ঢাকা ১০:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পুষ্টি গুণে ভরপুর লটকন

লাইফস্টাইল ডেস্ক :  ফলটি টক-মিষ্টি। আকারে ছোট কিন্তু দেখতে অতি সুন্দর। গোলাকার আকৃতির ফলটি পাকলে হলুদ রঙ ধারণ করে। কাঁচা অবস্থায় সবুজ। ফলের খোসা নরম ও পুরু। এর পুষ্টিগুণও অনেক। আমাদের দেশে জনপ্রিয় ফল লটকন। ছোট-বড় সবারই মন কাঁড়ে এই ফলটি।

আরো পড়ুন :  নিউজিল্যান্ডে ৭.২ মাত্রার ভূমিকম্প

পরিচিতি : ইংরেজি নাম- Burmese grape, বার্মিজ গ্রেপ, বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea motleyana. এই ফলটি আমাদের দেশে বুবি, বুগি, লটকা, লটকো, নটকো ইত্যাদি নামেও পরিচিত। গাছটি দক্ষিণ এশিয়ায় বুনো গাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।

রথযাত্রার সঙ্গে লটকন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। রথযাত্রার দিন ও উল্টো রথের দিন লটকন কেনার প্রচলন আছে। বাংলাদেশের ধামরাই ও টাঙ্গাইল এবং ভারতের কোচবিহার, নবদ্বীপ ইত্যাদি স্থানে রথের দিন লটকন বিক্রি হয়ে থাকে।

বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস : জগৎ- Plantae, শ্রেণীবিহীন- Angiosperms, বর্গ- Malpighiales, পরিবার- Phyllanthaceae, গণ- Baccaurea, প্রজাতি- B. motleyana.

বর্ণনা : লটকন গাছ ৯-১২ মিটার লম্বা হয়, এর কাণ্ড বেটে এবং উপরাংশ ঝোপালো। পুরুষ এবং স্ত্রী গাছ আলাদা হয়ে থাকে। এদের ফুলের ধরনও আলাদা, ফুল হয় হলুদ রঙের, উভয় রকম ফুলই সুগন্ধি। ফলের আকার দুই থেকে পাঁচ সেমি হয়, যা থোকায় থোকায় ধরে। কাঁচা ফল সবুজ এবং পাকলে রঙ হয় হলুদ। ফলে ভেতর ২ থেকে ৫টি বীজ হয়, বীজের গায়ে লাগানো রসালো ভক্ষ্য অংশ থাকে, যা জাতভেদে টক বা টকমিষ্টি স্বাদের। গাছের ছাল থেকে রঙ তৈরি করা হয় যা রেশম সুতা রাঙাতে ব্যবহৃত হয়। ছায়াযুক্ত স্থানে লটকন ভাল জন্মে।

মার্চ মাসের দিকে লটকন গাছে ফুল আসে এবং ফল পরিপক্ব হতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগে। জুন-জুলাই মাসে এই ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। আগস্ট মাসেও লটকন বাজারে পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিকভাবে চাষাবাদ : লটকন একসময় অপ্রচলিত ফলের তালিকায় ছিল। এখন উন্নত জাতের সুমিষ্ট এই ফলের জনপ্রিয়তা বেশ বেড়েছে। ফলটি বাণিজ্যিকভাবেও চাষাবাদ করা হচ্ছে। বেশ লাভবানও হচ্ছে চাষীরা। ফলটির ফলন হয়ে থাকে প্রচুর। গাছের নীচ থেকে ছোট কাণ্ড পর্যন্ত ধোকায় ধোকায় ফল ধরে। বাংলাদেশ থেকে লটকন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনে রয়েছে : ক্যালসিয়াম ৯ গ্রাম, আয়রন ৫.৩৪ মি.গ্রাম, ভিটামিন বি-১ ১০.০৪ মি.গ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.২০ মি.গ্রাম, খাদ্যগুণ ৯২ কিলোক্যালরি, প্রোটিন ১.৪২ গ্রাম, ফ্যাট ০.৪৫ গ্রাম। ভিটামিন সি ১৭৮ মিলিগ্রাম।

পুষ্টিগুণ : লটকনের গুণের কথা আজ অজানা নয়। লটকন একটি পুষ্টিকর ফল। এতে ভিটামিন ও খাদ্যশক্তিসহ নানারকম খনিজ উপাদান রয়েছে। লটকনে আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও এনজাইম যা দেহ গঠন ও কোষকলার সুস্থতায় সহায়তা করে। শরীরকে সুস্থ রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

রুচি বাড়াতে লটকন বেশ উপকারী। লটকনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। দিনে দুই থেকে তিনটি লটকন খেলে শরীরের ভিটামিন সির চাহিদা পূরণ হয়। ভিটামিন সি ত্বক, দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখে। লটকনে যে আয়রন রয়েছে তা রক্ত ও হাড়ের জন্য বিশেষ উপকারী।

খাদ্যশক্তির ভালো উৎস লটকন। দেহ সক্রিয় রাখতে ও দৈনন্দিন কাজ করতে খাদ্যশক্তি প্রয়োজন হয়। আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালের তুলনায় লটকনের খাদ্যশক্তি প্রায় দ্বিগুণ।

লটকন গা গোলানো ও বমি বমিভাব দূর করতে পারে। পাশাপাশি মানসিক অবসাদ দূর করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও গরমে তৃষ্ণা মিটাতে লটকন খাওয়া যায়। কারণ এতে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি।

লটকনের ঔষধি গুণও রয়েছে। এর পাতা ও শিকড় খেলে পেটের নানারকমের অসুখ ও জ্বর ভালো হয়ে যায়। এর বীজ গনোরিয়া রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। ডায়ারিয়া দূর করতে লটকনের পাতার গুঁড়া বেশ ভালো ফল দেয়। লটকন বেশি খেলে অনেক সময় ক্ষুধা মন্দাও দেখা দিতে পারে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

পুষ্টি গুণে ভরপুর লটকন

আপডেট টাইম : ০১:৫৮:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুন ২০১৯

লাইফস্টাইল ডেস্ক :  ফলটি টক-মিষ্টি। আকারে ছোট কিন্তু দেখতে অতি সুন্দর। গোলাকার আকৃতির ফলটি পাকলে হলুদ রঙ ধারণ করে। কাঁচা অবস্থায় সবুজ। ফলের খোসা নরম ও পুরু। এর পুষ্টিগুণও অনেক। আমাদের দেশে জনপ্রিয় ফল লটকন। ছোট-বড় সবারই মন কাঁড়ে এই ফলটি।

আরো পড়ুন :  নিউজিল্যান্ডে ৭.২ মাত্রার ভূমিকম্প

পরিচিতি : ইংরেজি নাম- Burmese grape, বার্মিজ গ্রেপ, বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea motleyana. এই ফলটি আমাদের দেশে বুবি, বুগি, লটকা, লটকো, নটকো ইত্যাদি নামেও পরিচিত। গাছটি দক্ষিণ এশিয়ায় বুনো গাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।

রথযাত্রার সঙ্গে লটকন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। রথযাত্রার দিন ও উল্টো রথের দিন লটকন কেনার প্রচলন আছে। বাংলাদেশের ধামরাই ও টাঙ্গাইল এবং ভারতের কোচবিহার, নবদ্বীপ ইত্যাদি স্থানে রথের দিন লটকন বিক্রি হয়ে থাকে।

বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস : জগৎ- Plantae, শ্রেণীবিহীন- Angiosperms, বর্গ- Malpighiales, পরিবার- Phyllanthaceae, গণ- Baccaurea, প্রজাতি- B. motleyana.

বর্ণনা : লটকন গাছ ৯-১২ মিটার লম্বা হয়, এর কাণ্ড বেটে এবং উপরাংশ ঝোপালো। পুরুষ এবং স্ত্রী গাছ আলাদা হয়ে থাকে। এদের ফুলের ধরনও আলাদা, ফুল হয় হলুদ রঙের, উভয় রকম ফুলই সুগন্ধি। ফলের আকার দুই থেকে পাঁচ সেমি হয়, যা থোকায় থোকায় ধরে। কাঁচা ফল সবুজ এবং পাকলে রঙ হয় হলুদ। ফলে ভেতর ২ থেকে ৫টি বীজ হয়, বীজের গায়ে লাগানো রসালো ভক্ষ্য অংশ থাকে, যা জাতভেদে টক বা টকমিষ্টি স্বাদের। গাছের ছাল থেকে রঙ তৈরি করা হয় যা রেশম সুতা রাঙাতে ব্যবহৃত হয়। ছায়াযুক্ত স্থানে লটকন ভাল জন্মে।

মার্চ মাসের দিকে লটকন গাছে ফুল আসে এবং ফল পরিপক্ব হতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগে। জুন-জুলাই মাসে এই ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। আগস্ট মাসেও লটকন বাজারে পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিকভাবে চাষাবাদ : লটকন একসময় অপ্রচলিত ফলের তালিকায় ছিল। এখন উন্নত জাতের সুমিষ্ট এই ফলের জনপ্রিয়তা বেশ বেড়েছে। ফলটি বাণিজ্যিকভাবেও চাষাবাদ করা হচ্ছে। বেশ লাভবানও হচ্ছে চাষীরা। ফলটির ফলন হয়ে থাকে প্রচুর। গাছের নীচ থেকে ছোট কাণ্ড পর্যন্ত ধোকায় ধোকায় ফল ধরে। বাংলাদেশ থেকে লটকন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনে রয়েছে : ক্যালসিয়াম ৯ গ্রাম, আয়রন ৫.৩৪ মি.গ্রাম, ভিটামিন বি-১ ১০.০৪ মি.গ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.২০ মি.গ্রাম, খাদ্যগুণ ৯২ কিলোক্যালরি, প্রোটিন ১.৪২ গ্রাম, ফ্যাট ০.৪৫ গ্রাম। ভিটামিন সি ১৭৮ মিলিগ্রাম।

পুষ্টিগুণ : লটকনের গুণের কথা আজ অজানা নয়। লটকন একটি পুষ্টিকর ফল। এতে ভিটামিন ও খাদ্যশক্তিসহ নানারকম খনিজ উপাদান রয়েছে। লটকনে আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও এনজাইম যা দেহ গঠন ও কোষকলার সুস্থতায় সহায়তা করে। শরীরকে সুস্থ রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

রুচি বাড়াতে লটকন বেশ উপকারী। লটকনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। দিনে দুই থেকে তিনটি লটকন খেলে শরীরের ভিটামিন সির চাহিদা পূরণ হয়। ভিটামিন সি ত্বক, দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখে। লটকনে যে আয়রন রয়েছে তা রক্ত ও হাড়ের জন্য বিশেষ উপকারী।

খাদ্যশক্তির ভালো উৎস লটকন। দেহ সক্রিয় রাখতে ও দৈনন্দিন কাজ করতে খাদ্যশক্তি প্রয়োজন হয়। আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালের তুলনায় লটকনের খাদ্যশক্তি প্রায় দ্বিগুণ।

লটকন গা গোলানো ও বমি বমিভাব দূর করতে পারে। পাশাপাশি মানসিক অবসাদ দূর করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও গরমে তৃষ্ণা মিটাতে লটকন খাওয়া যায়। কারণ এতে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি।

লটকনের ঔষধি গুণও রয়েছে। এর পাতা ও শিকড় খেলে পেটের নানারকমের অসুখ ও জ্বর ভালো হয়ে যায়। এর বীজ গনোরিয়া রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। ডায়ারিয়া দূর করতে লটকনের পাতার গুঁড়া বেশ ভালো ফল দেয়। লটকন বেশি খেলে অনেক সময় ক্ষুধা মন্দাও দেখা দিতে পারে।