ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার পুঠিয়া চারআনি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আক্তার হোসেন খান (৬৩) গত ১৯ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলেও একদিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে তিনি করোনামুক্ত হন।
অর্থাৎ গত ৭ জুলাই দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা তার করোনা নেগেটিভ আসে। কিন্তু করোনা পরবর্তী জটিলতা আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। আগের চেয়ে জটিলতা বেড়ে যায়। দুইদিন পর ৯ জুলাই তিনি মারা যান। করোনায় ফুসফুসে ইনফেকশন হয় এবং তা পুরো ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে গত ২ জুলাই রামেক হাসপাতালে করোনামুক্ত হওয়ার পরও পরবর্তী জটিলতায় মারা যান তার বড়ভাই দেলোয়ার হোসেন (৬৫)।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, চলতি মাসের ১২ দিনে এ হাসপাতালে করোনা পরবর্তী জটিলতায় মারা গেছেন ১২ জন। যাদের মধ্যে শেষ দুইদিনে মারা যান পাঁচজন।
করোনামুক্ত হয়ে পরবর্তী জটিলাতায় মারা যাওয়া সবার বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব। তারা সবাই করোনামুক্ত হলেও ফুসফুসে ইনফেকশনসহ নানা জাটিলতায় ভুগছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন করোনায় মৃত্যুও যে তথ্য দিয়ে থাকি তারা কেবল করোনা পজিটিভ অবস্থায় মারা যাচ্ছে। কিন্তু যারা পোস্ট কভিড বা করোনা-পরবর্তী জটিলতায় মারা যাচ্ছে তাদের আলাদা করে হিসাব রাখা হয়নি। তবে চলতি মাস থেকে সে হিসেবও দেয়া হচ্ছে।’
শামীম ইয়াজদানী আরও বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী জটিলতায় যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই মূলত আগে থেকেই নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত ছিল। ফলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের জটিলতা আরো বেড়ে যায়। বিশেষ করে যাদের নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, অ্যাজমা, ক্যান্সার কিংবা বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা রয়েছে তাদের ঝুকি আরও বেশী।’
এদিকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক দিনে করোনা আক্রান্ত আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় উপসর্গ নিয়ে মারা যান আরও ১১ জন। মঙ্গলবার সকাল ৬টার পর্যন্ত গেল ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এই ১৯ জনের মৃত্যু হয়।
মৃতদের মধ্যে ছয়জনের বাড়ি রাজশাহী জেলায়। বাকিদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুইজন, নাটোরের তিনজন, নওগাঁর তিনজন, পাবনার তিনজন ও সিরাজগঞ্জ জেলার একজন। নতুন মারা যাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১২ জন পুরুষ এবং সাতজন নারী। এদের মধ্যে সাতজনের বয়স ৬১ বছরের ওপরে। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দুইজন।
এদিকে, রাজশাহীতে আরও বেড়েছে করোনাভাইরাস শনাক্তের হার। সোমবার দুইটি ল্যাবে রাজশাহী জেলার ৪৬৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৫৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। যা আগের দিনের চেয়ে ৪ দশমিক ০৬ শতাংশ বেড়ে করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর আগের দিন রোববার ছিল ২৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ।