আটক করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৪ আগষ্ট) রাতে অভিযান পরিচালনা করে ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক লাল্টু মিয়াসহ ৪ ডাকাত সদস্যকে আটক করে র্যাব-৫। প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাহবুব আলম খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ফজল-ই-খুদা, ভোলাহাট থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মাববুবুর রহমান, গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) বাবুল উদ্দীন সরদারসহ অন্যান্যরা।