ঢাকা ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম :
Logo অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ০৪ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। Logo ফরিদপুর জেলার মধুখালিতে “শ্যালিকার সঙ্গে পরকীয়ার জেরে দুলাভাইকে হত্যা” শীর্ষক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার পলাতক আসামি শরিফুল শেখ ও তথি বেগম’কে ফরিদপুরের কোতোয়ালি এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। Logo মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ী এলাকা হতে ২৩.৫ কেজি গাঁজাসহ ০১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০ Logo গ্রাম পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা Logo আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস রিপোর্টার্স ফোরামের শ্রদ্ধা

রূপগঞ্জের এক প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে রুবেল প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে, তাদের ফাঁদে সর্বস্ব হারাচ্ছে মানুষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিত্যনতুন কৌশল, নানা ফন্দিফিকির ও ছলচাতুরীতে রুবেল প্রতারক চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দিন-দিন বাড়ছে তাদের প্রতারণার দৌরাত্ম্য। তাঁরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। এ সংঘবদ্ধ চক্রের প্রতারণার জালে বন্দি হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে মানুষ। রুবেল প্রতারক চক্রের মূলহোতা রুবেল মিয়ার পিতার নাম মো. সোবহান মিয়া। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের (৭ নং ওয়ার্ড) পূর্বগ্রামের বাসিন্দা তিনি। এ চক্রটির প্রধান রুবেল মিয়ার আবাসন দালালি ব্যবসার আড়ালে হরেক রকম প্রতারণা এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। কাগজপত্র জালিয়াতি, খাঁড়া দলিল ও জমির অংশ কেনা-বেচা, রেজিষ্ট্রি ও নামজারি/খারিজ করে দেওয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় এবং ভুয়া জমি, প্লট ও ফ্ল্যাট দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন রুবেল মিয়া। প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে শর্বশান্ত করে হাতিয়ে নিয়ে নিজে গড়েছেন বিপুল সম্পদ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পূর্বগ্রাম ও পশ্চিমগাঁও মৌজায় ৩৫ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে তাঁর। এছাড়াও একটি বলগেটের এক কোটি টাকার মালিকানা অংশীদার তিনি। আরও রয়েছে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় নিজ নামে জমি, প্লট ও ফ্লাট। নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক ব্যাংক এ্যাকাউন্ট তাঁর। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ এই রুবেল প্রতারক চক্রের তৎপরতায়। অভিযোগ রয়েছে; বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে সম্পত্তি বুঝিয়ে দেননি তিনি। অর্থের বিনিময়ে জমি, প্লট ও ফ্লাট দখল বানিজ্য করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে ভুরি-ভুরি। প্রতারণার কারণে রূপগঞ্জ ও ডেমরা এলাকায় অনেকবার তাঁকে আটকিয়ে রাখা হয়। বিগত ৭ বছর ধরে নানা প্রতারণামূলক এবং জমি জালিয়াতি কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রুবেল মিয়া। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের একজন রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন প্রতারণায় সক্রিয় রয়েছেন তিনি।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, রুবেল প্রতারক চক্রের মূলহোতা রুবেল মিয়া নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় একাধিক জায়গা থেকে অংশ কিনে এবং মানুষকে কৌশলে আটকিয়ে ও ভুলভাল বুঝিয়ে তা বিক্রি করে। তাঁর প্রতারণার ফাঁদে প্রতিনিয়ত নিঃস্ব হচ্ছে জমি, প্লট এবং ফ্লাট ক্রেতারা, অন্যদিকে এ চক্রের সদস্যরা জমি বিক্রির নামে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন মানুষের সারাজীবনের কষ্টার্জিত আয়ের জমানো টাকা আর কেড়ে নিচ্ছে শেষ সম্বলটুকুও। নারায়ণগঞ্জের সদর, রূপগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ সোনারগাঁও, আড়াইহাজার, বন্দর, ফতুল্লা এবং রাজধানী ঢাকার ডেমরা, খিলগাঁও, কদমতলী, বাড্ডা, রামপুরা, ভাটারা, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও শ্যামপুরসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় নানা কায়দায় প্রতারণার ফাঁদ পাতে এ প্রতারক চক্রের সদস্যরা। সাধারণত সহজ-সরল মানুষই তাদের লক্ষ্য। সুযোগ বুঝেই নানা কৌশল, ফন্দি, ছলচাতুরি ও মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তাঁরা দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা করছে।
এ চক্রের সদস্যরা একের পর এক প্রতারণা-জালিয়াতি ও মানুষকে ঠকিয়েও পাড় পেয়ে যাচ্ছে। রুবেল মিয়া মানুষের কাছে নিজেকে একজন আবাসন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এর সাথে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের একজন রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতার আত্মীয়ের পরিচয়ে নানা ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত তিনি। প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি, জোরপূর্বক অন্যের জমি ও সম্পত্তি দখল এবং অবৈধ আয়ের মাধ্যমে এখন বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক রুবেল মিয়া। এ চক্রে প্রায় ১৫-২০ জন সদস্য সক্রিয় রয়েছে বলেও একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। রুবেল মিয়ার কাছে ক্রেতারা জমি বুঝে না পেয়ে টাকা ফেরত চাইতে গেলে নানা অজুহাত ও ভয়ভীতি দেখান এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকিও দিয়ে থাকেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জমির ভূয়া কাগজ দেখিয়ে বিক্রির নামে অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে কৌশলে ও লোভনীয় অফার দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রুবেল প্রতারক চক্রের সদস্যরা। রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে অনেক ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেছেন, জমি, প্লট ও ফ্লাট দেওয়ার কথা বলে বায়না নিয়ে আর সামনেও আসেনা তিনি। আবার অনেকের দাবি, এ চক্রের সদস্যরা তাদের কোনো জমি, প্লট ও ফ্ল্যাট দেয়নি বরং টাকা নেওয়ার পর তাদের ভুয়া কাগজপত্র ধরিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে (মো. রুবেল মিয়া) নামক আইডি থেকে জমি, প্লট ও ফ্লাট কেনা-বেচার নামে বিজ্ঞাপন ও পোস্ট দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায়ের পাশাপাশি মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে অহরহ। অনেকের কাছ থেকে কৌশলে কয়েক দফায় কয়েক কোটি টাকা আদায় করেছেন তিনি। এছাড়াও রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান, ডকইয়ার্ড, আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন শিল্পে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে ফিটিং দিয়ে অর্থ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। রূপগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করে থাকেন বলে একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পূর্বগ্রামের বাসেত আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর বলেন, রুবেল মিয়া আমার জমি খাঁড়া করে নিয়েছে। সে প্রতারণা করে আমার সব জায়গা সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে আমাকে সর্বশান্ত করেছে। তাঁর কাছে প্রতারিত হয়ে আমার পরিবার নিয়ে এখন আমি রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরে বেড়াই। এছাড়াও কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ডাক্তারখালি গ্রামের শামসুদ্দিনের ছেলে মো. আলী বলেন, বিগত ৫ বছর আগে রুবেল মিয়া আমার জমি-সম্পত্তি দখলে নেওয়ার জন্য আমাকে মেরে ফেলার জন্য একাধিকবার হামলা করেছে। কয়েকবার আমার বাড়িতে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে এবং জমি দখলের জন্য হুমকিধামকি দিয়েছেন তিনি। এবিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন জনপ্রতিনিধির সাথে কথা হলে তিনি বলেন এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে যতদূর সম্ভব সহযোগিতা করা হবে এবং ভুক্তভোগীরা বিচার নিয়ে এলে সঠিকভাবে তাঁর সমাধানের চেষ্টা করবো। অপরদিকে, অভিযুক্ত রুবেল মিয়ার সাথে এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। রুবেল প্রতারক চক্রের বেপরোয়া দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের স্থানীয় অনেকের দাবি, তাঁকে দ্রুত আইনের আওতায় নেওয়া হোক। এই ভয়ংকর দুর্বৃত্ত ও প্রতারক চক্র থেকে মুক্তি চায় এলাকার সব শ্রেণি-পেশার সাধারণ জনগন।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ০৪ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০।

রূপগঞ্জের এক প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে রুবেল প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে, তাদের ফাঁদে সর্বস্ব হারাচ্ছে মানুষ।

আপডেট টাইম : ১০:৪৭:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
নিজস্ব সংবাদদাতা
নিত্যনতুন কৌশল, নানা ফন্দিফিকির ও ছলচাতুরীতে রুবেল প্রতারক চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দিন-দিন বাড়ছে তাদের প্রতারণার দৌরাত্ম্য। তাঁরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। এ সংঘবদ্ধ চক্রের প্রতারণার জালে বন্দি হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে মানুষ। রুবেল প্রতারক চক্রের মূলহোতা রুবেল মিয়ার পিতার নাম মো. সোবহান মিয়া। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের (৭ নং ওয়ার্ড) পূর্বগ্রামের বাসিন্দা তিনি। এ চক্রটির প্রধান রুবেল মিয়ার আবাসন দালালি ব্যবসার আড়ালে হরেক রকম প্রতারণা এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। কাগজপত্র জালিয়াতি, খাঁড়া দলিল ও জমির অংশ কেনা-বেচা, রেজিষ্ট্রি ও নামজারি/খারিজ করে দেওয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় এবং ভুয়া জমি, প্লট ও ফ্ল্যাট দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন রুবেল মিয়া। প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে শর্বশান্ত করে হাতিয়ে নিয়ে নিজে গড়েছেন বিপুল সম্পদ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পূর্বগ্রাম ও পশ্চিমগাঁও মৌজায় ৩৫ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে তাঁর। এছাড়াও একটি বলগেটের এক কোটি টাকার মালিকানা অংশীদার তিনি। আরও রয়েছে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় নিজ নামে জমি, প্লট ও ফ্লাট। নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক ব্যাংক এ্যাকাউন্ট তাঁর। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ এই রুবেল প্রতারক চক্রের তৎপরতায়। অভিযোগ রয়েছে; বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে সম্পত্তি বুঝিয়ে দেননি তিনি। অর্থের বিনিময়ে জমি, প্লট ও ফ্লাট দখল বানিজ্য করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে ভুরি-ভুরি। প্রতারণার কারণে রূপগঞ্জ ও ডেমরা এলাকায় অনেকবার তাঁকে আটকিয়ে রাখা হয়। বিগত ৭ বছর ধরে নানা প্রতারণামূলক এবং জমি জালিয়াতি কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রুবেল মিয়া। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের একজন রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন প্রতারণায় সক্রিয় রয়েছেন তিনি।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, রুবেল প্রতারক চক্রের মূলহোতা রুবেল মিয়া নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় একাধিক জায়গা থেকে অংশ কিনে এবং মানুষকে কৌশলে আটকিয়ে ও ভুলভাল বুঝিয়ে তা বিক্রি করে। তাঁর প্রতারণার ফাঁদে প্রতিনিয়ত নিঃস্ব হচ্ছে জমি, প্লট এবং ফ্লাট ক্রেতারা, অন্যদিকে এ চক্রের সদস্যরা জমি বিক্রির নামে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন মানুষের সারাজীবনের কষ্টার্জিত আয়ের জমানো টাকা আর কেড়ে নিচ্ছে শেষ সম্বলটুকুও। নারায়ণগঞ্জের সদর, রূপগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ সোনারগাঁও, আড়াইহাজার, বন্দর, ফতুল্লা এবং রাজধানী ঢাকার ডেমরা, খিলগাঁও, কদমতলী, বাড্ডা, রামপুরা, ভাটারা, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও শ্যামপুরসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় নানা কায়দায় প্রতারণার ফাঁদ পাতে এ প্রতারক চক্রের সদস্যরা। সাধারণত সহজ-সরল মানুষই তাদের লক্ষ্য। সুযোগ বুঝেই নানা কৌশল, ফন্দি, ছলচাতুরি ও মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তাঁরা দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা করছে।
এ চক্রের সদস্যরা একের পর এক প্রতারণা-জালিয়াতি ও মানুষকে ঠকিয়েও পাড় পেয়ে যাচ্ছে। রুবেল মিয়া মানুষের কাছে নিজেকে একজন আবাসন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এর সাথে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের একজন রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতার আত্মীয়ের পরিচয়ে নানা ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত তিনি। প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি, জোরপূর্বক অন্যের জমি ও সম্পত্তি দখল এবং অবৈধ আয়ের মাধ্যমে এখন বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক রুবেল মিয়া। এ চক্রে প্রায় ১৫-২০ জন সদস্য সক্রিয় রয়েছে বলেও একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। রুবেল মিয়ার কাছে ক্রেতারা জমি বুঝে না পেয়ে টাকা ফেরত চাইতে গেলে নানা অজুহাত ও ভয়ভীতি দেখান এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকিও দিয়ে থাকেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জমির ভূয়া কাগজ দেখিয়ে বিক্রির নামে অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে কৌশলে ও লোভনীয় অফার দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রুবেল প্রতারক চক্রের সদস্যরা। রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে অনেক ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেছেন, জমি, প্লট ও ফ্লাট দেওয়ার কথা বলে বায়না নিয়ে আর সামনেও আসেনা তিনি। আবার অনেকের দাবি, এ চক্রের সদস্যরা তাদের কোনো জমি, প্লট ও ফ্ল্যাট দেয়নি বরং টাকা নেওয়ার পর তাদের ভুয়া কাগজপত্র ধরিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে (মো. রুবেল মিয়া) নামক আইডি থেকে জমি, প্লট ও ফ্লাট কেনা-বেচার নামে বিজ্ঞাপন ও পোস্ট দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায়ের পাশাপাশি মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে অহরহ। অনেকের কাছ থেকে কৌশলে কয়েক দফায় কয়েক কোটি টাকা আদায় করেছেন তিনি। এছাড়াও রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান, ডকইয়ার্ড, আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন শিল্পে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে ফিটিং দিয়ে অর্থ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। রূপগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করে থাকেন বলে একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পূর্বগ্রামের বাসেত আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর বলেন, রুবেল মিয়া আমার জমি খাঁড়া করে নিয়েছে। সে প্রতারণা করে আমার সব জায়গা সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে আমাকে সর্বশান্ত করেছে। তাঁর কাছে প্রতারিত হয়ে আমার পরিবার নিয়ে এখন আমি রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরে বেড়াই। এছাড়াও কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ডাক্তারখালি গ্রামের শামসুদ্দিনের ছেলে মো. আলী বলেন, বিগত ৫ বছর আগে রুবেল মিয়া আমার জমি-সম্পত্তি দখলে নেওয়ার জন্য আমাকে মেরে ফেলার জন্য একাধিকবার হামলা করেছে। কয়েকবার আমার বাড়িতে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে এবং জমি দখলের জন্য হুমকিধামকি দিয়েছেন তিনি। এবিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন জনপ্রতিনিধির সাথে কথা হলে তিনি বলেন এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে যতদূর সম্ভব সহযোগিতা করা হবে এবং ভুক্তভোগীরা বিচার নিয়ে এলে সঠিকভাবে তাঁর সমাধানের চেষ্টা করবো। অপরদিকে, অভিযুক্ত রুবেল মিয়ার সাথে এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। রুবেল প্রতারক চক্রের বেপরোয়া দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের স্থানীয় অনেকের দাবি, তাঁকে দ্রুত আইনের আওতায় নেওয়া হোক। এই ভয়ংকর দুর্বৃত্ত ও প্রতারক চক্র থেকে মুক্তি চায় এলাকার সব শ্রেণি-পেশার সাধারণ জনগন।