ঢাকা ০২:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শাহজাহান ওমরকে বৈধতা দেওয়া ইসির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত : বদিউল আলম

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : ০৫:০৭:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৬৪ বার পড়া হয়েছে

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘নির্বাচন আসন্ন, কিন্তু তাদের নিয়োগের বৈধতার প্রশ্ন কখনো যাবে না। ভবিষ্যতে ইস্যু হয়ে থাকবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে অনেক বিতর্কিত কাজ করছেন। যেমন— শাহজাহান ওমরের ব্যাপার, তিনি মামলার তথ্য গোপন করেছেন। যে মামলায় তিনি গ্রেপ্তার ও জামিন পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন। সেটিই তিনি গোপন করেছেন। যা চরম বিতর্কিত।’

রোববার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রম, ভোটবিডি ওয়েবসাইট সম্পর্কিত অবহিতকরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সহযোগিতায় দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর পক্ষ থেকে ভোটবিডি ওয়েবসাইট সম্পর্কিত এ অবহিতকরণ সভা আয়োজন করা হয়। সভায় রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সদস্যরাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি তো আসন্ন নির্বাচনকে নির্বাচনই মনে করি না। অ্যাক্ট অব চয়েজ বলে একটা কথা আছে। বিকল্প না থাকলে তো নির্বাচন হয় না। নির্বাচন নির্বাচন খেলা হতে পারে।’

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি তৃষ্ণার্ত, আপনাকে যদি এক গ্লাস ট্যাপের পানি দেওয়া হয় আর আরেক গ্লাস মিনারেল ওয়াটার দেওয়া হয়; আপনি কোনটা নেবেন? আপনি আমাদের দেশের যে ট্যাপের পানি সেটা কি নেবেন? নেবেন না। আবার আপনাকে যদি এক গ্লাস সেদ্ধ পানি ও আরেক গ্লাস মিনারেল ওয়াটার দেওয়া হয়, তাহলে কোনটা নেবেন? আপনার মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা থাকবে। কারণ, দুটো পানিই নিরাপদ। আপনি বলতে পারবেন না তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি মিনারেল পানিই খাবেন। ঠিক নির্বাচন হতে হলে যথার্থ বিকল্প থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনে দুটো প্রধান ব্র্যান্ড। একটা আওয়ামী লীগ ও আরেকটা বিএনপি। বিএনপি তো নেই। যদি না থাকে তাহলে নিশ্চিত করে বলাই যায়— আওয়ামী লীগ চাইলে সবার সঙ্গে জিতবে। কিন্তু তারা আসন ভাগাভাগি করছে কেন? অন্যদের কিছু সিট দেওয়ার জন্য। প্রতিযোগিতা হচ্ছে নিজেদের মধ্যে, নিজেদের অনুগত বা নিজেদের সৃষ্ট নাম সর্বস্ব দলগুলোর সঙ্গে।’

‘একমাত্র বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আসন ভাগাভাগি হয়েছে। জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন— জাতীয় পার্টি দ্বারা মনোনীত ও আওয়ামী লীগ দ্বারা সমর্থিত। তাহলে এটাতে প্রতিযোগিতা হচ্ছে না। এটা ভোটের খেলা, নির্বাচন-নির্বাচন খেলা, যা নির্বাচনী সংজ্ঞায় পড়ে না।’

সুজন সম্পাদক বলেন, ‘গত দুটি যে বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে, যেটার কারণে সরকারের যে লেজিটিমেসি (বৈধতা/ন্যায্যতা) সমস্যা তা আরো ভয়াবহ হবে। সরকার কিন্তু এই লেজিসলেটিভ সমস্যা দূরীভূত করতে পারবে না। বরং আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। কারণ, আমাদের নির্বাচনে কিন্তু আরো অনেকের চোখ আছে। অতীতে কিন্তু এই চোখ ছিল না। এই সমস্যা দূর করার জন্য আমাদের আরো বিদেশি বন্ধুদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে আমাদের সার্বভৌমত্বও ক্ষুণ্ন হতে পারে। বিস্তৃত বলবো না, ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যেতে পারি।’

নির্বাচন কমিশনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়েই প্রশ্ন আছে! হাবিবুল কমিশন নিয়েই আইনি বৈধতার প্রশ্ন আছে। আমাদের সংবিধানে বলা আছে— নির্বাচন কমিশন নিয়োগে একটা আইন হতে হবে। গত ৫২ বছরে সেই আইন হয়নি। আমরা একটা আইনের খসড়া করে আইনমন্ত্রীকে দিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন না, এখন সময় নাই। কিন্তু শেষমেশ জনমতের কারণে ২০২২ সালে একটা আইন করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২। ছোট্ট আইন। মূলত আগে যে প্রজ্ঞাপন ছিল সেটাই রিসাইকেল করে আইন করা হয়েছে। ওখানে দায়মুক্তি বিধান যুক্ত করে আইনটা করা হয়। তাতে বলা হয়েছে— রাজনৈতিক দল আর পেশাজীবী সংগঠন অনুসন্ধান কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করতে পারবে। কিন্তু ৫ ফেব্রুয়ারি যখন অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়েছিল তখন সেটা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। যা আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কারণ, যে কেউ যে কারো নাম প্রস্তাব করতে পারতো। নিজের নামও প্রস্তাব করতে পারতো।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রয়াত জাফরুল্লাহ চৌধুরী বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। এই রকম আরো অনেকে অনেকের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু, আইনগতভাবে তারা কেউই বৈধ নাম প্রস্তাবকারী ছিলেন না। অথচ তাদের নাম প্রস্তাবের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। যারা বৈধ নয়, তাদের প্রস্তাবেই যদি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় তাহলে তাদের বৈধতা নিয়েও তো প্রশ্ন উঠেই। এটা নিয়ে আমি বহু সমস্যার মধ্যে আছি।’

আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

শাহজাহান ওমরকে বৈধতা দেওয়া ইসির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত : বদিউল আলম

আপডেট টাইম : ০৫:০৭:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘নির্বাচন আসন্ন, কিন্তু তাদের নিয়োগের বৈধতার প্রশ্ন কখনো যাবে না। ভবিষ্যতে ইস্যু হয়ে থাকবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে অনেক বিতর্কিত কাজ করছেন। যেমন— শাহজাহান ওমরের ব্যাপার, তিনি মামলার তথ্য গোপন করেছেন। যে মামলায় তিনি গ্রেপ্তার ও জামিন পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন। সেটিই তিনি গোপন করেছেন। যা চরম বিতর্কিত।’

রোববার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রম, ভোটবিডি ওয়েবসাইট সম্পর্কিত অবহিতকরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সহযোগিতায় দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর পক্ষ থেকে ভোটবিডি ওয়েবসাইট সম্পর্কিত এ অবহিতকরণ সভা আয়োজন করা হয়। সভায় রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সদস্যরাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি তো আসন্ন নির্বাচনকে নির্বাচনই মনে করি না। অ্যাক্ট অব চয়েজ বলে একটা কথা আছে। বিকল্প না থাকলে তো নির্বাচন হয় না। নির্বাচন নির্বাচন খেলা হতে পারে।’

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি তৃষ্ণার্ত, আপনাকে যদি এক গ্লাস ট্যাপের পানি দেওয়া হয় আর আরেক গ্লাস মিনারেল ওয়াটার দেওয়া হয়; আপনি কোনটা নেবেন? আপনি আমাদের দেশের যে ট্যাপের পানি সেটা কি নেবেন? নেবেন না। আবার আপনাকে যদি এক গ্লাস সেদ্ধ পানি ও আরেক গ্লাস মিনারেল ওয়াটার দেওয়া হয়, তাহলে কোনটা নেবেন? আপনার মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা থাকবে। কারণ, দুটো পানিই নিরাপদ। আপনি বলতে পারবেন না তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি মিনারেল পানিই খাবেন। ঠিক নির্বাচন হতে হলে যথার্থ বিকল্প থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনে দুটো প্রধান ব্র্যান্ড। একটা আওয়ামী লীগ ও আরেকটা বিএনপি। বিএনপি তো নেই। যদি না থাকে তাহলে নিশ্চিত করে বলাই যায়— আওয়ামী লীগ চাইলে সবার সঙ্গে জিতবে। কিন্তু তারা আসন ভাগাভাগি করছে কেন? অন্যদের কিছু সিট দেওয়ার জন্য। প্রতিযোগিতা হচ্ছে নিজেদের মধ্যে, নিজেদের অনুগত বা নিজেদের সৃষ্ট নাম সর্বস্ব দলগুলোর সঙ্গে।’

‘একমাত্র বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আসন ভাগাভাগি হয়েছে। জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন— জাতীয় পার্টি দ্বারা মনোনীত ও আওয়ামী লীগ দ্বারা সমর্থিত। তাহলে এটাতে প্রতিযোগিতা হচ্ছে না। এটা ভোটের খেলা, নির্বাচন-নির্বাচন খেলা, যা নির্বাচনী সংজ্ঞায় পড়ে না।’

সুজন সম্পাদক বলেন, ‘গত দুটি যে বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে, যেটার কারণে সরকারের যে লেজিটিমেসি (বৈধতা/ন্যায্যতা) সমস্যা তা আরো ভয়াবহ হবে। সরকার কিন্তু এই লেজিসলেটিভ সমস্যা দূরীভূত করতে পারবে না। বরং আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। কারণ, আমাদের নির্বাচনে কিন্তু আরো অনেকের চোখ আছে। অতীতে কিন্তু এই চোখ ছিল না। এই সমস্যা দূর করার জন্য আমাদের আরো বিদেশি বন্ধুদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে আমাদের সার্বভৌমত্বও ক্ষুণ্ন হতে পারে। বিস্তৃত বলবো না, ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যেতে পারি।’

নির্বাচন কমিশনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়েই প্রশ্ন আছে! হাবিবুল কমিশন নিয়েই আইনি বৈধতার প্রশ্ন আছে। আমাদের সংবিধানে বলা আছে— নির্বাচন কমিশন নিয়োগে একটা আইন হতে হবে। গত ৫২ বছরে সেই আইন হয়নি। আমরা একটা আইনের খসড়া করে আইনমন্ত্রীকে দিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন না, এখন সময় নাই। কিন্তু শেষমেশ জনমতের কারণে ২০২২ সালে একটা আইন করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২। ছোট্ট আইন। মূলত আগে যে প্রজ্ঞাপন ছিল সেটাই রিসাইকেল করে আইন করা হয়েছে। ওখানে দায়মুক্তি বিধান যুক্ত করে আইনটা করা হয়। তাতে বলা হয়েছে— রাজনৈতিক দল আর পেশাজীবী সংগঠন অনুসন্ধান কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করতে পারবে। কিন্তু ৫ ফেব্রুয়ারি যখন অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়েছিল তখন সেটা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। যা আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কারণ, যে কেউ যে কারো নাম প্রস্তাব করতে পারতো। নিজের নামও প্রস্তাব করতে পারতো।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রয়াত জাফরুল্লাহ চৌধুরী বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। এই রকম আরো অনেকে অনেকের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু, আইনগতভাবে তারা কেউই বৈধ নাম প্রস্তাবকারী ছিলেন না। অথচ তাদের নাম প্রস্তাবের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। যারা বৈধ নয়, তাদের প্রস্তাবেই যদি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় তাহলে তাদের বৈধতা নিয়েও তো প্রশ্ন উঠেই। এটা নিয়ে আমি বহু সমস্যার মধ্যে আছি।’