ঢাকা ১১:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

স্বপদে রহস্যময়ভাবে বহাল পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাহেলা সিদ্দিকা : আসামী শাহানাজ পারভীন, পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা সদর ক্লিনিক, মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র, মাদারীপুর সদর, জেলা: মাদারীপুরকে সি-আর মামলা নং- ৩২৮/২০২২, ধারা- ৪০৬/২২০/১০৯ পেনালকোড গৌরনদী বরিশাল মামলায় গত ১৪/১১/২০২২ ইং তারিখে রোজ সোমবার আনুমানিক রাত ৯:৪৫ ঘটিকায় এস.আই সিরাজ মোবাইল নং- ০১৮৩৪- ৭৭৩০১৯ ও মহিলা পুলিশ কনস্টেবল- ইভা খানম মোবাইল নং- ০১৮৬৫-০৮৪৬৭১, কালকিনী থানা, শানাজ পারভীনকে মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার করে কালকিনী থানায় নেওয়ার পরের দিন মঙ্গলবার ১৫/১১/২০২২ ইং তারিখে মাদারীপুর বিজ্ঞ আদালতে চালান দেওয়া হয়। বাদী আসমা খানম।
মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ শাহানাজ পারভীনকে মিলন টেইলার্স, মোহাম্মদপুর বাসস্টান্ড সংলগ্ন সুপার মার্কেট হতে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছেন। এস.এ.আই মোশাররফ, মোহাম্মদপুর থানা ওসি ইনচার্জ আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বিজ্ঞ আদালত, ঢাকায় চালান দেন।
বরখাস্তের নির্দেশ দিলেও স্বপদে রহস্যময় ভাবে বহাল পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকা শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই

মাদারীপুর জেলার সদর মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হিসেবে কর্মরত শাহনাজ পারভীনকে ঢাকা জেলাঃ এবং মাদারীপুর ও বরিশাল জেলাঃ বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক গ্রেফতারী পরওয়ানা ও হাজত বাস জারী হওয়া সরকারি চাকরী আইন ২০১ এর ৩৯ (২) উপধারা এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি মোতাবেক স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশ ক্রমে উপ-সচিব পার- ২ মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন সাক্ষরিত স্বারক নং ৫৯,০০,০০00.110.19.086.21-৬৩৮ তাং- ২৪/০৭/২০২২ এ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক শাহানাজ পারভীনকে বরখাস্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দিলেও কার্যকর করা হয়নি এখনো।
শাহনাজ পারভীনে বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশক্রমে মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন উপ-সচিব সাক্ষরিত স্বারক নং 59.00.0000.110.19.086.21-638 তাং- ২৪ জুলাই ২০২২ ইং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহা- পরিচালক কে নির্দেশ প্রদান করা হয়।কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবের ঐ নির্দেশ তোয়াক্কা না করে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে বহাল রয়েছেন শাহনাজ পারভীন।
শাহনাজ পারভীন, পিতা- শাহজাহান মীর, মাতা- ফাতেমা বেগম, স্বামী মাহাবুব হোসেন মোল্লা, গ্রাম: লক্ষীখালী, ডাকঘর: হাওলাডাঙ্গা, থানা: মোড়লগঞ্জ, জেলা: বাগেরহাট- গত ১৫/০৪/২/২০১৮ ইং তারিখে উক্ত পদে চাকুরীতে যোগদান করেন। এস.এস.সি পাশ করে উক্ত পদের বিজ্ঞপ্তির আবেদনের তারিখ শেষ হয়ে গেলে জালিয়াতির মাধ্যমে ০৮ (আট) মাস পরে শাহানাজ পারভীন আবেদন পত্র জমাদান করেন এবং চাকুরীপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে মাদারীপুর জেলার সদর মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা হিসেবে কর্মরত রয়েছে।
শাহানাজ পারভীন অন্যের নামে ১০০/- ট্রেজারী চালান জালিয়াতি করে আবেদন পত্র জমাদানের তারিখ শেষ হওয়ার ৮ মাস পর তার ঘনিষ্টজন মোঃ আব্দুল হান্নান ও আলীমের মাধ্যমে আবেদন জমা প্রদান করেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে ০৪/১২/২০১৩ খ্রিঃ তারিখের ৪৫.১৬৯.০১১.০০.০০.০২০ ২০১৩-৩১১ এবং ১২/০৫/২০১৪ খ্রিঃ তারিখের ৪৫.169.011.00.00020, 2013-1৭৪ নম্বর ছাড়পত্র মোতাবেক পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ০২ জুন, ২০১৪ খ্রিঃ তারিখের পপঅ প্রশা-১/নিয়োগ- ২২২ / ২০১৪ / ১২৮ মোতাবের স্মারকে জারিকৃত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষানতী মনোনয়নের লক্ষ্যে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি গত ০৪/০৬/২০১৪ সন তারিখে দৈনিক জনকণ্ঠ ও ০৫০৬/২০১৪ সন তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে ৬৪৮ জন পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা প্রশিক্ষনার্থী জনবল নিয়োগের জন্য প্রকাশ করিয়াছিলেন। এই জালিয়াতির বিষয়ে জনৈক ব্যক্তি মাননীয় মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় বরাবর অভিযোগ করিলে মন্ত্রী মহোদয় শাহানাজ পারভীনের বিরুদ্ধে গত ১০/০৯/২০২০ ইং তারিখে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। মাননীয় মন্ত্রীর নির্দেশে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর স্মারক নং: 59.11.0000.404.27.০০২.২১.৯৮ তাং- ২১/১১/২০২১ অনুযায়ী আবু তাহের মোঃ সানাউল্লাহ নূরী, উপপরিচালক গত ৩০/১১/২০২১ খ্রিঃ তারিখ মঙ্গলবার তদন্ত করেন।
৫৯.০০.০০০০.১১০.১৯.০৮৬.২১-৬৩৮ সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞ আদালত কতৃক গ্রেফতারী পরওয়ানা ও হাজত বাস জারী হওয়া সরকারি চাকরী আইন ২০১ এর ৩৯ (২) উপধারা এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল)
বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি মোতাবেক পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকা শাহনাজ পারভীনকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রদান করা হয়।
কিন্তু অদ্যবদি শাহনাজ পারভীন বহাল তবিয়তে নিজ কর্মস্থল ও স্ব-পদে রয়েছেন। অথচ শাহনাজ পারভীনের
বিরুদ্ধে বরখাস্তের আদেশ এবং আরো অনেক অভিযোগ থাকা স্বত্বেও চাকুরীস্থলে থেকে বিভিন্ন ট্রেনিং ও অন্যান্য
কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ গ্রহন করছেন। তাছাড়া তিনি বেতন ভাতাদি নিয়মিত ভাবে ভোগ করে চলেছেন। কোন অদৃশ্য শক্তির বলে এত অভিযোগ থাকা
স্বত্বেও কর্মস্থলে চাকুরীরত অবস্থায় রয়েছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় ।
তার মধ্যে মোহাম্মদপুর থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন / ২০১৮ মামলা নং-১৩১ (১১) ২০২০ সালের ধারায় ২০১৮ সালের ধারা ২৪/২৬/২৯(১) মামলা রয়েছে। এই মামলায় বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডি, ঢাকা সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) সাইবার ইনভেস্টিগেশন এন্ড অপারেশন এর উপ পুলিশ পরিদর্শক ইমাম মেহেদী গত ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ইং তারিখে বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডি, ঢাকা, সাইবার পুলিশ সেন্টারের সহকারী পুলিশ সুপার ফাহমিদা সুলতানা নেন্সির অনুমতি নিয়ে ২ দিনের জিজ্ঞাসা বাদের জন্য বিজ্ঞ মূখ্য মহানগর হাকিম ঢাকা বরাবর আবেদন করেন। এছাড়া শাহানাজ পারভীনের সাবেক স্বামী ও তার পরিবারের ছবি ও নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ফেক আইডি খুলিয়া বিভিন্ন অশালীন পোষ্ট করায় ধারা ২৪/২৫/২৬/২৯/৩৫ ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। শাহানাজ পারভীনের স্বামী মাহবুব হোসেন মোল্লা এ মামলায় প্রায় কয়েক মাসের মত কারাদন্ড ভোগ করেন। গত ৩০/০৭/২০১৩ ইং তারিখে বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডি, ঢাকা সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) সাইবার ইনভেস্টিগেশন এন্ড অপারেশন চূড়ান্ত চার্জশিট বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করিয়াছেন।
মাদারীপুর জেলা সদর থানায় গত ০৭/০৪/২০২২ই তারিখে শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে জি. আর, মামলা নং- ১৯০/২০২২ (মাদারীপুর) ধারা ৩৪১/৩২৩/২৭৯/৫০৬(২) দঃবিঃ মামলা চলমান রয়েছে।
উক্ত মামলাটি এফআইআর গ্রহণের পর গত ৩০/০৪/২০১২ইং তারিখে এস আই আজিজুল হক (নি:), বিপি- ৮৪০৩০৯০০৬৭, মোবাঃ ০১৯২০৪৭৫৬৪০, ২নং পুলিশ ফাঁড়ি সদর মডেল থানা, মাদারীপুর তদন্ত পূর্বক অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামরুল ইসলাম মিঞা, বিপি- ৬৮৯৬০১০৫৬৬, মোবাঃ 01620098৩৭০, ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র), মাদারীপুর বিজ্ঞ আদালতে ১নং আসামী শাহনাজ পারভীন ও ২ নং আসামী হাসান মীর বিরুদ্ধে ধারায় ৩৪১/৩২৩/৩৯৭/৫০৬ (২) / ১১৪ পেনাল কোড এ বিচারের স্বার্থে বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত চার্জশিট দাখিল করেন ।
উপরোক্ত বিষয়ে অনুসন্ধান কালে আরো জানা যায়, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকা শাহনাজ পারভীন
বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কেন্দ্রে থাকাকালীন অবস্থায় গর্ভকালীন সেবা কার্ড নিতে শাহানাজ পারভীনকে নগদ টাকা দিতে হতো বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল।
উক্ত বিষয়ে শীর্ষ দৈনিক জাতীয় ও স্থানীয় প্রায় ১৪ (চৌদ্দ) টি গণমাধ্যমে শাহনাজ পারভীনের অপকর্ম ও দূর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
উক্ত বিষয়ের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ১২ নং জিউধরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা (FWV) শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন সেবা গ্রহণকারী ৮ নারী। তারা হলেন- ডুমুরিয়া গ্রামের সুমি আক্তার (২২), ভেউয়াতলা গ্রামের লিমা আক্তার (৩৩) নুরজাহান (৩০) ঝর্ণা বেগম (৩৮) সুপর্ণা (৩০), রিপা মৃধা, প্রিয়াংকা শীল (৩৪), ও শনিরজোড় গ্রামের সেলিনা বেগম (৩২)।
এই মায়েরা অভিযোগ করেন, তাদের প্রত্যেককে সেবা গ্রহণের পরে সেবা কার্ড পেতে FWV শাহানাজ পারভীনকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। গত ২৫ অক্টোবর/২০২০ ইং সালে টাকা লেনদেনের ঘটনা ঘটে। পরে ওই টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের কাছে জমা করা হলেও এই মায়েরা এখন পর্যন্ত টাকা ফেরত পাননি।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে শাহনাজ পারভীন বলেন কয়েকজন সেবা গ্রহীতার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এর সমাধানও হয়ে গেছে এ বিষয়ে ওই কেন্দ্রের প্রধান উপসহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. ইকবাল হোসেন বলেন, কয়েকজন সুবিধাভোগীর কাছ থেকে টাকা গ্রহণ ও ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে শুনেছি। এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিলদার হোসেন বলেন, গর্ববর্তী মায়েদের সেবা কার্ডের বিনিময়ে ঢাকা নেওয়ার কথা শুনেছি। তবে কেউ এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেননি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয় মৌলভীবাজার এ শাহনাজ পারভীন এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে তার সাবেক স্বামী এম. এ মুহিত কতৃক মামলা নং ৬৪/২০২৩ চলমান রয়েছে।
উপরোক্ত শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ ও বরখাস্থকরণ, দূর্নীতির প্রমাণ সব কিছু থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট মহা-পরিচালক পরিকল্পনা অধিদপ্তর কেন অদ্যবধি পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বিষয়টির রহস্য কি জনমনে সেই প্রশ্ন আসছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে উক্ত বিষয়ে শাহনাজ পারভীনকে কেন এখনো বরখাস্ত করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

স্বপদে রহস্যময়ভাবে বহাল পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই

আপডেট টাইম : ০৭:৪৮:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাহেলা সিদ্দিকা : আসামী শাহানাজ পারভীন, পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা সদর ক্লিনিক, মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র, মাদারীপুর সদর, জেলা: মাদারীপুরকে সি-আর মামলা নং- ৩২৮/২০২২, ধারা- ৪০৬/২২০/১০৯ পেনালকোড গৌরনদী বরিশাল মামলায় গত ১৪/১১/২০২২ ইং তারিখে রোজ সোমবার আনুমানিক রাত ৯:৪৫ ঘটিকায় এস.আই সিরাজ মোবাইল নং- ০১৮৩৪- ৭৭৩০১৯ ও মহিলা পুলিশ কনস্টেবল- ইভা খানম মোবাইল নং- ০১৮৬৫-০৮৪৬৭১, কালকিনী থানা, শানাজ পারভীনকে মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার করে কালকিনী থানায় নেওয়ার পরের দিন মঙ্গলবার ১৫/১১/২০২২ ইং তারিখে মাদারীপুর বিজ্ঞ আদালতে চালান দেওয়া হয়। বাদী আসমা খানম।
মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ শাহানাজ পারভীনকে মিলন টেইলার্স, মোহাম্মদপুর বাসস্টান্ড সংলগ্ন সুপার মার্কেট হতে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছেন। এস.এ.আই মোশাররফ, মোহাম্মদপুর থানা ওসি ইনচার্জ আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বিজ্ঞ আদালত, ঢাকায় চালান দেন।
বরখাস্তের নির্দেশ দিলেও স্বপদে রহস্যময় ভাবে বহাল পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকা শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই

মাদারীপুর জেলার সদর মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হিসেবে কর্মরত শাহনাজ পারভীনকে ঢাকা জেলাঃ এবং মাদারীপুর ও বরিশাল জেলাঃ বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক গ্রেফতারী পরওয়ানা ও হাজত বাস জারী হওয়া সরকারি চাকরী আইন ২০১ এর ৩৯ (২) উপধারা এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি মোতাবেক স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশ ক্রমে উপ-সচিব পার- ২ মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন সাক্ষরিত স্বারক নং ৫৯,০০,০০00.110.19.086.21-৬৩৮ তাং- ২৪/০৭/২০২২ এ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক শাহানাজ পারভীনকে বরখাস্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দিলেও কার্যকর করা হয়নি এখনো।
শাহনাজ পারভীনে বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশক্রমে মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন উপ-সচিব সাক্ষরিত স্বারক নং 59.00.0000.110.19.086.21-638 তাং- ২৪ জুলাই ২০২২ ইং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহা- পরিচালক কে নির্দেশ প্রদান করা হয়।কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবের ঐ নির্দেশ তোয়াক্কা না করে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে বহাল রয়েছেন শাহনাজ পারভীন।
শাহনাজ পারভীন, পিতা- শাহজাহান মীর, মাতা- ফাতেমা বেগম, স্বামী মাহাবুব হোসেন মোল্লা, গ্রাম: লক্ষীখালী, ডাকঘর: হাওলাডাঙ্গা, থানা: মোড়লগঞ্জ, জেলা: বাগেরহাট- গত ১৫/০৪/২/২০১৮ ইং তারিখে উক্ত পদে চাকুরীতে যোগদান করেন। এস.এস.সি পাশ করে উক্ত পদের বিজ্ঞপ্তির আবেদনের তারিখ শেষ হয়ে গেলে জালিয়াতির মাধ্যমে ০৮ (আট) মাস পরে শাহানাজ পারভীন আবেদন পত্র জমাদান করেন এবং চাকুরীপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে মাদারীপুর জেলার সদর মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা হিসেবে কর্মরত রয়েছে।
শাহানাজ পারভীন অন্যের নামে ১০০/- ট্রেজারী চালান জালিয়াতি করে আবেদন পত্র জমাদানের তারিখ শেষ হওয়ার ৮ মাস পর তার ঘনিষ্টজন মোঃ আব্দুল হান্নান ও আলীমের মাধ্যমে আবেদন জমা প্রদান করেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে ০৪/১২/২০১৩ খ্রিঃ তারিখের ৪৫.১৬৯.০১১.০০.০০.০২০ ২০১৩-৩১১ এবং ১২/০৫/২০১৪ খ্রিঃ তারিখের ৪৫.169.011.00.00020, 2013-1৭৪ নম্বর ছাড়পত্র মোতাবেক পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ০২ জুন, ২০১৪ খ্রিঃ তারিখের পপঅ প্রশা-১/নিয়োগ- ২২২ / ২০১৪ / ১২৮ মোতাবের স্মারকে জারিকৃত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষানতী মনোনয়নের লক্ষ্যে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি গত ০৪/০৬/২০১৪ সন তারিখে দৈনিক জনকণ্ঠ ও ০৫০৬/২০১৪ সন তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে ৬৪৮ জন পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা প্রশিক্ষনার্থী জনবল নিয়োগের জন্য প্রকাশ করিয়াছিলেন। এই জালিয়াতির বিষয়ে জনৈক ব্যক্তি মাননীয় মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় বরাবর অভিযোগ করিলে মন্ত্রী মহোদয় শাহানাজ পারভীনের বিরুদ্ধে গত ১০/০৯/২০২০ ইং তারিখে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। মাননীয় মন্ত্রীর নির্দেশে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর স্মারক নং: 59.11.0000.404.27.০০২.২১.৯৮ তাং- ২১/১১/২০২১ অনুযায়ী আবু তাহের মোঃ সানাউল্লাহ নূরী, উপপরিচালক গত ৩০/১১/২০২১ খ্রিঃ তারিখ মঙ্গলবার তদন্ত করেন।
৫৯.০০.০০০০.১১০.১৯.০৮৬.২১-৬৩৮ সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞ আদালত কতৃক গ্রেফতারী পরওয়ানা ও হাজত বাস জারী হওয়া সরকারি চাকরী আইন ২০১ এর ৩৯ (২) উপধারা এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল)
বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি মোতাবেক পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকা শাহনাজ পারভীনকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রদান করা হয়।
কিন্তু অদ্যবদি শাহনাজ পারভীন বহাল তবিয়তে নিজ কর্মস্থল ও স্ব-পদে রয়েছেন। অথচ শাহনাজ পারভীনের
বিরুদ্ধে বরখাস্তের আদেশ এবং আরো অনেক অভিযোগ থাকা স্বত্বেও চাকুরীস্থলে থেকে বিভিন্ন ট্রেনিং ও অন্যান্য
কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ গ্রহন করছেন। তাছাড়া তিনি বেতন ভাতাদি নিয়মিত ভাবে ভোগ করে চলেছেন। কোন অদৃশ্য শক্তির বলে এত অভিযোগ থাকা
স্বত্বেও কর্মস্থলে চাকুরীরত অবস্থায় রয়েছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় ।
তার মধ্যে মোহাম্মদপুর থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন / ২০১৮ মামলা নং-১৩১ (১১) ২০২০ সালের ধারায় ২০১৮ সালের ধারা ২৪/২৬/২৯(১) মামলা রয়েছে। এই মামলায় বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডি, ঢাকা সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) সাইবার ইনভেস্টিগেশন এন্ড অপারেশন এর উপ পুলিশ পরিদর্শক ইমাম মেহেদী গত ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ইং তারিখে বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডি, ঢাকা, সাইবার পুলিশ সেন্টারের সহকারী পুলিশ সুপার ফাহমিদা সুলতানা নেন্সির অনুমতি নিয়ে ২ দিনের জিজ্ঞাসা বাদের জন্য বিজ্ঞ মূখ্য মহানগর হাকিম ঢাকা বরাবর আবেদন করেন। এছাড়া শাহানাজ পারভীনের সাবেক স্বামী ও তার পরিবারের ছবি ও নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ফেক আইডি খুলিয়া বিভিন্ন অশালীন পোষ্ট করায় ধারা ২৪/২৫/২৬/২৯/৩৫ ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। শাহানাজ পারভীনের স্বামী মাহবুব হোসেন মোল্লা এ মামলায় প্রায় কয়েক মাসের মত কারাদন্ড ভোগ করেন। গত ৩০/০৭/২০১৩ ইং তারিখে বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডি, ঢাকা সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) সাইবার ইনভেস্টিগেশন এন্ড অপারেশন চূড়ান্ত চার্জশিট বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করিয়াছেন।
মাদারীপুর জেলা সদর থানায় গত ০৭/০৪/২০২২ই তারিখে শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে জি. আর, মামলা নং- ১৯০/২০২২ (মাদারীপুর) ধারা ৩৪১/৩২৩/২৭৯/৫০৬(২) দঃবিঃ মামলা চলমান রয়েছে।
উক্ত মামলাটি এফআইআর গ্রহণের পর গত ৩০/০৪/২০১২ইং তারিখে এস আই আজিজুল হক (নি:), বিপি- ৮৪০৩০৯০০৬৭, মোবাঃ ০১৯২০৪৭৫৬৪০, ২নং পুলিশ ফাঁড়ি সদর মডেল থানা, মাদারীপুর তদন্ত পূর্বক অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামরুল ইসলাম মিঞা, বিপি- ৬৮৯৬০১০৫৬৬, মোবাঃ 01620098৩৭০, ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র), মাদারীপুর বিজ্ঞ আদালতে ১নং আসামী শাহনাজ পারভীন ও ২ নং আসামী হাসান মীর বিরুদ্ধে ধারায় ৩৪১/৩২৩/৩৯৭/৫০৬ (২) / ১১৪ পেনাল কোড এ বিচারের স্বার্থে বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত চার্জশিট দাখিল করেন ।
উপরোক্ত বিষয়ে অনুসন্ধান কালে আরো জানা যায়, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকা শাহনাজ পারভীন
বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কেন্দ্রে থাকাকালীন অবস্থায় গর্ভকালীন সেবা কার্ড নিতে শাহানাজ পারভীনকে নগদ টাকা দিতে হতো বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল।
উক্ত বিষয়ে শীর্ষ দৈনিক জাতীয় ও স্থানীয় প্রায় ১৪ (চৌদ্দ) টি গণমাধ্যমে শাহনাজ পারভীনের অপকর্ম ও দূর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
উক্ত বিষয়ের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ১২ নং জিউধরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা (FWV) শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন সেবা গ্রহণকারী ৮ নারী। তারা হলেন- ডুমুরিয়া গ্রামের সুমি আক্তার (২২), ভেউয়াতলা গ্রামের লিমা আক্তার (৩৩) নুরজাহান (৩০) ঝর্ণা বেগম (৩৮) সুপর্ণা (৩০), রিপা মৃধা, প্রিয়াংকা শীল (৩৪), ও শনিরজোড় গ্রামের সেলিনা বেগম (৩২)।
এই মায়েরা অভিযোগ করেন, তাদের প্রত্যেককে সেবা গ্রহণের পরে সেবা কার্ড পেতে FWV শাহানাজ পারভীনকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। গত ২৫ অক্টোবর/২০২০ ইং সালে টাকা লেনদেনের ঘটনা ঘটে। পরে ওই টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের কাছে জমা করা হলেও এই মায়েরা এখন পর্যন্ত টাকা ফেরত পাননি।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে শাহনাজ পারভীন বলেন কয়েকজন সেবা গ্রহীতার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এর সমাধানও হয়ে গেছে এ বিষয়ে ওই কেন্দ্রের প্রধান উপসহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. ইকবাল হোসেন বলেন, কয়েকজন সুবিধাভোগীর কাছ থেকে টাকা গ্রহণ ও ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে শুনেছি। এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিলদার হোসেন বলেন, গর্ববর্তী মায়েদের সেবা কার্ডের বিনিময়ে ঢাকা নেওয়ার কথা শুনেছি। তবে কেউ এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেননি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয় মৌলভীবাজার এ শাহনাজ পারভীন এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে তার সাবেক স্বামী এম. এ মুহিত কতৃক মামলা নং ৬৪/২০২৩ চলমান রয়েছে।
উপরোক্ত শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ ও বরখাস্থকরণ, দূর্নীতির প্রমাণ সব কিছু থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট মহা-পরিচালক পরিকল্পনা অধিদপ্তর কেন অদ্যবধি পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বিষয়টির রহস্য কি জনমনে সেই প্রশ্ন আসছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে উক্ত বিষয়ে শাহনাজ পারভীনকে কেন এখনো বরখাস্ত করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।