বৃদ্ধা মাকে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পেশায় আইনজীবী এক ছেলের বিরুদ্ধে। আর এ কাজে তাকে সহায়তা করছেন তারই স্ত্রী আর পুত্র। সেটিও আবার একবার বা দু’বার নয়, ৭৩ বছরের ওই বৃদ্ধা তার নিজের বাড়িতেই ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতির হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকবার।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের রূপনগরে। এদিকে এই ঘটনায় অভিযুক্ত আইনজীবী ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যত্ন করে লালন-পালন করা ও আইন বিষয়ে শিক্ষিত করে আইনজীবী হিসেবে গড়ে তোলা ছেলের হাতেই ৭৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা নারীর বাড়িটি তার কাছেই যেন দোজখ হয়ে উঠেছিল। নিজের ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতির হাতে নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হতেন তিনি।
এদিকে বৃদ্ধাকে নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ৭৩ বছরের বৃদ্ধা এই নারীকে তার ছেলে, পুত্রবধূ এমনকি তার নাতিও নির্যাতন ও নির্দয়ভাবে মারধর করছে।
তবে অবশেষে মায়ের ঘরে লাগানো একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজের প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ওই আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের আগে অবশ্য ওই আইনজীবী জানান, তিনি তার মায়ের সেবা করেছেন।
এনডিটিভি বলছে, নির্যাতিতা ওই বৃদ্ধা নারীর নাম আশা রানী। তিনি তার ছেলে, মেয়ে ও পুত্রবধূকে নিয়ে পাঞ্জাবের রূপনগরে বাসবাস করেন। তার স্বামী সম্প্রতি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
পরে তিনি তার মেয়ে দীপশিখার কাছে অভিযোগ করেন, তার ছেলে অঙ্কুর ভার্মা ও তার স্ত্রী সুধা তাকে প্রায়ই মারধর করেন। পরে ওই মেয়ে তার মা আশা রানীর ঘরে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখেন এবং এটি দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান।
ভয়ঙ্কর ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভুক্তভোগী ওই নারীর নাতি আশা রানীর বিছানায় পানি ঢালছেন এবং তারপরে তার বাবা-মায়ের কাছে অভিযোগ করেন, তিনি (তার দাদী) বিছানা ভিজিয়েছেন। পরে অঙ্কুর ও সুধা সেখানে আসেন এবং অঙ্কুরকে তখন তার মাকে লাঞ্ছিত করতে দেখা যায়। এসময় বৃদ্ধা ওই নারী বিছানায় শুয়ে ছিলেন। অভিযুক্ত ওই ছেলে তার মায়ের পিঠে ঘুষি মারে এবং বারবার থাপ্পড় মারতে থাকে। এসময় ওই নারীকে চিৎকার করতে দেখা যায়। এভাবে চলে প্রায় এক মিনিট।
একপর্যায়ে অঙ্কুর চলে যান এবং সুধা ও তার সন্তাকে তখন ঘরে আসতে দেখা যায়। সুধা এসময় ইশারা করে কিছু বলেন এবং অঙ্কুর আবার ভেতরে আসেন এবং তার মাকে চুল ধরে জোরে বারবার মাথায় ঝাঁকি দেন। এসময় তাকে চড় মারতে এবং মাথায় ঘুষি মারতেও দেখা যায়। তার স্ত্রী ও ছেলে ঘর ছেড়ে চলে গেলেও ওই আইনজীবী ছেলে তার মাকে লাঞ্ছিত করতে থাকে।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পুত্রবধূ সুধা তার শাশুড়ি আশা রানীকে থাপ্পড় মারছে এবং নাতি তাকে টেনে টেনে বিছানার কিনারায় বসিয়ে দিচ্ছে। হামলার এসব ভিডিও গত ১৯ সেপ্টেম্বর, ২১ অক্টোবর এবং ২৪ অক্টোবরের।
এনডিটিভি বলছে, মেয়ে দীপশিখার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল এবং এনজিওর কিছু লোক শনিবার আশা রানীর বাড়িতে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করেন। উদ্ধারের সময় অঙ্কুর দাবি করেন, তিনি তার মায়ের সেবা করছিলেন। এমনকি তার মা ‘সঠিক মানসিক অবস্থায় নেই’ বলেও দাবি করেন তিনি।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘অঙ্কুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং স্বেচ্ছায় সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, অন্যায়ভাবে আটকে রাখা এবং পিতামাতা ও প্রবীণ নাগরিকের যত্ন সংক্রান্ত আইনের ২৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।’