মোহাম্মদ রুহুল আমিন, দেবহাটা (সাতক্ষীরা)
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সেই তীন ফলের চাষ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তেমনি দেবহাটায় এই প্রথম তীন ফলের চাষ শুরু করেছন এক ব্যবসায়ী। যদিও তিনি থাকেন তবুও গ্রামের বাড়িতে ভিন্ন ধরনের ফলের আবাদ শুরু করেছেন এই উদ্যোক্তা। খোজ নিয়ে দেখা গেছে দেবহাটা উপজেলার চক মোহাম্মাদালীপুর গ্রামের খন্দকর রিয়াসাদ আলীর ছেলে আকবর আলী ২০২১ সালে ময়মনসিংহ থেকে তীন ফলের গাছ এনে বানিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু করেছেন।সরেজমিনে আকবর আলীর খেতে গিয়ে দেখা মেলে সারি সারি তীন গাছের। প্রথমে স্থানীয়রা ধারণা করেছিল মরুভূমির এই গাছ বাংলাদেশের মাটিতে টিকবে না। কিন্তু সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ছোট ছোট গাছগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করেছে। কিছু গাছে ফলও ধরেছে। যা স্থানীয়দের মনে কৌতুহল সৃষ্টি করেছে।দেবহাটা কৃষি অধিদপ্তর ও ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্যে মতে, কুরআনে যে তীনের কথা উলেখ রয়েছে সেটির বৈজ্ঞানিক নাম ঋরপঁং পধৎরপধ। ফাইকাস দলভুক্ত ৮০০ প্রজাতির মধ্যে এই তীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেশীয় কাকডুমুর থেকে বড়। স্বাদে সুমিষ্ট, অত্যধিক সুস্বাদু এবং রসালো। এককথায়, স্বাদে, ঘ্রাণে এবং পুষ্টিগুণে সেরা একটি ফলের নাম তীন। তীন গাছ তিন থেকে দশ মিটার পর্যন্ত বড় হয়। ঘন এবং খসখসে পাতায় ভরপুর থাকে। এছাড়া এই সেই তীন গাছ যার নামে পবিত্র কোরআনে একটি সূরাই নাযিল হয়েছে। এই তীনের নামে মহান আলাহ তায়ালা শপথও করেছেন। তাই মুসলমানদের কাছে এই তীন গাছ ও এর ফল একটু ভিন্ন অর্থ বহন করে। কোরআনের ৩০তম পারার ৯৫ নম্বর সূরার প্রথম আয়াত وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ ‘ওয়াত্তীনি ওয়াযাইতূনি। বর্ণিত সূরায় আলাহতায়ালা তীন গাছের নামে শপথ করেছেন।তীনের বাংলা অর্থ আঞ্জীর বা ডুমুর। মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম এশিয়ায় এ ফলের উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে করা হয়। সৌদি, কুয়েত, মিসর সহ আফগানিস্থান থেকে পর্তুগাল পর্যন্ত এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। তীনে আছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, কপার, আইরন ইত্যাদি।এতকিছু উপকারী উপাদান থাকলেও ক্যালরি এবং ফ্যাট নেই বললেই চলে। মোটা হয়ে যাওয়ার চিন্তা ঝেড়ে ফেলে পেটভর্তি খাওয়ার মতো একটি ফল তীন। বড় সাইজের একটি তীনে মাত্র ২ গ্রাম ফ্যাট থাকার কথা খাদ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। ডায়েটেড এবং ফিট থাকতে চাইলে তীন সবচেয়ে কার্যকর ফল। আর এন্টিঅক্সিডেন্ট-এর তীনের চেয়ে ভালো ফল আর নেই বললেই চলে। প্রোস্টেট এবং জরায়ু ক্যান্সারের প্রতিষেধক হচ্ছে তীন। ব্লাড প্রেসার এবং স্নায়ুরোগ কমাতে দারুণ কার্যকর। মায়ের বুকে দুধ উৎপাদনে তীনের জুড়ি মেলা ভার। পাইলসে ভোগা ব্যক্তিরা অসাধারণ ঔষধ হিসাবে তীন খেতে পারেন। গরুর দুধে এলার্জি থাকলে তীন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ক্যালসিয়ামের ঘাটতি নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ, হাঁপানি রোগ, শ্বাসকষ্ট, ত্বক সমস্যা, চুলের রোগে তীন সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। গর্ভবতী মহিলাদের এসিডিটি নির্মূল করে তীন। কিডনি, লিভার, ইউরিনারি ব্লাডের কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি করে। শরীরের দুর্বলতা দূর করে আনে সজীবতা আর অদম্য শক্তি। তীন ফলের উপকারিতা লেখতে চাইলে শেষ করা কষ্টকর হয়ে যাবে। আলাহর রাসুল (সা.) তীন ফল অনুসারীদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার সময় বলতেন, ‘এটি খাও, কারণ এতে অনেক রোগের ঔষধ রয়েছে। তিন বাগানটির পরিচর্যাকারী অহিদুল ইসলাম জানান তীন গাছকে দেখতে অনেকেই আসছেন। এটি এলাকায় নতুন হওয়া মানুষের মনে আলাদা আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাগান শুরুতে প্রথমে চারাগুলো এনে নির্দিষ্ট মাপে গর্ত খুড়ে তারপর চারা রোপন করি। এরপর ধারাবাহিক ভাবে পরিচর্যার মাধ্যমে গাছগুলো বড় হচ্ছে। অনেক গাছে ফল আসছে। বাহিরের কোন পশুপাখি যাতে বাগানের গাছ খেয়ে না ফেলে সেজন্য নেটের বেড়া দেওয়া হবে। বর্তমান বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই আমরা বেশি আকারে এই তীন চাষ করা হবে। এ ফলের আকার ডুমুরের চেয়ে বড়, খেতে মিষ্টি ও রসালো বলে জানান তিনি।তীন চাষের উদ্যোক্তা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আকবর আলী জানান, ময়মনসিংহ থেকে তীন গাছের চারা সংগ্রহ করেন তিনি। প্রথমে ৯শত চারা রোপন করা হয়েছে। বিদেশী ফল হিসাবে এটি বেশ চাহিদা রয়েছে। তবে আগামী কয়েক মাসের ভিতরে সব গাছে ফল এসে যাবে তখন বাগানটি দেখতে আরো ভালো লাগবে। এর পাশাপশি আমি পেয়ারা, লটকন, ড্রাগন, বারোমাসি আম সহ বিভিনন্ন ফলের আবাদ করেছি। আগামিতে আরো অনেক ফলের আবাদ করার ইচ্ছা রয়েছে।দেবহাটা উপজেলা কৃষি অফিসার শরীফ মোহাম্মাদ তিতুমীর জানান,দেবহাটায় প্রথম তীন গাছের চাষ হচ্ছে। সখিপুর ইউনিয়নের একজন উদ্যোক্তা প্রায় দেড় বিঘা জমিতে এটি চাষ করেছেন। ফলটি গুনেমানে ভালো হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে। আমি ঐ বাগানটি পরির্দশন করে আসছি। যদি কেউ নতুন ভাবে উপজেলার কোথাও কৃষিভিত্তক উদ্যোক্তা হতে চাই তাদের জন্য আমার দপ্তর সব সময় উন্মুক্ত। তাছাড়া তীন বর্তমানে সম্ভবনাময় চাষ হিসাবে দেখা দিতে পারে। তাই এই চাষের মাধ্যমে অনেক বেকার তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।