ঢাকা ১১:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম :
Logo অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ০৪ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। Logo ফরিদপুর জেলার মধুখালিতে “শ্যালিকার সঙ্গে পরকীয়ার জেরে দুলাভাইকে হত্যা” শীর্ষক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার পলাতক আসামি শরিফুল শেখ ও তথি বেগম’কে ফরিদপুরের কোতোয়ালি এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। Logo মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ী এলাকা হতে ২৩.৫ কেজি গাঁজাসহ ০১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০ Logo গ্রাম পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা Logo আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস রিপোর্টার্স ফোরামের শ্রদ্ধা

রাজশাহীতে কৃষকের ২২ গরু নিলামে বিক্রি, কান্না থামছে না সাদিকুলের

ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো

 

খামারে পালনকৃত গরু বেশি লাভের আশায় কৃষক সাদিকুল নিয়ে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রামে। পথিমধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী চেকপোষ্টে ট্রাক থামিয়ে জব্দ করা হয় ২২টি গরু। এরপর গরু গুলোকে ভারতীয় বলে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) নিলামে বিক্রি করে দেয় কাস্টমস দপ্তর। ফলে গত এক বছর ধরে পালনকৃত গরু গুলোকে হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার কৃষক সাদিকুল ইসলাম। তিনি শুক্রবার রাজশাহীর গণমাধ্যমকে ফোন দিয়ে তার সেই দুঃখের কথা ব্যক্ত করেন। সাদিকুল এসময় দাবি করেন তার গরুগুলো আর পাওয়া না গেলেও তিনি এর বিচার দাবিতে আইনি পদক্ষেপ নেবেন। নিঃস্ব সাদিকুল গণমাধ্যমকে যা বলেছেন তা পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো-
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কাল গুরুগুলো রেখে আসার পর থেকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বউ-বেটি, ছেলেপেলে সবাই কান্নাকাটি করছে। তিনি বলেন,‘রাজাবাড়িতে যারা গরু ধরেছে তারা বলেছিলো- ‘টাকা দিয়ে যান, ট্রাক ছেড়ে দিবো। তখন সাদিকুল তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কিসের টাকা দিবো, আমি মেম্বার মানুষ। তারপর তারা আমাকে হ্যান্ডকাপ লাগানোর হুমকি দিয়ে আমাদের গরুগুলো নিয়ে কাস্টমস অফিসের দিকে রওয়ানা দেয়। পরে আমরাও গাড়ির পিছু পিছু রওয়ানা দিই।’ কারা টাকা চেয়েছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লুঙ্গি পড়া একজন, আমি দেখলেই তাকে চিনবো।’ আমাদেরকে ১৪ তারিখ রাতে বলা হয়েছিল পরের দিন অর্থাৎ গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে গরুগুলো ফেরৎ দেয়া হবে। কিন্তু দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওইখানে স্থগিত ছিলাম। পরে সিও সাহেবের কাছে যেতে বলে। গতকাল (১৫ জুলাই) যখন আমার লোকজন বিজিবির সিইও সাহেবের সাথে কথা বলতে যায়, তখন তাদের সঙ্গে ৪০ মিনিট ধরে কথা বলে। কিন্তু আমি যখন কাগজপত্র নিয়ে বিজিবির সিইও সাহেবের সাথে দেখা করতে গেটে যাই তখন করোনার অজুহাত দেখিয়ে বিজিবি গেটে আমাকে আটকিয়ে দেয়া হয়। আমাকে কথা বলতে দেয়া হলো না। শেষ পর্যন্ত বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ন্যায় বিচারের আশায় একটি দরখাস্ত দিয়ে এসেছি। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এসময় সাদিকুল বলেন, ‘২১ লাখ টাকার গরু শুনেছি ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।’ বার বার মুর্চা গিয়ে শুধু একটা কথাই বলছেন, ‘আমরা গরীব মানুষ, গরুগুলো না পেলে মরে যাবো ভাই।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের পালন করা এই ২২ টি গরু চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ী চেকপোস্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের যৌথ দল গত বুধবার গরুগুলো আটক করে। পরে বৃহস্পতিবার ভারতীয় গরু বলে দাবি রাজশাহী শহরে নিয়ে গিয়ে পানির দামে মাত্র ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করে দেয় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ। কিন্তু এই গরুগুলোর আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ২১ লাখ টাকা দাবি করেন গরুর মালিকরা।

অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহী মহানগরীর রুবেল বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজস করে গরুগুলো পানির দামে বিক্রি করা হয়। রাজশাহী নগরীর দাশপুকুর এলাকায় সিটি বাইপাশের উত্তর পাশে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের গুদামে গরুগুলো নিলাম করা হয়। সেখান থেকে মাত্র ২০ গজ দূরেই ঈদগাহ মাঠে বিকেলে ওই গরুগুলোর মধ্যে ২০টি প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয় ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায়।
এদিকে ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি- গরুগুলো তাঁদের বাড়িতে পোষা। গরু মালিকদের বাড়ি গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের বেগুনবাড়ি ও ব্রজনাথপুর গ্রামে। গরু মালিকদের মধ্যে বেগুনবাড়ি গ্রামের মো. রহিমের পাঁচটি, মো. মইদুলের চারটি, মো. সেলিমের আটটি, ব্রজনাথপুরের সাদিকুল ইসলামের আটটি গরু ছিল। সাদিকুল ইসলাম বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যও।

গরুগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে নেয়ার জন্য বাঙ্গাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সাদেরুল ইসলাম একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিলেন। এতে প্রত্যেকের নাম ও গরুর সংখ্যা উল্লেখ করে চেয়ারম্যান লিখে দিয়েছিলেন, বাড়ির পোষা গরু বিক্রির জন্য তাঁরা চট্টগ্রামের বিবিরহাটে নিয়ে যাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার বিকালে যোগাযোগ করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান স্বীকার করেন এই প্রত্যয়নপত্র তিনি দিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান বলেন, ‘গরুগুলো বাড়িতে পোষা। এটা ভারতীয় গরু নয়। কিন্তু তারা কিভাবে আটক করে নিলাম দিয়েছে?’
ইউপি সদস্য সাদিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, গত বুধবার দুপুরে গোমস্তাপুর থেকে গরুগুলো একটি ট্রাকে তুলে চট্টগ্রামে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীহাট যৌথ চেকপোস্টে ট্রাক থামানো হয়। তখন তিনি ট্রাক থেকে নেমে নিজের পরিচয় দেন এবং জানান যে, এগুলো ভারতীয় গরু নয়। তাঁদের বাড়ির পোষা গরু। পরিচয় শুনেই কাস্টমসের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সাদিকুল তাঁদের প্রত্যয়নপত্র দিলে সেগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়। এরপর গুরুগুলো গরুগুলোকে জব্দ করা হয়। সেগুলো বৃহস্পতিবার নিলামে বিক্রি করা হয়।
গরুর মালিক সাদিকুল আরও জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী নগরীতে কাস্টমসের গুদাম থেকে গরুগুলো নিলাম দেয়া হয়। ২২টি গরু মাত্র ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিটির দাম গড়ে ৪২ হাজার ৫০০ টাকা। মুন্না নামের এক ব্যক্তি গরুগুলো কিনেছেন।

গরুর মালিক সাদিকুল জানান, কোরবানীর হাটে তাঁদের এসব গরুর প্রতিটির দাম হতো আনুমানিক ৯০ থেকে এক লাখ টাকা। সাদিকুল বলেন, ‘আমরা অনেক আশা করে কোরবানীর জন্য গরুগুলো পুষেছিলাম। বেশি দাম পাওয়ার আশায় সেগুলো চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন নিঃশ্ব হয়ে গেলাম।’
এদিকে গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তা কাস্টমসের পরিদর্শক শাহরিয়ার হাসান সজীব বলেন, বিজিবি ও কাস্টমসের সদস্যরা আমাদের গুদামে গরু দেয়ার সময় বলেছেন, কোনো মালিক পাওয়া যায়নি। ট্রাক থামানো হলে ভারতীয় এসব গরু ফেলে সবাই পালিয়ে গিয়েছেন। জব্দ তালিকায় বিজিবি উল্লেখ করেছে, প্রতিটি গরুর দাম আনুমানিক ৮০ হাজার টাকা।

শাহরিয়ার বলেন, ‘গরুগুলোর দাম এত বেশি বলে আমরা মনে করি না। সর্বোচ্চ ৫০ হাজার হতে পারে। আমরা নিলামে ১১ লাখ টাকা চেয়েছিলাম। ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এটা পর্যাপ্ত।’
তবে এ নিয়ে বিজিবির রাজশাহী-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘গুরুগুলো যে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেই ট্রাকে কোনো কাগজপত্র ছিলা না গরুর। ফলে কাস্টমস এবং বিজিবির যৌথ দল গরুগুলো আটক করেছে। পরে কাস্টমস সেগুলো নিলাম করেছে। তারা কীভাবে নিলাম করলো সেটি তারাই ভালো বলতে পারবে।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ০৪ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০।

রাজশাহীতে কৃষকের ২২ গরু নিলামে বিক্রি, কান্না থামছে না সাদিকুলের

আপডেট টাইম : ১১:৫৪:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১

ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো

 

খামারে পালনকৃত গরু বেশি লাভের আশায় কৃষক সাদিকুল নিয়ে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রামে। পথিমধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী চেকপোষ্টে ট্রাক থামিয়ে জব্দ করা হয় ২২টি গরু। এরপর গরু গুলোকে ভারতীয় বলে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) নিলামে বিক্রি করে দেয় কাস্টমস দপ্তর। ফলে গত এক বছর ধরে পালনকৃত গরু গুলোকে হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার কৃষক সাদিকুল ইসলাম। তিনি শুক্রবার রাজশাহীর গণমাধ্যমকে ফোন দিয়ে তার সেই দুঃখের কথা ব্যক্ত করেন। সাদিকুল এসময় দাবি করেন তার গরুগুলো আর পাওয়া না গেলেও তিনি এর বিচার দাবিতে আইনি পদক্ষেপ নেবেন। নিঃস্ব সাদিকুল গণমাধ্যমকে যা বলেছেন তা পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো-
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কাল গুরুগুলো রেখে আসার পর থেকে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বউ-বেটি, ছেলেপেলে সবাই কান্নাকাটি করছে। তিনি বলেন,‘রাজাবাড়িতে যারা গরু ধরেছে তারা বলেছিলো- ‘টাকা দিয়ে যান, ট্রাক ছেড়ে দিবো। তখন সাদিকুল তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কিসের টাকা দিবো, আমি মেম্বার মানুষ। তারপর তারা আমাকে হ্যান্ডকাপ লাগানোর হুমকি দিয়ে আমাদের গরুগুলো নিয়ে কাস্টমস অফিসের দিকে রওয়ানা দেয়। পরে আমরাও গাড়ির পিছু পিছু রওয়ানা দিই।’ কারা টাকা চেয়েছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লুঙ্গি পড়া একজন, আমি দেখলেই তাকে চিনবো।’ আমাদেরকে ১৪ তারিখ রাতে বলা হয়েছিল পরের দিন অর্থাৎ গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে গরুগুলো ফেরৎ দেয়া হবে। কিন্তু দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওইখানে স্থগিত ছিলাম। পরে সিও সাহেবের কাছে যেতে বলে। গতকাল (১৫ জুলাই) যখন আমার লোকজন বিজিবির সিইও সাহেবের সাথে কথা বলতে যায়, তখন তাদের সঙ্গে ৪০ মিনিট ধরে কথা বলে। কিন্তু আমি যখন কাগজপত্র নিয়ে বিজিবির সিইও সাহেবের সাথে দেখা করতে গেটে যাই তখন করোনার অজুহাত দেখিয়ে বিজিবি গেটে আমাকে আটকিয়ে দেয়া হয়। আমাকে কথা বলতে দেয়া হলো না। শেষ পর্যন্ত বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ন্যায় বিচারের আশায় একটি দরখাস্ত দিয়ে এসেছি। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এসময় সাদিকুল বলেন, ‘২১ লাখ টাকার গরু শুনেছি ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।’ বার বার মুর্চা গিয়ে শুধু একটা কথাই বলছেন, ‘আমরা গরীব মানুষ, গরুগুলো না পেলে মরে যাবো ভাই।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের পালন করা এই ২২ টি গরু চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ী চেকপোস্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের যৌথ দল গত বুধবার গরুগুলো আটক করে। পরে বৃহস্পতিবার ভারতীয় গরু বলে দাবি রাজশাহী শহরে নিয়ে গিয়ে পানির দামে মাত্র ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করে দেয় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ। কিন্তু এই গরুগুলোর আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ২১ লাখ টাকা দাবি করেন গরুর মালিকরা।

অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহী মহানগরীর রুবেল বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজস করে গরুগুলো পানির দামে বিক্রি করা হয়। রাজশাহী নগরীর দাশপুকুর এলাকায় সিটি বাইপাশের উত্তর পাশে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের গুদামে গরুগুলো নিলাম করা হয়। সেখান থেকে মাত্র ২০ গজ দূরেই ঈদগাহ মাঠে বিকেলে ওই গরুগুলোর মধ্যে ২০টি প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয় ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায়।
এদিকে ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি- গরুগুলো তাঁদের বাড়িতে পোষা। গরু মালিকদের বাড়ি গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের বেগুনবাড়ি ও ব্রজনাথপুর গ্রামে। গরু মালিকদের মধ্যে বেগুনবাড়ি গ্রামের মো. রহিমের পাঁচটি, মো. মইদুলের চারটি, মো. সেলিমের আটটি, ব্রজনাথপুরের সাদিকুল ইসলামের আটটি গরু ছিল। সাদিকুল ইসলাম বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যও।

গরুগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে নেয়ার জন্য বাঙ্গাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সাদেরুল ইসলাম একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিলেন। এতে প্রত্যেকের নাম ও গরুর সংখ্যা উল্লেখ করে চেয়ারম্যান লিখে দিয়েছিলেন, বাড়ির পোষা গরু বিক্রির জন্য তাঁরা চট্টগ্রামের বিবিরহাটে নিয়ে যাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার বিকালে যোগাযোগ করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান স্বীকার করেন এই প্রত্যয়নপত্র তিনি দিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান বলেন, ‘গরুগুলো বাড়িতে পোষা। এটা ভারতীয় গরু নয়। কিন্তু তারা কিভাবে আটক করে নিলাম দিয়েছে?’
ইউপি সদস্য সাদিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, গত বুধবার দুপুরে গোমস্তাপুর থেকে গরুগুলো একটি ট্রাকে তুলে চট্টগ্রামে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীহাট যৌথ চেকপোস্টে ট্রাক থামানো হয়। তখন তিনি ট্রাক থেকে নেমে নিজের পরিচয় দেন এবং জানান যে, এগুলো ভারতীয় গরু নয়। তাঁদের বাড়ির পোষা গরু। পরিচয় শুনেই কাস্টমসের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সাদিকুল তাঁদের প্রত্যয়নপত্র দিলে সেগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়। এরপর গুরুগুলো গরুগুলোকে জব্দ করা হয়। সেগুলো বৃহস্পতিবার নিলামে বিক্রি করা হয়।
গরুর মালিক সাদিকুল আরও জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী নগরীতে কাস্টমসের গুদাম থেকে গরুগুলো নিলাম দেয়া হয়। ২২টি গরু মাত্র ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিটির দাম গড়ে ৪২ হাজার ৫০০ টাকা। মুন্না নামের এক ব্যক্তি গরুগুলো কিনেছেন।

গরুর মালিক সাদিকুল জানান, কোরবানীর হাটে তাঁদের এসব গরুর প্রতিটির দাম হতো আনুমানিক ৯০ থেকে এক লাখ টাকা। সাদিকুল বলেন, ‘আমরা অনেক আশা করে কোরবানীর জন্য গরুগুলো পুষেছিলাম। বেশি দাম পাওয়ার আশায় সেগুলো চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন নিঃশ্ব হয়ে গেলাম।’
এদিকে গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তা কাস্টমসের পরিদর্শক শাহরিয়ার হাসান সজীব বলেন, বিজিবি ও কাস্টমসের সদস্যরা আমাদের গুদামে গরু দেয়ার সময় বলেছেন, কোনো মালিক পাওয়া যায়নি। ট্রাক থামানো হলে ভারতীয় এসব গরু ফেলে সবাই পালিয়ে গিয়েছেন। জব্দ তালিকায় বিজিবি উল্লেখ করেছে, প্রতিটি গরুর দাম আনুমানিক ৮০ হাজার টাকা।

শাহরিয়ার বলেন, ‘গরুগুলোর দাম এত বেশি বলে আমরা মনে করি না। সর্বোচ্চ ৫০ হাজার হতে পারে। আমরা নিলামে ১১ লাখ টাকা চেয়েছিলাম। ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এটা পর্যাপ্ত।’
তবে এ নিয়ে বিজিবির রাজশাহী-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘গুরুগুলো যে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেই ট্রাকে কোনো কাগজপত্র ছিলা না গরুর। ফলে কাস্টমস এবং বিজিবির যৌথ দল গরুগুলো আটক করেছে। পরে কাস্টমস সেগুলো নিলাম করেছে। তারা কীভাবে নিলাম করলো সেটি তারাই ভালো বলতে পারবে।’