র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ এর বিরুদ্ধে আপোষহীন অবস্থানে থেকে নিরলস কাজ করে আসছে। সাংগঠনিকভাবে পূর্বের মতো সারাদেশে একযোগে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা সৃষ্টি করার সক্ষমতা না থাকলেও, সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। তবে র্যাবের কঠোর গোয়েন্দা নজরদারী ও অভিযানের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেতা কর্মীরা পুনরায় সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়েও বার বার ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন “কেএনএফ এর সাথে একত্রিত হয়ে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত জঙ্গি সংগঠন “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” এর আমীর ও শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ প্রায় শতাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের প্রায় ০৩ হাজার এবং হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ০২ হাজার জঙ্গীকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব। যখনই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়েছে তখনই র্যাব ফোর্সেস সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাত অনুমান ১০.৩০ ঘটিকায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে,মাগুরা জেলার সদর থানার আলমখালী যাত্রী ছাউনি এলাকায় জঙ্গি সংগঠনের সদস্য একত্রে মিলিত হয়ে গোপন বৈঠক করছে। এরই প্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন “আনসার আল ইসলাম” এর দুইজন আসামী- ১। মোঃ ঈষান হায়দার (২৮), পিতা-মোঃ মনিরুল হায়দার মৃদুল, গ্রাম- রাঘবপুর, থানা- সদর, জেলা- পাবনা এবং ২। মোঃ আব্দুল করিম (২৭), পিতা-মৃত আব্দুল কুদ্দুস বারী, গ্রাম- মানরাতুল কুশুরিয়া, থানা- হিজলা, জেলা- বরিশালদ্বয়কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ সময় অজ্ঞাত আরও ৩/৪ জন সদস্য পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন “আনসার আল ইসলাম” এর সদস্য। তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন “আনসার আল ইসলাম” এর কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা নিজেরাই সংগঠনের সদস্য সংগ্রহে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদি পুস্তিকা, মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতো। অন্যদিকে তারা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভুল তথ্য প্রদান করে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও সদস্যদের নিকট থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করতো। এর পাশাপাশি তারা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করে বিভিন্ন তথ্যের অপব্যাখা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তুলতো।
৫। গ্রেফতারকৃত ঈষান হায়দার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রোডাকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিল। সে পূর্বে ধৃত ইয়াকুব হুজুরের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম করতে থাকে। মূলত সে পাবনা জেলার দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করে আসছিলো। পাশাপাশি সে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে সংগঠনের সদস্যদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে পার্শ্ববর্তী দেশে প্রেরণের কাজে নিয়োজিত ছিল।
গ্রেফতারকৃত আব্দুল করিম পেশায় মুদি দোকানদার ছিল। সে ধৃত ঈষান হায়দার এবং আব্দুল্লাহ এর মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম করতে থাকে। সে তার নিজ এলাকা বরিশালে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সংগঠনের নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতো বলে জানা যায়্। টগেট কিলিং এর ব্যপারে সে অত্যন্ত উৎসাহী ছিল বলে আমাদের জানায়। এর পাশাপাশি সে সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা প্রদান এবং সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের নিকট হতে চাঁদা সংগ্রহ করতো বলে জানা যায়। এছাড়াও সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠনের প্রচার-প্রচারোনা করে সাধারণ মানুষদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে আসছিল।
গ্রেফতারকৃতদের সাথে প্রাথমিকভাবে কথা বলে জানা যায় উভয়ের নামেই পূর্বে জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। একারনে তারা বিভিন্ন সময় স্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপনে ছিল। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।