ঢাকা ০২:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সবুজের সামিয়ানায় ঢাকা রামপাল উপজেলা চত্তর, জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি অর্জন

মো: রেজাউল ইসলাম রামপাল, বাগেরহাট সংবাদদাতা

 

প্রথম দর্শনেই নজর কাড়ে রামপাল উপজেলা পরিষদ চত্তরের ফলজ-বনজ ও ঔষধী গাছের বাগান। দেখলেই মনে হবে কেউ যেনো সবুজের তাবু টানিয়ে রেখেছে। বৃক্ষ-গুলোর সমাহারে নয়নাভিরাম রূপে সেজে উঠেছে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গন। সবুজ হলুদের দৃষ্টিনন্দন রূপ সহজেই আকৃষ্ট করে পথচারীদের। স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে জাতীয় পর্যায়ে স্থানীয় সরকারে শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার অর্জন করেছে।
কাজের শুরুটা হয়েছিলো ২০১৭ সালে। সমূদ্র তীরবর্তী উপকূলীয় তীব্র লবনাক্ততা প্রবন রামপালে বৃক্ষরোপনের উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন রামপালের তৎকালীন উপজেলা নিবার্হি কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল। রামপাল উপজেলা পরিষদ চত্তরকে দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়েছিলেন। শুধু বাগানই নয়, উপজেলা পরিষদের সামনের পুকুরের পাড় বাঁধানো, স্থানীয়দের জন্য সেখানে বিনোদনকেন্দ্রের আদলে অবসর কাটানোর ব্যাবস্থা করে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরিয়ে দিয়েছিলেন জরাজীর্ণ রামপাল উপজেলা চত্বরকে। আঁধারের ওলিতে গলিতে আলো জ্বালিয়েছিলেন, তার রোশনাই উদ্ভাসিত করে দিয়েছিল গোটা উপজেলা। টানা কয়েক বছরের কর্মজীবনে বহুদিনের পুরানো ইট-কাঠের ফোকরের জমাট ধূলো ঝেড়ে ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন। নিজ হাতে ধরেই উপজেলা চত্তরকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন তৎকালীন উপজেলা নিবার্হি কর্মকতা । একেকবার প্রাকৃতিক দূর্যোগের সাথে লড়াই করেই মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় উপকূলীয় উপজেলা রামপাল। তারই ক্ষত বুকে নিয়ে নোনা জলের সাথে পাল্লা দিয়ে, লবনাক্ত প্রবন এলাকা সবুজের সামিয়ানায় ঢাকবে একেবারে ভাবাই যায়নি। এও কি সম্ভব ! অসম্ভবকে সম্ভব করার কারিগর পদোন্নতি পেয়ে বদলি হয়ে বর্তমানে মেহেরপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলার দায়িত্ব হাতে পাবার পর থেকেই বর্তমান নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ কবীর হোসেন সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। প্রশাসনিক কাজের বাইরে প্রকৃতিপ্রেমিক নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ কবীর হোসেন সেই কর্মপরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বহু দূর। তদারকির সাথে সাথে নিজে লাগিয়েছেন আরো বৃক্ষ। তাতে দৃষ্টিনন্দন রূপ একেবারে পরিপূর্ণতা পেয়েছে। সবুজের ছামিয়ানার সাথে ফুলে সেজে উঠেছে উপজেলা কমপ্লেক্স এর বাহ্যিক আবরণ। আঁকা ছবির মতো সবুজের সেই রূপ পাশের দীঘির জলে প্রতিফলিত হয়ে আকর্ষনকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সবুজায়নের কারিগর সাবেক নির্বাহি কর্মকর্তা ও বর্তমান মেহেরপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তুষার কুমার পাল এর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” খবরটি শোনার পর থেকে আমার অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। এখানে বাগান তৈরী করতে গিয়ে আমাদের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো লবণাক্ততার প্রতিকুল পরিবেশ। আমরা সেটিকে অতিক্রম করতে পেরেছি। আর ভালো কাজ করলে সেটির যে স্বীকৃতি পাওয়া যায় এটি তারই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন সবসময় বলে থাকেন একটি ফলজ, একটি বনজ ও একটি ঔষধী গাছ লাগালে পরিবেশ যেমন ভালো থাকে, মনও ভালো থাকে, সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আমাদের সবাই মিলে অন্তত একটি ফলজ বনজ ও ঔষধী গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষায় নজর দিতে হবে”। রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কবীর হোসেন জানান, “এটি অসাধারন একটি ব্যাপার। বালুময় লবণাক্ত ধূসর পরিবেশে এরকম বনজ ফলজ ও ঔষধী গাছ লাগিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে সবুুজায়ন করাটা তুষার স্যারের অনন্য অবদান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা বাংলাদেশের ৩০ টি প্রতিষ্ঠানকে পুরষ্কার দিয়েছেন। তার মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে রামপাল উপজেলা পুরষ্কার পাচ্ছে। এটি আমাদের জন্য বড় একটি অর্জন। উপজেলা প্রশাসন এই ধারা অব্যাহত রাখবে”। কালের স্রোতে একদিন রং ক্ষয়ে গিয়ে ধূসর হবে উপজেলার সব দালানকোঠা। জৌলুস হারাবে ঝা চকচকে উপজেলা ভবণ। তবে সবকিছু বিলীন হলেও, গাছ পরম বন্ধুর মতো সর্বক্ষন পাশে থেকে জীবনদায়ী অক্সিজেনের যোগান দেবে, ছায়া দেবে। দৃষ্টিনন্দন উপজেলা পরিষদের চত্তর বারবার পথচারীদের সেই বার্তা দিয়ে যাচ্ছে।
মো: রেজাউল ইসলাম

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

সবুজের সামিয়ানায় ঢাকা রামপাল উপজেলা চত্তর, জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি অর্জন

আপডেট টাইম : ১২:২০:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১

মো: রেজাউল ইসলাম রামপাল, বাগেরহাট সংবাদদাতা

 

প্রথম দর্শনেই নজর কাড়ে রামপাল উপজেলা পরিষদ চত্তরের ফলজ-বনজ ও ঔষধী গাছের বাগান। দেখলেই মনে হবে কেউ যেনো সবুজের তাবু টানিয়ে রেখেছে। বৃক্ষ-গুলোর সমাহারে নয়নাভিরাম রূপে সেজে উঠেছে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গন। সবুজ হলুদের দৃষ্টিনন্দন রূপ সহজেই আকৃষ্ট করে পথচারীদের। স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে জাতীয় পর্যায়ে স্থানীয় সরকারে শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার অর্জন করেছে।
কাজের শুরুটা হয়েছিলো ২০১৭ সালে। সমূদ্র তীরবর্তী উপকূলীয় তীব্র লবনাক্ততা প্রবন রামপালে বৃক্ষরোপনের উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন রামপালের তৎকালীন উপজেলা নিবার্হি কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল। রামপাল উপজেলা পরিষদ চত্তরকে দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়েছিলেন। শুধু বাগানই নয়, উপজেলা পরিষদের সামনের পুকুরের পাড় বাঁধানো, স্থানীয়দের জন্য সেখানে বিনোদনকেন্দ্রের আদলে অবসর কাটানোর ব্যাবস্থা করে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরিয়ে দিয়েছিলেন জরাজীর্ণ রামপাল উপজেলা চত্বরকে। আঁধারের ওলিতে গলিতে আলো জ্বালিয়েছিলেন, তার রোশনাই উদ্ভাসিত করে দিয়েছিল গোটা উপজেলা। টানা কয়েক বছরের কর্মজীবনে বহুদিনের পুরানো ইট-কাঠের ফোকরের জমাট ধূলো ঝেড়ে ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন। নিজ হাতে ধরেই উপজেলা চত্তরকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন তৎকালীন উপজেলা নিবার্হি কর্মকতা । একেকবার প্রাকৃতিক দূর্যোগের সাথে লড়াই করেই মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় উপকূলীয় উপজেলা রামপাল। তারই ক্ষত বুকে নিয়ে নোনা জলের সাথে পাল্লা দিয়ে, লবনাক্ত প্রবন এলাকা সবুজের সামিয়ানায় ঢাকবে একেবারে ভাবাই যায়নি। এও কি সম্ভব ! অসম্ভবকে সম্ভব করার কারিগর পদোন্নতি পেয়ে বদলি হয়ে বর্তমানে মেহেরপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলার দায়িত্ব হাতে পাবার পর থেকেই বর্তমান নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ কবীর হোসেন সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। প্রশাসনিক কাজের বাইরে প্রকৃতিপ্রেমিক নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ কবীর হোসেন সেই কর্মপরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বহু দূর। তদারকির সাথে সাথে নিজে লাগিয়েছেন আরো বৃক্ষ। তাতে দৃষ্টিনন্দন রূপ একেবারে পরিপূর্ণতা পেয়েছে। সবুজের ছামিয়ানার সাথে ফুলে সেজে উঠেছে উপজেলা কমপ্লেক্স এর বাহ্যিক আবরণ। আঁকা ছবির মতো সবুজের সেই রূপ পাশের দীঘির জলে প্রতিফলিত হয়ে আকর্ষনকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সবুজায়নের কারিগর সাবেক নির্বাহি কর্মকর্তা ও বর্তমান মেহেরপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তুষার কুমার পাল এর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ” খবরটি শোনার পর থেকে আমার অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। এখানে বাগান তৈরী করতে গিয়ে আমাদের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো লবণাক্ততার প্রতিকুল পরিবেশ। আমরা সেটিকে অতিক্রম করতে পেরেছি। আর ভালো কাজ করলে সেটির যে স্বীকৃতি পাওয়া যায় এটি তারই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন সবসময় বলে থাকেন একটি ফলজ, একটি বনজ ও একটি ঔষধী গাছ লাগালে পরিবেশ যেমন ভালো থাকে, মনও ভালো থাকে, সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আমাদের সবাই মিলে অন্তত একটি ফলজ বনজ ও ঔষধী গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষায় নজর দিতে হবে”। রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কবীর হোসেন জানান, “এটি অসাধারন একটি ব্যাপার। বালুময় লবণাক্ত ধূসর পরিবেশে এরকম বনজ ফলজ ও ঔষধী গাছ লাগিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে সবুুজায়ন করাটা তুষার স্যারের অনন্য অবদান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা বাংলাদেশের ৩০ টি প্রতিষ্ঠানকে পুরষ্কার দিয়েছেন। তার মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে রামপাল উপজেলা পুরষ্কার পাচ্ছে। এটি আমাদের জন্য বড় একটি অর্জন। উপজেলা প্রশাসন এই ধারা অব্যাহত রাখবে”। কালের স্রোতে একদিন রং ক্ষয়ে গিয়ে ধূসর হবে উপজেলার সব দালানকোঠা। জৌলুস হারাবে ঝা চকচকে উপজেলা ভবণ। তবে সবকিছু বিলীন হলেও, গাছ পরম বন্ধুর মতো সর্বক্ষন পাশে থেকে জীবনদায়ী অক্সিজেনের যোগান দেবে, ছায়া দেবে। দৃষ্টিনন্দন উপজেলা পরিষদের চত্তর বারবার পথচারীদের সেই বার্তা দিয়ে যাচ্ছে।
মো: রেজাউল ইসলাম