জুলকার নাইন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
গৃহহীন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে কাজে ত্রুটির অভিযোগে নির্মাণ শ্রমিকদের পেটানোর অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভোলাহাট উপজেলার চরধরমপুর বিন্দুপাড়ায় ৪-৫ জন নির্মাণ শ্রমিককে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সমর কুমার পালের নির্দেশে আনসার সদস্যরা শ্রমিকদের মারধর করে বলে অভিযোগ নির্মাণ শ্রমিকদের।
নির্মাণ শ্রমিক, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে চরধরমপুর বিন্দুপাড়ায় নির্মাণাধীন ১০০টি গৃহ নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে যান ইউএনও। সেখানে গিয়ে গৃহ নির্মাণ কাজের ত্রুটির অভিযোগে নির্মাণ শ্রমিকদের মারধর করার নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পাল। এসময় পরিস্থিতি দেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় আরও অন্তত ২০-২৫ জন মিস্ত্রি ও লেবার। মারধরের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেহেদী ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কাউসার আলম সরকার, ভোলাহাট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ভুটু, মো. আফজাল হোসেন হিরো।
আনসার সদস্যদের মার খেয়ে আহত হয়, নির্মান শ্রমিক আনোয়ার (৩৫), সামাউন, কাবিরুল (৩০) ও রবিউল। নির্মাণ কাজে সামান্য ত্রুটির কথা স্বীকার করে রাজমিস্ত্রী মো. বল্টু মুঠোফোনে বলেন, পুরো ১০০টি ঘর নির্মাণে কোন গাফেলতি বা ত্রুটি নেই। সবগুলো পিলারে সঠিকভাবে রড দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র রান্নাঘরের পাশে বাথরুমের পিলারে মিস্ত্রিরা রড দিতে ভুলে গেছে। পরে উপজেলা থেকে ইঞ্জিনিয়ার এসে এটি ধরেছিল। আমরা বলেছিলাম, যেহেতু ভুল হয়ে গেছে এখন কিভাবে কাজ করবো স্যার। তিনি (প্রকৌশলী) জানান, এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পিলারের উপরে গ্রুপ করে ঢালাই করে দিবে। আমরা সেভাবেই কাজ করছিলাম।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্রমিকরা কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় উপস্থিত হন ইউএনও। এমনকি অনেকেই তখন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। এসময় একই ভুলের কারনে ইউএনও স্যারকে সব খুলে বলার পরেই তিনি বললেন, ব্যাটাদের পেটাও। এরপর ধরে ধরে ৪-৫ জন শ্রমিককে নিয়ে এসে আনসার সদস্যরা পেটালো। পায়ে, পিটে, হাতে ইচ্ছেমতো মেরেছে তারা। একজন শ্রমিক অনেক অনুরোধ করে বলেছিলো, স্যার আমার পা ভাঙ্গা মারবেন না। তারপরেও তাকে ছাড়েনি। এসি ল্যান্ড স্যারের ইশারায় সাইডে পালিয়ে মার খাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছি বলে জানান তিনি।
আরেক শ্রমিক মো. কাবিরুল জানান, ইউএনও স্যারের নির্দেশে যেমনই আনসার সদস্যরা মারতে শুরু করা মাত্রই মারা দেখে বাকি ২০-২৫ শ্রমিক বিভিন্ন দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এসময় আনসার সদস্যকে ইউএনও স্যার বলেছেন, মেরে হাত-পা ভেঙ্গে ফেলে দাও। আনসার সদস্যদের পা ধরে মাফ চাইলে রক্ষা হয়নি।
নির্মাণ শ্রমিক আনোয়ার বলেন, মারধরের বিষয়ে আমরা ভোলাহাট সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে বলেছি। অন্যায়ভাবে মারার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত কাজ করবো না বলে জানিয়েছি।ইউএনও স্যার মারলেন, কার কাছে বিচার চাইবো।
ঘটনার পরের দিন শুক্রবার (৩০ জুলাই) কাজে যায়নি নির্মাণ শ্রমিকরা। ভোলাহাট সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইয়াজদানী জর্জ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিমার্ণ শ্রমিকেরা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। এ ঘটনার সমাধান না করা হলে নির্মাণ কাজে যোগ দিবেন না তারা। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পালকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সমর কুমার পালের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। শ্রমিকরা কাজে কিছু ভুল করেছে। তাই তাদেরকে বকাঝকা করা হয়েছে। মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের অনিয়ম দূর্ণীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিকার চেয়ে অভিয়োগ করলে অভিয়োগকারীকে অফিসে ডেকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠে ইউএনও সমর কুমার পালের বিরুদ্ধে।