ঢাকা ০২:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

১৫ বছরে ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট : সিপিডি

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : ০৭:৩৭:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৫৬ বার পড়া হয়েছে

অনিয়মের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ওই অর্থ লুটপাট হয়।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির কার্যালয়ে ‌‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৩-২৪ : চলমান সংকট ও করণীয়’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ, অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণসহ নানা ধরনের এসব আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকে কেলেঙ্কারি বা অনিয়ম হয় সেগুলো অফিসিয়াল সূত্রে পাওয়া যায় না। সেগুলো সংবাদ মাধ্যমে আসে। গণমাধ্যমকর্মীরা সেগুলো হয়তো অফিসিয়াল সূত্রেই আনেন। এগুলোকে কম্পাইল করে ২০০৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যমে ২৪টি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিশাল এই অর্থ দিয়ে কী হতে পারে সেটা আপনারা হিসাব করতে পারেন। আপনারা হিসাব করতে পারেন আমাদের রাজস্ব ঘাটতি কত? সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কত ব্যয় হচ্ছে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে কত ব্যয় করছি। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা কী করতে পারতাম।

তিনি বলেন, এই পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে; ব্যাংকে যে টাকা সেটা জনগণের টাকা, সেটা কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা চিন্তার বিষয়। সেই প্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাতে নিয়ম-কানুন বাস্তবায়ন করা ও সংস্কার করা একেবারেই জরুরি হয়ে পড়েছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত ১৫ বছরে ব্যাংকিং খাত থেকে যে পরিমাণ অর্থ লোপাট হয়েছে তা জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ এবং জিপিডির ১.৮ শতাংশ। আর্থিক খাতে আমাদের বিশৃঙ্খলা অনেকদিন ধরেই চলেছে। ঋণ খেলাপি যদি বিবেচনা করেন তাহলে দেখতে পাই ২০০৮ সালে ঋণ খেলাপি ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, যা এখন ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ না করলে সংকট কাটবে না।

এই টাকা কোথায় গেলো এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহমিদা বলেন, সেটা তো আমরাও জানি না। হয়ত কিছুটা অর্থনীতিতে এসেছে। সেটা কতটুকু ব্যয় হয়েছে। এটার তথ্যটা আমাদের জানা নেই।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান সময়ে অর্থনীতি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যা কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, এমনকি নির্বাচনের পরেও না। নীতি নির্ধারকদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা।

ফাহমিদা বলেন, নিয়ম কানুনের কোনো অভাব নেই। অনেক ভালো নীতিমালা আছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হয় না। পরিদর্শন, পরীবিক্ষণ হয় না। যারা ঋণ খেলাপির সঙ্গে জড়িত থাকেন তারাই আবার নিয়ম করে দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে যে, ঋণ রিশিডিউল করা যাবে। এ রকম বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নীতিমালার বাস্তবায়ন দরকার।

তিনি বলেন, অর্থনীতি এখন বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এবং সত্যিকার অর্থে একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একমাত্র আশা, নীতি নির্ধারকরা এটি বুঝবেন এবং স্বীকার করবেন যে, গতানুগতিক পন্থায় কাজ হবে না। কেবল নিঃস্বার্থ শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব সংস্কারের কঠিন পথে যেতে পারে এবং অর্থনীতিকে উদ্ধার করতে পারে।

সরকার স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে জিম্মি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মহল আরও শক্তিশালী হয়েছে। শুধুমাত্র যোগ্যতার ভিত্তিতে নয় রাজনৈতিক আনুকূল্যে সরকারি চাকরিতে প্রমোশন হয়ে থাকে। আর তাই সরকারি প্রতিষ্ঠানেও সংস্কার প্রয়োজন।

আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

১৫ বছরে ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট : সিপিডি

আপডেট টাইম : ০৭:৩৭:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

অনিয়মের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ওই অর্থ লুটপাট হয়।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির কার্যালয়ে ‌‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৩-২৪ : চলমান সংকট ও করণীয়’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ, অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণসহ নানা ধরনের এসব আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকে কেলেঙ্কারি বা অনিয়ম হয় সেগুলো অফিসিয়াল সূত্রে পাওয়া যায় না। সেগুলো সংবাদ মাধ্যমে আসে। গণমাধ্যমকর্মীরা সেগুলো হয়তো অফিসিয়াল সূত্রেই আনেন। এগুলোকে কম্পাইল করে ২০০৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যমে ২৪টি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিশাল এই অর্থ দিয়ে কী হতে পারে সেটা আপনারা হিসাব করতে পারেন। আপনারা হিসাব করতে পারেন আমাদের রাজস্ব ঘাটতি কত? সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কত ব্যয় হচ্ছে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে কত ব্যয় করছি। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা কী করতে পারতাম।

তিনি বলেন, এই পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে; ব্যাংকে যে টাকা সেটা জনগণের টাকা, সেটা কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা চিন্তার বিষয়। সেই প্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাতে নিয়ম-কানুন বাস্তবায়ন করা ও সংস্কার করা একেবারেই জরুরি হয়ে পড়েছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত ১৫ বছরে ব্যাংকিং খাত থেকে যে পরিমাণ অর্থ লোপাট হয়েছে তা জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ এবং জিপিডির ১.৮ শতাংশ। আর্থিক খাতে আমাদের বিশৃঙ্খলা অনেকদিন ধরেই চলেছে। ঋণ খেলাপি যদি বিবেচনা করেন তাহলে দেখতে পাই ২০০৮ সালে ঋণ খেলাপি ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, যা এখন ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ না করলে সংকট কাটবে না।

এই টাকা কোথায় গেলো এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহমিদা বলেন, সেটা তো আমরাও জানি না। হয়ত কিছুটা অর্থনীতিতে এসেছে। সেটা কতটুকু ব্যয় হয়েছে। এটার তথ্যটা আমাদের জানা নেই।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান সময়ে অর্থনীতি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যা কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, এমনকি নির্বাচনের পরেও না। নীতি নির্ধারকদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা।

ফাহমিদা বলেন, নিয়ম কানুনের কোনো অভাব নেই। অনেক ভালো নীতিমালা আছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হয় না। পরিদর্শন, পরীবিক্ষণ হয় না। যারা ঋণ খেলাপির সঙ্গে জড়িত থাকেন তারাই আবার নিয়ম করে দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে যে, ঋণ রিশিডিউল করা যাবে। এ রকম বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নীতিমালার বাস্তবায়ন দরকার।

তিনি বলেন, অর্থনীতি এখন বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এবং সত্যিকার অর্থে একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একমাত্র আশা, নীতি নির্ধারকরা এটি বুঝবেন এবং স্বীকার করবেন যে, গতানুগতিক পন্থায় কাজ হবে না। কেবল নিঃস্বার্থ শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব সংস্কারের কঠিন পথে যেতে পারে এবং অর্থনীতিকে উদ্ধার করতে পারে।

সরকার স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে জিম্মি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মহল আরও শক্তিশালী হয়েছে। শুধুমাত্র যোগ্যতার ভিত্তিতে নয় রাজনৈতিক আনুকূল্যে সরকারি চাকরিতে প্রমোশন হয়ে থাকে। আর তাই সরকারি প্রতিষ্ঠানেও সংস্কার প্রয়োজন।