পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত ও অনুসন্ধানে আইনের সংশোধন চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এজন্য ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯’ এ থাকা ‘শৃঙ্খলা বাহিনী’র সংজ্ঞা থেকে পুলিশ বাহিনীকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করতে ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯’ এর সংশোধন প্রস্তাবের উপর মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে মতবিনিময় সভা হয়। সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এই প্রস্তাব এনেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ‘আইনি গবেষণার মাধ্যমে তারতম্যমূলক আইন ও নীতি চিহ্নিতকরণপূর্বক উহা সংস্কার শীর্ষক প্রকল্পের’ উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইনের বিভিন্ন বিধান সংশোধনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
চেয়ারম্যানের সংশোধন প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- ‘শৃঙ্খলা বাহিনী’র সংজ্ঞা থেকে পুলিশ বাহিনীকে বাদ দেয়া, যাতে মানবাধিকার কমিশন সাধারণ নিয়মে পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত ও অনুসন্ধান করতে পারে।
অন্যান্য সংশোধন প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য একজনের পরিবর্তে তিনজন করা। কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মেয়াদ তিন বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর করা। কমিশনের অবৈতনিক সদস্যরা আর্থিক সুবিধা ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের মর্যাদা প্রদান।
কমিশন কর্তৃক ক্ষতিপূরণ দেয়ার ক্ষমতা; কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন, ভাতা, চাকরির সুবিধাদি সরকারি কর্মচারীদের মতো করার প্রস্তাব; কমিশনের ‘সচিব’ পদনামের পরিবর্তে ‘মহাপরিচালক’ পদনাম করার প্রস্তাব এবং কমিশনের তহবিল সংক্রান্ত বিধান বাতিলের প্রস্তাব করেন নাছিমা বেগম।
এসব সংশোধন প্রস্তাবের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মানবাধিকার কমিশনকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালীকরণের জন্য আনা প্রস্তাবগুলো সময়োপযোগী। তবে কতিপয় প্রস্তাব, বিশেষ করে ‘শৃঙ্খলা বাহিনী’র সংজ্ঞা থেকে পুলিশ বাহিনীকে বাদ দেয়া, কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য এক জনের পরিবর্তে তিনজন করার প্রস্তাব; চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মেয়াদ তিন বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর করার প্রস্তাব; অবৈতনিক সদস্যদের আর্থিক সুবিধা ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের মর্যাদা দেয়ার প্রস্তাব; কমিশনের ক্ষতিপূরণ প্রদানের ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাবের সঙ্গে সরকারের নীতি-নির্ধারণী বিষয় জড়িত।’
সভায় কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, ভাতা, চাকরির অন্যান্য সুবিধা সংক্রান্ত সংশোধনী প্রস্তাব যাচাই-বাছায়ের জন্য লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবির, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক ও অবৈতনিক সদস্য, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।