ঢাকা ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্র কানাডায় ফাইজারের টিকার প্রয়োগ শুরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার প্রয়োগ গতকাল সোমবার শুরু হয়েছে। নিউ ইয়র্কের নার্স স্যান্ড্রা লিন্ডসেকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে এই কর্মসূচি শুরু হয়। একই দিন কানাডায়ও এই টিকার প্রয়োগ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রে গত শুক্রবার রাতে ফাইজারের টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয় মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)।

এর আগে যুক্তরাজ্য, বাহরাইন, কানাডা, সৌদি আরব, কুয়েত ও মেক্সিকোতে ওই টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পায়। এদিকে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সিঙ্গাপুর গতকাল ফাইজারের টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।আমাদের নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম টিকা গ্রহণকারী স্যান্ড্রা লিন্ডসে লং আইল্যান্ড জুইশ মেডিক্যাল সেন্টারের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের একজন কর্মী। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তাঁকে টিকা দেওয়া হয়। করোনা মহামারির কঠিন সময়ে দৃঢ়তার সঙ্গে সামনে থেকে লড়াই করেছেন এই কৃষ্ণাঙ্গ নারী। তাঁকে টিকা দেন হাসপাতালটির কর্মচারী স্বাস্থ্যসেবার করপোরেট পরিচালক ডা. মিশেল চেস্টার। টিকা দেওয়ার কার্যক্রম সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।

লিন্ডসে বলেন, ‘এই টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে আলাদা কোনো অনুভূতি তৈরি হয়নি। আমি খুবই অভিভূত। আমি প্রশান্তি পেয়েছি।’ সরাসরি সম্প্রচারের সময় নিউ ইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু কুয়োমো যুক্ত ছিলেন। গভর্নর আশা প্রকাশ করেন, ‘ভয়াবহ এই মহামারিকে হয়তো এবার পরাজিত করা সম্ভব হবে।’এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেন, ‘টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। অভিনন্দন যুক্তরাষ্ট্র! অভিনন্দন বিশ্ব!’

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ডিসেম্বরের মধ্যেই ৬৪ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে ফাইজার। করোনা প্রতিরোধে একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই টিকার দুই ডোজ গ্রহণ করতে হবে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশটির দুই কোটি ১০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে কেয়ার হোমে থাকা তিন কোটি বয়োজ্যেষ্ঠকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)।

এদিকে আগামী ১৭ ডিসেম্বর মার্কিন জৈবপ্রযুক্তি কম্পানি মডার্নার টিকার অনুমোদনের আবেদন পর্যালোচনা করবে এফডিএ। এই টিকাটিও অল্প সময়ের মধ্যে জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।কানাডায়ও গতকাল সোমবার ফাইজারের টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এর আগে রবিবার রাতে টিকার প্রথম চালান দেশটিতে পৌঁছে। ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকা বেলজিয়ামে উৎপাদন করা হচ্ছে। সেখান থেকে গত শুক্রবার টিকার চালানের যাত্রা শুরু হয়। জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র হয়ে টিকার চালান কানাডায় আসে। প্রাথমিকভাবে কানাডার ১৪টি স্থানে ৩০ হাজার ডোজ করোনার টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে। শুরুতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে এই টিকা দেওয়া হবে।

গত বুধবার ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হেলথ কানাডা। তারা জানায়, টিকাটি নিরাপদ, কার্যকর ও ভালো মানের বলে প্রমাণ পাওয়ায় তা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কানাডা সরকার এরই মধ্যে এই টিকার দুই কোটি ডোজের ক্রয়াদেশ দিয়ে রেখেছে। প্রয়োজনে তারা আরো টিকা কিনবে।

সিঙ্গাপুরে ফাইজারের টিকার অনুমোদন

এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে গতকাল ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকা অনুমোদন করেছে সিঙ্গাপুর। চলতি মাসের শেষে টিকা দেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং। তিনি জানান, এই টিকার প্রথম চালান সিঙ্গাপুরে পৌঁছতে পারে এ মাসের শেষের দিকে। আর ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের মধ্যেই সিঙ্গাপুরে প্রত্যেকের জন্য পর্যাপ্ত টিকা পেয়ে যাওয়ার আশা আছে। সিঙ্গাপুরের সব নাগরিক এবং সেখানে দীর্ঘ সময় বসবাসকারীদের বিনা মূল্যে এই টিকা দেওয়া হবে।

লি আরো জানান, প্রথম দিকে যাঁরা এই টিকা নেবেন তাঁদের মধ্যে থাকবেন তিনি নিজে এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারাও।

ট্রায়ালের শেষ ধাপে কিউরভ্যাক

জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কম্পানি কিউরভ্যাক সোমবার জানিয়েছে, তাদের করোনার টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু হয়েছে। ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকায় ৩৫ হাজার মানুষের ওপর এই ধাপের পরীক্ষা চালানো হবে।

গত সেপ্টেম্বরের শেষে পেরু ও পানামায় দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু করে কিউরভ্যাক। ৬৯০ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর চালানো এই পরীক্ষার ফল শিগগিরই প্রকাশিত হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

যুক্তরাষ্ট্র কানাডায় ফাইজারের টিকার প্রয়োগ শুরু

আপডেট টাইম : ০৬:৪৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার প্রয়োগ গতকাল সোমবার শুরু হয়েছে। নিউ ইয়র্কের নার্স স্যান্ড্রা লিন্ডসেকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে এই কর্মসূচি শুরু হয়। একই দিন কানাডায়ও এই টিকার প্রয়োগ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রে গত শুক্রবার রাতে ফাইজারের টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয় মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)।

এর আগে যুক্তরাজ্য, বাহরাইন, কানাডা, সৌদি আরব, কুয়েত ও মেক্সিকোতে ওই টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পায়। এদিকে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সিঙ্গাপুর গতকাল ফাইজারের টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।আমাদের নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম টিকা গ্রহণকারী স্যান্ড্রা লিন্ডসে লং আইল্যান্ড জুইশ মেডিক্যাল সেন্টারের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের একজন কর্মী। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তাঁকে টিকা দেওয়া হয়। করোনা মহামারির কঠিন সময়ে দৃঢ়তার সঙ্গে সামনে থেকে লড়াই করেছেন এই কৃষ্ণাঙ্গ নারী। তাঁকে টিকা দেন হাসপাতালটির কর্মচারী স্বাস্থ্যসেবার করপোরেট পরিচালক ডা. মিশেল চেস্টার। টিকা দেওয়ার কার্যক্রম সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।

লিন্ডসে বলেন, ‘এই টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে আলাদা কোনো অনুভূতি তৈরি হয়নি। আমি খুবই অভিভূত। আমি প্রশান্তি পেয়েছি।’ সরাসরি সম্প্রচারের সময় নিউ ইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু কুয়োমো যুক্ত ছিলেন। গভর্নর আশা প্রকাশ করেন, ‘ভয়াবহ এই মহামারিকে হয়তো এবার পরাজিত করা সম্ভব হবে।’এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেন, ‘টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। অভিনন্দন যুক্তরাষ্ট্র! অভিনন্দন বিশ্ব!’

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ডিসেম্বরের মধ্যেই ৬৪ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে ফাইজার। করোনা প্রতিরোধে একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই টিকার দুই ডোজ গ্রহণ করতে হবে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশটির দুই কোটি ১০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে কেয়ার হোমে থাকা তিন কোটি বয়োজ্যেষ্ঠকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)।

এদিকে আগামী ১৭ ডিসেম্বর মার্কিন জৈবপ্রযুক্তি কম্পানি মডার্নার টিকার অনুমোদনের আবেদন পর্যালোচনা করবে এফডিএ। এই টিকাটিও অল্প সময়ের মধ্যে জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।কানাডায়ও গতকাল সোমবার ফাইজারের টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এর আগে রবিবার রাতে টিকার প্রথম চালান দেশটিতে পৌঁছে। ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকা বেলজিয়ামে উৎপাদন করা হচ্ছে। সেখান থেকে গত শুক্রবার টিকার চালানের যাত্রা শুরু হয়। জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র হয়ে টিকার চালান কানাডায় আসে। প্রাথমিকভাবে কানাডার ১৪টি স্থানে ৩০ হাজার ডোজ করোনার টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে। শুরুতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে এই টিকা দেওয়া হবে।

গত বুধবার ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হেলথ কানাডা। তারা জানায়, টিকাটি নিরাপদ, কার্যকর ও ভালো মানের বলে প্রমাণ পাওয়ায় তা ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কানাডা সরকার এরই মধ্যে এই টিকার দুই কোটি ডোজের ক্রয়াদেশ দিয়ে রেখেছে। প্রয়োজনে তারা আরো টিকা কিনবে।

সিঙ্গাপুরে ফাইজারের টিকার অনুমোদন

এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে গতকাল ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকা অনুমোদন করেছে সিঙ্গাপুর। চলতি মাসের শেষে টিকা দেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং। তিনি জানান, এই টিকার প্রথম চালান সিঙ্গাপুরে পৌঁছতে পারে এ মাসের শেষের দিকে। আর ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের মধ্যেই সিঙ্গাপুরে প্রত্যেকের জন্য পর্যাপ্ত টিকা পেয়ে যাওয়ার আশা আছে। সিঙ্গাপুরের সব নাগরিক এবং সেখানে দীর্ঘ সময় বসবাসকারীদের বিনা মূল্যে এই টিকা দেওয়া হবে।

লি আরো জানান, প্রথম দিকে যাঁরা এই টিকা নেবেন তাঁদের মধ্যে থাকবেন তিনি নিজে এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারাও।

ট্রায়ালের শেষ ধাপে কিউরভ্যাক

জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কম্পানি কিউরভ্যাক সোমবার জানিয়েছে, তাদের করোনার টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু হয়েছে। ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকায় ৩৫ হাজার মানুষের ওপর এই ধাপের পরীক্ষা চালানো হবে।

গত সেপ্টেম্বরের শেষে পেরু ও পানামায় দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু করে কিউরভ্যাক। ৬৯০ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর চালানো এই পরীক্ষার ফল শিগগিরই প্রকাশিত হবে।