ঢাকা ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা নিপীড়ন: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস

ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :   রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আরেকটি প্রস্তাব পাশ করেছে জাতিসংঘ।গতকাল শুক্রবার সাধারণ পরিষদের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটিতে (থার্ড কমিটি) ১৪২-২৬ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। ভোট দানে বিরত ছিল ২৬টি দেশ। এতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার পথ তৈরিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

চীন ও রাশিয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের প্রতিবেশী কম্বোডিয়া ও লাওস প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়।

মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসির পক্ষে বাংলাদেশ ও ইউরোপের জোট ইইউর পক্ষে অস্ট্রিয়া যৌথভাবে এই প্রস্তাবটি তুলেছিল।

প্রস্তাবের পক্ষে ওআইসির তরফে বক্তব্যে জাতিসংঘ তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি ফরিদুন সিনিরলিগ্লু বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নানা কৌশলে নির্যাতিত হয়ে আসছে। ২০১৭ সালে তাদের ওপর অভিযান ছিল ওই কৌশলেরই একটি ধাপ।

সবাই মিলে সমন্বিত একটি কৌশল প্রণয়ন করতে না পারলে এই সঙ্কটের সমাধান অসম্ভব বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

ওআইসি মনে করে, রোহিঙ্গাদের তাদের অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে, আর তাদের ওপর নিপীড়নকারীদের শাস্তি না হলেও এটা অসম্ভব, বললেন তুরস্কের প্রতিনিধি।

মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি হাউ দো সুয়ান আলোচনায় বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও একপেশে এই প্রস্তাব পাস হলে রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় মিয়ানমার সরকারের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে।

আলোচনায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের স্বার্থে এই প্রস্তাব পাস করতে সবাইকে আহ্বান জানান।

গত বছরের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনের মুখে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও কয়েক দশক ধরে চার লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে ছিল।

পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গাদের মুখে মিয়ানমারের সৈন্যদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠে আসে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা সদস্যরা মিয়ানমারের আশ্বাসের প্রতি কোনোভাবেই আস্থা রাখতে পারেননি এবং একটি পরিবারও মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে সম্মত হয়নি।

তারা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, নাগরিকত্বের পূর্ণ নিশ্চয়তা, নিজভূমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান, সহিংসতা থেকে সুরক্ষা ও সহিংসতার বিচার করা এবং ন্যায় বিচার প্রাপ্তির পূর্ণ নিশ্চয়তা ব্যতীত মিয়ানমারে ফিরে যাবে না।

তিনি বলেন, তাই রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির নিশ্চয়তা বিধানে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে অবশ্যই মিয়ানমারে বাধাহীন প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে।

আলোচনার পর প্রস্তাবটি ভোটাভুটিতে যায় এবং তা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাস হয়। থার্ড কমিটিতে গৃহীত এই প্রস্তাব আগামী ডিসেম্বরে সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে তোলা হবে।

গত বছর সাধারণ পরিষদ গৃহীত রেজুলেশন অনুযায়ী মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। পাশাপাশি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আওতায় মিয়ানমার সংক্রান্ত স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ২০১১ সাল থেকে মিয়ানমারের রাখাইন, কাচিন ও সান প্রদেশে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাবলীর বিবিধ প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট প্রকাশ করে। স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চেয়ারপারসন মারজুকি দারুসমান এ রিপোর্টের ওপর সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জোরালো সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরেন।

এ বছরের এই রেজুলেশন মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধির নিয়োগ আরো এক বছরের জন্য বর্ধিত করাসহ তাঁর কাজকে আরো বেগবান করার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এতে রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমার সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্যতম কার্যকলাপের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার বিষয়টি জোরালোভাবে আনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা এবং সে উদ্দেশে রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের যথাযথভাবে প্রত্যাবাসনবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে রেজুলেশনে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ হতে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বানও জানানো হয়েছে রেজুলেশনটিতে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

রোহিঙ্গা নিপীড়ন: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস

আপডেট টাইম : ০৬:০৫:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :   রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আরেকটি প্রস্তাব পাশ করেছে জাতিসংঘ।গতকাল শুক্রবার সাধারণ পরিষদের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটিতে (থার্ড কমিটি) ১৪২-২৬ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। ভোট দানে বিরত ছিল ২৬টি দেশ। এতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার পথ তৈরিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

চীন ও রাশিয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের প্রতিবেশী কম্বোডিয়া ও লাওস প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়।

মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসির পক্ষে বাংলাদেশ ও ইউরোপের জোট ইইউর পক্ষে অস্ট্রিয়া যৌথভাবে এই প্রস্তাবটি তুলেছিল।

প্রস্তাবের পক্ষে ওআইসির তরফে বক্তব্যে জাতিসংঘ তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি ফরিদুন সিনিরলিগ্লু বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নানা কৌশলে নির্যাতিত হয়ে আসছে। ২০১৭ সালে তাদের ওপর অভিযান ছিল ওই কৌশলেরই একটি ধাপ।

সবাই মিলে সমন্বিত একটি কৌশল প্রণয়ন করতে না পারলে এই সঙ্কটের সমাধান অসম্ভব বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

ওআইসি মনে করে, রোহিঙ্গাদের তাদের অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে, আর তাদের ওপর নিপীড়নকারীদের শাস্তি না হলেও এটা অসম্ভব, বললেন তুরস্কের প্রতিনিধি।

মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি হাউ দো সুয়ান আলোচনায় বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও একপেশে এই প্রস্তাব পাস হলে রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় মিয়ানমার সরকারের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে।

আলোচনায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের স্বার্থে এই প্রস্তাব পাস করতে সবাইকে আহ্বান জানান।

গত বছরের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনের মুখে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও কয়েক দশক ধরে চার লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে ছিল।

পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গাদের মুখে মিয়ানমারের সৈন্যদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠে আসে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা সদস্যরা মিয়ানমারের আশ্বাসের প্রতি কোনোভাবেই আস্থা রাখতে পারেননি এবং একটি পরিবারও মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে সম্মত হয়নি।

তারা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, নাগরিকত্বের পূর্ণ নিশ্চয়তা, নিজভূমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান, সহিংসতা থেকে সুরক্ষা ও সহিংসতার বিচার করা এবং ন্যায় বিচার প্রাপ্তির পূর্ণ নিশ্চয়তা ব্যতীত মিয়ানমারে ফিরে যাবে না।

তিনি বলেন, তাই রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির নিশ্চয়তা বিধানে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে অবশ্যই মিয়ানমারে বাধাহীন প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে।

আলোচনার পর প্রস্তাবটি ভোটাভুটিতে যায় এবং তা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাস হয়। থার্ড কমিটিতে গৃহীত এই প্রস্তাব আগামী ডিসেম্বরে সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে তোলা হবে।

গত বছর সাধারণ পরিষদ গৃহীত রেজুলেশন অনুযায়ী মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। পাশাপাশি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আওতায় মিয়ানমার সংক্রান্ত স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ২০১১ সাল থেকে মিয়ানমারের রাখাইন, কাচিন ও সান প্রদেশে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাবলীর বিবিধ প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট প্রকাশ করে। স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চেয়ারপারসন মারজুকি দারুসমান এ রিপোর্টের ওপর সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জোরালো সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরেন।

এ বছরের এই রেজুলেশন মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধির নিয়োগ আরো এক বছরের জন্য বর্ধিত করাসহ তাঁর কাজকে আরো বেগবান করার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এতে রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমার সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্যতম কার্যকলাপের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার বিষয়টি জোরালোভাবে আনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা এবং সে উদ্দেশে রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের যথাযথভাবে প্রত্যাবাসনবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে রেজুলেশনে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ হতে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বানও জানানো হয়েছে রেজুলেশনটিতে।