নাহিদা আক্তার পপি, বিশেষ প্রতিনিধি ক্রাইম
করোনাভাইরাসের টিকার নিবন্ধন শেষে দ্রুত এসএমএস পাইয়ে দিতে পারে বলে প্রচার করে প্রতারণায় নামে একটি চক্র। এসএমএস পাওয়ার কথা বলে চক্রটি প্রতিজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা করে নিত।
পরে নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল এলাকা থেকে এই চক্রের চারজনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)।
আটকরা হলেন- মো. নুরুল হক (৪৭), মো. সাইফুল ইসলাম (৩০), মো. ইমরান হোসেন (২৩) ও দুলাল মিয়া (৩৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত চারটি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, সাধারণত বিদেশগামীদের টিকা গ্রহণে বাধ্যবাধকতা ও তাড়া থাকে। তাদের অনেক ক্ষেত্রে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, কারো টিকিট কাটা থাকে। তাদের টিকাগ্রহণে এই তাড়ার সুযোগে চক্রটি অর্থ আত্মসাতের সুযোগ নেয়। এখন পর্যন্ত অন্তত দুই শতাধিক মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের টিকা দেওয়ার জন্য সরকার সাতটি হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিয়েছে। চক্রটি প্রবাসীদের টার্গেট করেই সেসব হাসপাতালের সামনে ঘুরাফেরা করতে থাকে। টিকা পেতে বিভিন্ন তাড়ার কারণে প্রবাসীরা নির্ধারিত হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। আর তখনই প্রতারক চক্রটি দ্রুত ম্যাসেজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
টাকা নেওয়ার পর অনেকে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাসেজ পেয়ে যেতেন, তখন এই প্রতারকরা নিজেরা ক্রেডিট নিতেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তদবির করে দুই-একটি ম্যাসেজের দেওয়ার ব্যবস্থা করত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা প্রলোভন দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, যারা মেসেজ পেতেন তারা সাধারণত অভিযোগ করেননি। কিন্তু টাকা দিয়েও ম্যাসেজ না পেয়ে অনেকে অভিযোগ করেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের তথ্য পাওয়া গেছে, যাদের কাছ থেকে আড়াই থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করা হয় বলেও জানান তিনি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রের মূলহোতা আটক নুরুল হক। আটক সাইফুল ও ইমরান হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ভিকটিমদের দ্রুত ম্যাসেজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। এরপর রাজি হলে তাদেরকে নুরুল হকের কাছে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হতো। এর ওপর নির্ভর করে কতদিনের মধ্যে ম্যাসেজ যাবে তা জানাতে ভিকটিমদের দুলালের কাছে নিয়ে যাওয়া হতো।
তিনি বলেন, নুরুল দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন, ইমরান একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরিরত। সাইফুল রমনা এলাকার চা বিক্রেতা। তিনি একসময় একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুলাল মিয়া একটি হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে কর্মরত। তাদের অবস্থান ও পেশার কারণে বিদেশগামীদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হয়। তারা মুগদা, শাহবাগ, রমনা, শেরেবাংলা নগর, মিরপুর, মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আটক দুজন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত থাকার সুবাদে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে তাদের পূর্ব পরিচয় ছিল। তাদের কাছ থেকে আমরা ২-৩ জনের তথ্য পেয়েছি, যাদের মাধ্যমে হয়ত ১০-১৫টি ম্যাসেজ তারা পাঠাতে পেরেছেন। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।
এছাড়া, মামলার তদন্তে জড়িত অন্যদের তথ্য বেরিয়ে আসবে, সে অনুযায়ী পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।