ঢাকা ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রায় ৩শ’ লঞ্চ বন্ধ

নৌ পরিবহন খাতে ধ্বস

  • রেজা রায়হান:
  • আপডেট টাইম : ০১:০৪:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩
  • ৭৪ বার পড়া হয়েছে

যাত্রীর অভাবে ছোট-বড় মিলিয়ে সাড়ে ৭শ’ লঞ্চের মধ্যে প্রায় ৩শ’ লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেছেন লঞ্চ মালিকরা। ফল হিসেবে শ্রমিকরাও চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন । লঞ্চ বন্ধের কারণ হিসেবে শুধুমাত্র পদ্মা সেতুই নয়, পাশাপাশি জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও হরতাল-অবরোধকেও ব্যবসায় বড় ধ্বসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

যে লঞ্চগুলো চলছে তার আয় দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, পদ্মা সেতু চালুর পর স্বাভাবিকভাবেই লঞ্চের যাত্রী বেশ কমে যায়। পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন লঞ্চে করে ঢাকা থেকে বরিশালসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করতেন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। সে সংখ্যা এখন অনেক কমে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেতু উদ্বোধনের পর সদরঘাটে যাত্রীদের চাপ আকস্মিকভাবে কমে যায়। আর এখন হরতাল-অবরোধের কারণে ধস নেমেছে যাত্রী পরিবহনে।

শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) এক জরিপ অনুযায়ী, পদ্মা সেতু চালুর পর গত এক বছরে ঢাকার লঞ্চযাত্রী কমেছে ৩৪ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন ব্যবসায় মন্দার কারণে মালিকরা এক বছরে অন্তত ২০টি লঞ্চ স্ক্র্যাপ (ভেঙে যন্ত্রাংশসহ লোহালক্কড় বিক্রি) করে ফেলেছেন। এ ছাড়া আরো অন্তত ছয়টি লঞ্চ স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এ অবস্থায় সীমিত পরিসরে লঞ্চ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে রোটেশন প্রথা চালু করেছেন মালিকরা। সে হিসাবে পাঁচ দিন পর একটি আপডাউন ট্রিপ পাচ্ছে লঞ্চগুলো। তবে এতেও শেষরক্ষা হচ্ছে না তাদের।

এই পরিবহন খাতের এক শ্রমিক জানান, পাঁচ দিন পর পর লঞ্চ চলছে। স্টাফদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তারা মালিকদের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেও পারছেন না। মানুষ সদরঘাটে আসছেন না। তারা বিভিন্নভাবে কম সময়ে ঢাকায় পৌঁছে যেতে পারছেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ৮০ শতাংশ গরিব মানুষ লঞ্চে যাতায়াত করেন। তাদের কথা চিন্তা করে হলেও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ইজারাপত্র বাতিল করা অত্যন্ত জরুরি। এটি বাতিল করলে আমাদের কিছু যাত্রী বাড়বে।

মালিকরা আরও জানিয়েছেন, ঢাকা-বরিশাল রুটে আগে যেখানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি লঞ্চ চলাচল করতো, সেখানে এখন চলছে মাত্র দুটি। আগে ঢাকা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৮০টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত। এই সংখ্যা ২০টি কমে এখন ঠেকেছে ৬০টিতে। সেই হিসাবে এক বছরে লঞ্চ চলাচল কমেছে ২৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক ( ঢাকা নদীবন্দর, সদরঘাট) কবির হোসেন বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে ৪১টি রুটে নৌযান চলাচল করতো। কিন্তু যাত্রীস্বল্পতার কারণে নৌপথে দক্ষিণাঞ্চলের ১০টি রুটে লঞ্চ চলাচল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি রুটে অঞ্চল ভিত্তিক (স্থানীয় রুটে) কিছু লঞ্চ চলাচল করছে।

এদিকে যাত্রী ও লঞ্চ চলাচল কমে যাওয়ার পেছনে সড়কপথে পদ্মা সেতুর ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি নাব্যতা সঙ্কট ও ঢাকার যানজটকেও দায়ী করছে এসসিআরএফ। এছাড়া যথাযথভাবে নদী খনন ও পলি অপসারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণেও অনেক নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে বলে মনে করছে শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম। যানজট বিড়ম্বনায় সদরঘাট টার্মিনালে যেতে বহু মানুষের অনীহার কারণকেও লঞ্চের যাত্রী কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

প্রায় ৩শ’ লঞ্চ বন্ধ

নৌ পরিবহন খাতে ধ্বস

আপডেট টাইম : ০১:০৪:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

যাত্রীর অভাবে ছোট-বড় মিলিয়ে সাড়ে ৭শ’ লঞ্চের মধ্যে প্রায় ৩শ’ লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেছেন লঞ্চ মালিকরা। ফল হিসেবে শ্রমিকরাও চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন । লঞ্চ বন্ধের কারণ হিসেবে শুধুমাত্র পদ্মা সেতুই নয়, পাশাপাশি জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও হরতাল-অবরোধকেও ব্যবসায় বড় ধ্বসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

যে লঞ্চগুলো চলছে তার আয় দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, পদ্মা সেতু চালুর পর স্বাভাবিকভাবেই লঞ্চের যাত্রী বেশ কমে যায়। পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন লঞ্চে করে ঢাকা থেকে বরিশালসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করতেন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। সে সংখ্যা এখন অনেক কমে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেতু উদ্বোধনের পর সদরঘাটে যাত্রীদের চাপ আকস্মিকভাবে কমে যায়। আর এখন হরতাল-অবরোধের কারণে ধস নেমেছে যাত্রী পরিবহনে।

শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) এক জরিপ অনুযায়ী, পদ্মা সেতু চালুর পর গত এক বছরে ঢাকার লঞ্চযাত্রী কমেছে ৩৪ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন ব্যবসায় মন্দার কারণে মালিকরা এক বছরে অন্তত ২০টি লঞ্চ স্ক্র্যাপ (ভেঙে যন্ত্রাংশসহ লোহালক্কড় বিক্রি) করে ফেলেছেন। এ ছাড়া আরো অন্তত ছয়টি লঞ্চ স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এ অবস্থায় সীমিত পরিসরে লঞ্চ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে রোটেশন প্রথা চালু করেছেন মালিকরা। সে হিসাবে পাঁচ দিন পর একটি আপডাউন ট্রিপ পাচ্ছে লঞ্চগুলো। তবে এতেও শেষরক্ষা হচ্ছে না তাদের।

এই পরিবহন খাতের এক শ্রমিক জানান, পাঁচ দিন পর পর লঞ্চ চলছে। স্টাফদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তারা মালিকদের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেও পারছেন না। মানুষ সদরঘাটে আসছেন না। তারা বিভিন্নভাবে কম সময়ে ঢাকায় পৌঁছে যেতে পারছেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ৮০ শতাংশ গরিব মানুষ লঞ্চে যাতায়াত করেন। তাদের কথা চিন্তা করে হলেও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ইজারাপত্র বাতিল করা অত্যন্ত জরুরি। এটি বাতিল করলে আমাদের কিছু যাত্রী বাড়বে।

মালিকরা আরও জানিয়েছেন, ঢাকা-বরিশাল রুটে আগে যেখানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি লঞ্চ চলাচল করতো, সেখানে এখন চলছে মাত্র দুটি। আগে ঢাকা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৮০টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত। এই সংখ্যা ২০টি কমে এখন ঠেকেছে ৬০টিতে। সেই হিসাবে এক বছরে লঞ্চ চলাচল কমেছে ২৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক ( ঢাকা নদীবন্দর, সদরঘাট) কবির হোসেন বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে ৪১টি রুটে নৌযান চলাচল করতো। কিন্তু যাত্রীস্বল্পতার কারণে নৌপথে দক্ষিণাঞ্চলের ১০টি রুটে লঞ্চ চলাচল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি রুটে অঞ্চল ভিত্তিক (স্থানীয় রুটে) কিছু লঞ্চ চলাচল করছে।

এদিকে যাত্রী ও লঞ্চ চলাচল কমে যাওয়ার পেছনে সড়কপথে পদ্মা সেতুর ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি নাব্যতা সঙ্কট ও ঢাকার যানজটকেও দায়ী করছে এসসিআরএফ। এছাড়া যথাযথভাবে নদী খনন ও পলি অপসারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণেও অনেক নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে বলে মনে করছে শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম। যানজট বিড়ম্বনায় সদরঘাট টার্মিনালে যেতে বহু মানুষের অনীহার কারণকেও লঞ্চের যাত্রী কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।