ঢাকা ০৮:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন

ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো

 

গত বছর চাহিদা তেমন সাড়া মেলেনি ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস। তবে এ বছর রাজশাহী অঞ্চলে প্রথম দিনেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন-৪। উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ প্রথম দিনই ওয়াগন ভর্তি করে ১০০টি গরু ও ১২০টি ছাগল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রাজশাহী ছেড়েছে ক্যাটল স্পেশাল ট্রেনটি।

শনিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজশাহী স্টেশনের একটি প্ল্যাটফর্মে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার মিহির কান্তি গুহ এই ট্রেনের উদ্বোধন করেন।
রাজশাহী রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ক্যাটল স্পেশাল ট্রেনটিতে রাজশাহী স্টেশনে বরাদ্দ একটি ওয়াগনে বুক হয়েছে ১২টি গরু ও ৮টি ছাগল। এ ছাড়া রাজশাহী অঞ্চল থেকে মোট ১০০টি গরু ও ১২০টি ছাগল বুক হয়েছে। এর মধ্যে চাপাইনবাবগঞ্জে স্টেশন থেকে বুক হয়েছে ৮০টি গরু-ছাগল এবং বরাল ব্রিজ স্টেশন থেকে বুক হয়েছে ১২০টি গরু-ছাগল। মোট ১০০টি গরু ও ১২০টি ছাগল নিয়ে রাজশাহী ছেড়েছে ট্রেনটি।

এ বিষয়ে রাজশাহী রেলওয়ের বুকিং সহকারী মো. আব্দুর রউফ জানান, রাজশাহীতে প্রথম দিনে একটি ওয়াগন দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। একটি ওয়াগনে মোট ২০টি গরু বা ছাগল পরিবহন করা যাবে, এর বেশি বুকিং করা যাবে না। প্রতিটি ওয়াগনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৮৩০ টাকা। ভাড়ার টাকা সেবাভোগীরা তাদের পশুর পরিমাণ অনুযায়ী ভাগাভাগি করে দিচ্ছেন।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম বলেন, ‘গত বছরের ন্যায় এবারও ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়েছে। তবে গতবারের চাইতে এবার সেবাভোগীদের চাহিদা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মূলত ঈদের দুদিন আগে গরু পরিবহনের চাহিদা বেশি থাকে। সেই দিকটি বিবেচনা করে দ্বিতীয় দিন একটি ও তৃতীয় দিন আরও একটি ওয়াগন রাজশাহীর জন্য বৃদ্ধি করা হবে।’
রাজশাহী নগরীর উপশহরের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম নয়ন। ৭০ হাজার টাকায় কেনা প্রায় সাড়ে তিন মণ ওজনের একটি ও ৬২ হাজার ৫০০ টাকায় কেনা তিন মণ ওজনের আরও একটি গরু এই স্পেশাল ট্রেনে বড় ভাইয়ের কাছে ঢাকায় পাঠালেন। তিনি বলেন, ‘এই ট্রেনে সুযোগ-সুবিধা বেশ ভালই। দুটি গরুতে মাত্র এক হাজার ২০০ টাকার মতো লেগেছে। সুন্দর করে তুলে পাঠিয়ে দিলাম। ওখানে বুকিং নাম্বার দেখে নিয়ে নেবে।’

চাপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা ইব্রাহিম ২টি ওয়াগনে ৩৮টি গরু ঢাকার হাটে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ট্রেনে গরু নেয়া ট্রাকের চেয়ে অনেকগুণ ভালো ও সুবিধাজনক। ট্রাকের চেয়ে ট্রেনে গরু ভালো ও সুস্থ থাকবে। আলো-বাতাস আছে, ভাড়াও কম। তাই এটাতেই নিয়ে যাচ্ছি।’

অসুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওয়াগন গুলোতে যদি কারেন্ট থাকতো তাহলে অনেক ভালো হতো। আর ফ্লোরে বালু দেয়ার ব্যবস্থা থাকলে গরু প্রসাব-পায়খানা করলেও আর সমস্যা হতো না। এদিকে রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দিতে হবে। তাছাড়া সবই ভালো।’
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বাসিন্দা নূর হোসেন বলেন, ‘৪টি গরু নিয়ে ঢাকার তেজগাঁও যাচ্ছি। সেখানে আত্মীয়-স্বজনরা এগুলো কোরবানি দেবেন। পরিবহন খরচ খুবই কম। গরু প্রতি খরচ পড়েছে মাত্র ৫৯৫ টাকা।’

রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে স্টেশনের জেনারেল ম্যানেজার মিহির কান্তি গুহ বলেন, ‘ক্যাটেল স্পেশাল ট্রেন-৪ এর উদ্বোধনের পর খামারি ও পশু পরিবহনকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, ট্রাকের চেয়ে এই ট্রেনে তারা স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন, পাচ্ছেন অনেক সুবিধা।’

তিনি বলেন, ‘গরু-ছাগল যেন সুন্দরভাবে বহন করা যায় সেই দিকটি বিবেচনায় রেখে স্পিড কম রেখে চালানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি ওয়াগনের সবগুলো জানালা খোলা রাখা হয়েছে, যাতে গরু-ছাগলের কোনো সমস্যা না হয় ও সুস্থ থাকে। তবে ভোক্তারা দু/একটি সমস্যার কথা জানিয়েছেন। সেগুলো সমাধানের বিষয়েও নজর দেয়া হবে।’

ক্যাটল স্পেশালের সুবিধার ও চাহিদার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রাকে পশু পরিবহনে অনেক সময় গরমে মারা যাচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে, সময় লাগছে। এমনকি বিভিন্ন জায়গায় চাদা ও টোলসহ নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয় খামারিসহ সাধারণ মানুষকে। সেই দিক লক্ষ্য করলে ক্যাটল স্পেশালে তেমন কোনো সমস্যা নেই। একবার ট্রেনে উঠবে এবং গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। আর তাই এই ট্রেনে এবার ব্যাপক সাড়া মিলেছে।’

চাহিদার প্রেক্ষিতে ওয়াগন বা দিন বৃদ্ধি পাবে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত ১৭ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই এই তিন দিন চলবে। তবে চাহিদার ওপর নির্ভর করবে ওয়াগন বাড়ানো কিংবা এক দিন বৃদ্ধি করা যায় কি-না। সেবাভোগীদের কাছে সাড়া পেলে অবশ্যই সেই দিকটিও বিবেচনায় রাখা হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

গ্রাম পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা

ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন

আপডেট টাইম : ১২:০০:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুলাই ২০২১

ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো

 

গত বছর চাহিদা তেমন সাড়া মেলেনি ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস। তবে এ বছর রাজশাহী অঞ্চলে প্রথম দিনেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন-৪। উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ প্রথম দিনই ওয়াগন ভর্তি করে ১০০টি গরু ও ১২০টি ছাগল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রাজশাহী ছেড়েছে ক্যাটল স্পেশাল ট্রেনটি।

শনিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজশাহী স্টেশনের একটি প্ল্যাটফর্মে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার মিহির কান্তি গুহ এই ট্রেনের উদ্বোধন করেন।
রাজশাহী রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ক্যাটল স্পেশাল ট্রেনটিতে রাজশাহী স্টেশনে বরাদ্দ একটি ওয়াগনে বুক হয়েছে ১২টি গরু ও ৮টি ছাগল। এ ছাড়া রাজশাহী অঞ্চল থেকে মোট ১০০টি গরু ও ১২০টি ছাগল বুক হয়েছে। এর মধ্যে চাপাইনবাবগঞ্জে স্টেশন থেকে বুক হয়েছে ৮০টি গরু-ছাগল এবং বরাল ব্রিজ স্টেশন থেকে বুক হয়েছে ১২০টি গরু-ছাগল। মোট ১০০টি গরু ও ১২০টি ছাগল নিয়ে রাজশাহী ছেড়েছে ট্রেনটি।

এ বিষয়ে রাজশাহী রেলওয়ের বুকিং সহকারী মো. আব্দুর রউফ জানান, রাজশাহীতে প্রথম দিনে একটি ওয়াগন দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। একটি ওয়াগনে মোট ২০টি গরু বা ছাগল পরিবহন করা যাবে, এর বেশি বুকিং করা যাবে না। প্রতিটি ওয়াগনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৮৩০ টাকা। ভাড়ার টাকা সেবাভোগীরা তাদের পশুর পরিমাণ অনুযায়ী ভাগাভাগি করে দিচ্ছেন।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম বলেন, ‘গত বছরের ন্যায় এবারও ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়েছে। তবে গতবারের চাইতে এবার সেবাভোগীদের চাহিদা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মূলত ঈদের দুদিন আগে গরু পরিবহনের চাহিদা বেশি থাকে। সেই দিকটি বিবেচনা করে দ্বিতীয় দিন একটি ও তৃতীয় দিন আরও একটি ওয়াগন রাজশাহীর জন্য বৃদ্ধি করা হবে।’
রাজশাহী নগরীর উপশহরের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম নয়ন। ৭০ হাজার টাকায় কেনা প্রায় সাড়ে তিন মণ ওজনের একটি ও ৬২ হাজার ৫০০ টাকায় কেনা তিন মণ ওজনের আরও একটি গরু এই স্পেশাল ট্রেনে বড় ভাইয়ের কাছে ঢাকায় পাঠালেন। তিনি বলেন, ‘এই ট্রেনে সুযোগ-সুবিধা বেশ ভালই। দুটি গরুতে মাত্র এক হাজার ২০০ টাকার মতো লেগেছে। সুন্দর করে তুলে পাঠিয়ে দিলাম। ওখানে বুকিং নাম্বার দেখে নিয়ে নেবে।’

চাপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা ইব্রাহিম ২টি ওয়াগনে ৩৮টি গরু ঢাকার হাটে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ট্রেনে গরু নেয়া ট্রাকের চেয়ে অনেকগুণ ভালো ও সুবিধাজনক। ট্রাকের চেয়ে ট্রেনে গরু ভালো ও সুস্থ থাকবে। আলো-বাতাস আছে, ভাড়াও কম। তাই এটাতেই নিয়ে যাচ্ছি।’

অসুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওয়াগন গুলোতে যদি কারেন্ট থাকতো তাহলে অনেক ভালো হতো। আর ফ্লোরে বালু দেয়ার ব্যবস্থা থাকলে গরু প্রসাব-পায়খানা করলেও আর সমস্যা হতো না। এদিকে রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দিতে হবে। তাছাড়া সবই ভালো।’
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বাসিন্দা নূর হোসেন বলেন, ‘৪টি গরু নিয়ে ঢাকার তেজগাঁও যাচ্ছি। সেখানে আত্মীয়-স্বজনরা এগুলো কোরবানি দেবেন। পরিবহন খরচ খুবই কম। গরু প্রতি খরচ পড়েছে মাত্র ৫৯৫ টাকা।’

রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে স্টেশনের জেনারেল ম্যানেজার মিহির কান্তি গুহ বলেন, ‘ক্যাটেল স্পেশাল ট্রেন-৪ এর উদ্বোধনের পর খামারি ও পশু পরিবহনকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, ট্রাকের চেয়ে এই ট্রেনে তারা স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন, পাচ্ছেন অনেক সুবিধা।’

তিনি বলেন, ‘গরু-ছাগল যেন সুন্দরভাবে বহন করা যায় সেই দিকটি বিবেচনায় রেখে স্পিড কম রেখে চালানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি ওয়াগনের সবগুলো জানালা খোলা রাখা হয়েছে, যাতে গরু-ছাগলের কোনো সমস্যা না হয় ও সুস্থ থাকে। তবে ভোক্তারা দু/একটি সমস্যার কথা জানিয়েছেন। সেগুলো সমাধানের বিষয়েও নজর দেয়া হবে।’

ক্যাটল স্পেশালের সুবিধার ও চাহিদার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রাকে পশু পরিবহনে অনেক সময় গরমে মারা যাচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে, সময় লাগছে। এমনকি বিভিন্ন জায়গায় চাদা ও টোলসহ নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয় খামারিসহ সাধারণ মানুষকে। সেই দিক লক্ষ্য করলে ক্যাটল স্পেশালে তেমন কোনো সমস্যা নেই। একবার ট্রেনে উঠবে এবং গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। আর তাই এই ট্রেনে এবার ব্যাপক সাড়া মিলেছে।’

চাহিদার প্রেক্ষিতে ওয়াগন বা দিন বৃদ্ধি পাবে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত ১৭ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই এই তিন দিন চলবে। তবে চাহিদার ওপর নির্ভর করবে ওয়াগন বাড়ানো কিংবা এক দিন বৃদ্ধি করা যায় কি-না। সেবাভোগীদের কাছে সাড়া পেলে অবশ্যই সেই দিকটিও বিবেচনায় রাখা হবে।