ঢাকা ০২:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজশাহী হাসপাতালের আইসিইউ এখন সোনার হরিণ

ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো :

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে দিন দিন রোগী বাড়ছে, তেমনি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) বাড়ছে শয্যার চাহিদা। বর্তমানে রামেক হসপাতালে আইসিইউতে ১৮টি শয্যার হলেও রোগী আছে ১৭ জন। একটি শয্যা সব সময় ভিআইপিদের জন্য ফাঁকা থাকে। কিন্তু ১৭টি শয্যায় পূরণ থাকায় সিরিয়ালে আছে আরও অন্তত অর্ধশত রোগী। শয্যা নতুন করে ফাঁকা না হওয়ায় এসব রোগীদের আইসিইউতে নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের শয্যায় বা মেঝেতে পড়ে থেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও অর্ধশত রোগী। যাদের শরীরে অক্সিজেন সঙ্কট তীব্র, উচ্চ রত্তচাপ, শাস্বকষ্টসহ করোনা অন্যান্য জটিল রোগে ভূগছেন। রোগীকে আইসিইউতে নিতে স্বজনরা যেন ছুটো ছুটি করছেন হাসপাতালজুড়ে। যার যেমন ক্ষমতাবান লোক আছেন, তাদেরকেও অনুনয়-বিনয় করছেন তাঁর রোগীর জন্য একটি আইসিইউ শয্যা পেতে। কিন্তু শয্যা ফাঁকা না হওয়ায় রামেক হাসপাতালের আইসিইউ যেন রোগীর স্বজনদের কাছে সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।

এদিকে হাসপাতাল সূত্র মতে, রামেক হাসপাতালে মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস জানান, মৃত আটজনের মধ্যে চারজনের করোনা পজিটিভ ছিল। অন্য চারজন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে। করোনা পজিটিভ মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি রাজশাহী। আর একজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

এছাড়া উপসর্গ নিয়ে রাজশাহীর আরও দুইজন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুইজন মারা গেছেন। বুধবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ২২৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এছাড়াও বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে নতুন ৩৫ জন করোনা রোগী।
হাসপাতাল সূত্র মতে, রামেক হাসপাতালে গতকাল সকাল পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন ১ হাজার ১৮২ জন রোগী। যাদের মধ্যে ্য ২৭৭ জন রোগী করোনা ও উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন। যা এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১৭টিতেই রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর বাইরে আইসিইউ’র শয্যায় নিতে হবে এমন রোগীর জন্য সিরিয়ালে দেওয়া ছিল আরও প্রায় অর্ধশত।

হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসাধীন জিয়ারুল ইসলাম নামের এক রোগী স্বজন আলমগীর হোসেন জানান, তাঁর রোগী করোনা আক্রান্ত হয়ে ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে উচ্চ ডায়েবেটিস, রক্তচাপ এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে। শরীরে অক্সিজেন সঙ্কটও চরম আকার ধারণ করেছে। এই অবস্থায় ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা রোগীকে আইসিইউতে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী আইসিইউতে সিরিয়ালও দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার সকালে। সিরিয়াল নম্বর হয়েছে ৩৬। কিন্তু বুধবার দুপুর পর্যন্ত ওই রোগীকে আইসিইউতে নেওয়া সম্বভ হয়নি শয্যা ফাঁকা না হওয়ায়।

আলমগীর হোসেন বলেন, ‘একটি বেড পেতে দুইদিন ধরে নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করে যাচ্ছি। কিন্তু বেড ফাঁকা না থাকায় সেটি পাচ্ছি না। আইসিইউ’র ভিতরে থাকা কোনো রোগী মারা গেলে বা কিছুটা সুস্থ হলেই বেড ফাঁকা হচ্ছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও আমাদের আগেই সিরিয়াল জমে আছে ত্রিশের ওপরে। তাহলে আমাদের রোগীকে কখন নেওয়া হবে আইসিইউতে। দেখা যাবে আইসিইউতে নেওয়ার আগেই রোগী মারা গেছে।’

৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে মারা যাওয়া রোগীর স্বজন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার রোগীকেও আইসিইউতে নিতে বলেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু চারদিন ঘুরেও আইসিউ বেড পাইনি। এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাতে রোগী মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে।’

এদিকে রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, হাসপাতালের করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউতে ১৮টি শয্যা আছে। এর মধ্যে একটি আছে ভিআইপিদের জন্য। আরও দুটি শয্যা স্থাপনের জন্য কাজ চলছে। তবে ১৭টিতেই গত অন্তত এক মাস ধরে রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। একটি ফাঁকা হলেই পরের সিরিয়ালে থাকা রোগীকে নেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ রোগীকেই একেবারে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।’

হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, রামেক হাসপাতালের ৫৭ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০ টি ওয়ার্ডে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

রাজশাহী হাসপাতালের আইসিইউ এখন সোনার হরিণ

আপডেট টাইম : ১২:১০:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১

ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো :

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে দিন দিন রোগী বাড়ছে, তেমনি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) বাড়ছে শয্যার চাহিদা। বর্তমানে রামেক হসপাতালে আইসিইউতে ১৮টি শয্যার হলেও রোগী আছে ১৭ জন। একটি শয্যা সব সময় ভিআইপিদের জন্য ফাঁকা থাকে। কিন্তু ১৭টি শয্যায় পূরণ থাকায় সিরিয়ালে আছে আরও অন্তত অর্ধশত রোগী। শয্যা নতুন করে ফাঁকা না হওয়ায় এসব রোগীদের আইসিইউতে নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের শয্যায় বা মেঝেতে পড়ে থেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও অর্ধশত রোগী। যাদের শরীরে অক্সিজেন সঙ্কট তীব্র, উচ্চ রত্তচাপ, শাস্বকষ্টসহ করোনা অন্যান্য জটিল রোগে ভূগছেন। রোগীকে আইসিইউতে নিতে স্বজনরা যেন ছুটো ছুটি করছেন হাসপাতালজুড়ে। যার যেমন ক্ষমতাবান লোক আছেন, তাদেরকেও অনুনয়-বিনয় করছেন তাঁর রোগীর জন্য একটি আইসিইউ শয্যা পেতে। কিন্তু শয্যা ফাঁকা না হওয়ায় রামেক হাসপাতালের আইসিইউ যেন রোগীর স্বজনদের কাছে সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।

এদিকে হাসপাতাল সূত্র মতে, রামেক হাসপাতালে মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস জানান, মৃত আটজনের মধ্যে চারজনের করোনা পজিটিভ ছিল। অন্য চারজন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে। করোনা পজিটিভ মারা যাওয়া চারজনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি রাজশাহী। আর একজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

এছাড়া উপসর্গ নিয়ে রাজশাহীর আরও দুইজন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুইজন মারা গেছেন। বুধবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ২২৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এছাড়াও বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে নতুন ৩৫ জন করোনা রোগী।
হাসপাতাল সূত্র মতে, রামেক হাসপাতালে গতকাল সকাল পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন ১ হাজার ১৮২ জন রোগী। যাদের মধ্যে ্য ২৭৭ জন রোগী করোনা ও উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন। যা এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১৭টিতেই রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর বাইরে আইসিইউ’র শয্যায় নিতে হবে এমন রোগীর জন্য সিরিয়ালে দেওয়া ছিল আরও প্রায় অর্ধশত।

হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসাধীন জিয়ারুল ইসলাম নামের এক রোগী স্বজন আলমগীর হোসেন জানান, তাঁর রোগী করোনা আক্রান্ত হয়ে ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে উচ্চ ডায়েবেটিস, রক্তচাপ এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে। শরীরে অক্সিজেন সঙ্কটও চরম আকার ধারণ করেছে। এই অবস্থায় ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা রোগীকে আইসিইউতে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী আইসিইউতে সিরিয়ালও দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার সকালে। সিরিয়াল নম্বর হয়েছে ৩৬। কিন্তু বুধবার দুপুর পর্যন্ত ওই রোগীকে আইসিইউতে নেওয়া সম্বভ হয়নি শয্যা ফাঁকা না হওয়ায়।

আলমগীর হোসেন বলেন, ‘একটি বেড পেতে দুইদিন ধরে নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করে যাচ্ছি। কিন্তু বেড ফাঁকা না থাকায় সেটি পাচ্ছি না। আইসিইউ’র ভিতরে থাকা কোনো রোগী মারা গেলে বা কিছুটা সুস্থ হলেই বেড ফাঁকা হচ্ছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও আমাদের আগেই সিরিয়াল জমে আছে ত্রিশের ওপরে। তাহলে আমাদের রোগীকে কখন নেওয়া হবে আইসিইউতে। দেখা যাবে আইসিইউতে নেওয়ার আগেই রোগী মারা গেছে।’

৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে মারা যাওয়া রোগীর স্বজন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার রোগীকেও আইসিইউতে নিতে বলেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু চারদিন ঘুরেও আইসিউ বেড পাইনি। এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাতে রোগী মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে।’

এদিকে রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, হাসপাতালের করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউতে ১৮টি শয্যা আছে। এর মধ্যে একটি আছে ভিআইপিদের জন্য। আরও দুটি শয্যা স্থাপনের জন্য কাজ চলছে। তবে ১৭টিতেই গত অন্তত এক মাস ধরে রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। একটি ফাঁকা হলেই পরের সিরিয়ালে থাকা রোগীকে নেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ রোগীকেই একেবারে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।’

হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, রামেক হাসপাতালের ৫৭ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০ টি ওয়ার্ডে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।