ঢাকা ০১:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

পদ্মা নদিতে চোখের পলকেই বাড়ীঘর নিয়ে যায় কেউ সরাতে পারে কেউ পারে না

নুরে আলম হাওলাদার
শরীয়তপুরে পদ্মা নদীতে গত কয়েকদিন ধরে টানা পানি বাড়ছে। এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানি ঢুকে পড়েছে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায়। জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নে পাঁচদিনে প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা নদীতে ধসে পড়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার শিল্পী জানান, বুধবার (২৫ আগস্ট) সকালে পদ্মানদীর পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুন্ডেরচর ইউনিয়নের বাবুর চর, ব্যাপারী কান্দি, খাঁ কান্দি, লুডু মাদবর কান্দি, আপতু ব্যাপারী কান্দি ও মৃধা কান্দি গ্রামের পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় অন্তত ১০০টি বসত ঘর, ফসলি জমিসহ গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে আতঙ্কিত পরিবারগুলো।

লুডু মাদবর কান্দি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান রাঢ়ী বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে আমাদের এখানে নদী ভাঙন শুরু হইছে। আমাদের আশেপাশের সব বাড়িঘর ভেঙে গেছে। আমাদের টাও নদীতে নিয়ে গেছে। এত দ্রুত ভাঙছে যে ঘর সরাইয়া অন্য জায়গায় নেওয়ার সুযোগ পাইনা। এমনে ভাঙতে থাকলে আমাদের এলাকায় কোন বাড়ি ঘরই থাকবো না। আমরা এখন বাজারের পাশে একটা খালি জায়গায় নিয়ে ঘরগুলো রাখছি।’

একই গ্রামের বাসিন্দা শহরবানু বলেন, ‘সারাটা জীবন গেল ভাঙতে ভাঙতেই। এই জীবনে কতবার যে বাড়ি ঘর ভাঙছে তার কোন হিসাব নাই। মেম্বার চেয়ারম্যানরা আসতো কিছু চাল ডাল দিয়া যাইতো ওই পর্যন্তই শেষ। আর কেউ কোনো খোঁজখবর নিতো না। প্রতিবারই বর্ষা আইলে ভাঙে। ভাঙতে ভাঙতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আর কোন ত্রাণ বা সাহায্য সহযোগিতা চাই না। এখন চাই শুধু নদী ভাঙন থেকে বাঁচতে। সরকারের কাছে দাবি, আমাদের এইখানে যেন বেড়িবাঁধ কইরা দেয়। তাইলে আমরা পয়-পোলাপান নিয়ে থাকতে পারুম।’১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার খাদিজা বেগম বলেন, চার-পাঁচ দিন যাবত এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। চোখের পলকেই বাড়িঘর নদীতে নিয়ে যায়। কেউ সরাতে পারে, কেউ পারে না। এভাবে নদী ভাঙতে থাকলে এই চর এলাকা থাকবে না।

স্থানীয় এনজিও এসডিএসে এর জোনাল ম্যানেজার মো. মনির হোসেন বলেন, কুন্ডেরচর এলাকায় নদী ভাঙন শুরুর সময় থেকেই এসডিএস ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে তাৎক্ষণিকভাবে দুটি ট্রলারের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় কুন্ডেরচর ইউনিয়নের প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। এর আগে ওই এলাকায় জিওটিউব ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়েছিলো। আবার ওই এলাকায় জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলা হবে।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে মেম্বার চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া সরেজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

পদ্মা নদিতে চোখের পলকেই বাড়ীঘর নিয়ে যায় কেউ সরাতে পারে কেউ পারে না

আপডেট টাইম : ০৬:০৮:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অগাস্ট ২০২১
নুরে আলম হাওলাদার
শরীয়তপুরে পদ্মা নদীতে গত কয়েকদিন ধরে টানা পানি বাড়ছে। এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানি ঢুকে পড়েছে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায়। জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নে পাঁচদিনে প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা নদীতে ধসে পড়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার শিল্পী জানান, বুধবার (২৫ আগস্ট) সকালে পদ্মানদীর পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুন্ডেরচর ইউনিয়নের বাবুর চর, ব্যাপারী কান্দি, খাঁ কান্দি, লুডু মাদবর কান্দি, আপতু ব্যাপারী কান্দি ও মৃধা কান্দি গ্রামের পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় অন্তত ১০০টি বসত ঘর, ফসলি জমিসহ গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে আতঙ্কিত পরিবারগুলো।

লুডু মাদবর কান্দি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান রাঢ়ী বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে আমাদের এখানে নদী ভাঙন শুরু হইছে। আমাদের আশেপাশের সব বাড়িঘর ভেঙে গেছে। আমাদের টাও নদীতে নিয়ে গেছে। এত দ্রুত ভাঙছে যে ঘর সরাইয়া অন্য জায়গায় নেওয়ার সুযোগ পাইনা। এমনে ভাঙতে থাকলে আমাদের এলাকায় কোন বাড়ি ঘরই থাকবো না। আমরা এখন বাজারের পাশে একটা খালি জায়গায় নিয়ে ঘরগুলো রাখছি।’

একই গ্রামের বাসিন্দা শহরবানু বলেন, ‘সারাটা জীবন গেল ভাঙতে ভাঙতেই। এই জীবনে কতবার যে বাড়ি ঘর ভাঙছে তার কোন হিসাব নাই। মেম্বার চেয়ারম্যানরা আসতো কিছু চাল ডাল দিয়া যাইতো ওই পর্যন্তই শেষ। আর কেউ কোনো খোঁজখবর নিতো না। প্রতিবারই বর্ষা আইলে ভাঙে। ভাঙতে ভাঙতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আর কোন ত্রাণ বা সাহায্য সহযোগিতা চাই না। এখন চাই শুধু নদী ভাঙন থেকে বাঁচতে। সরকারের কাছে দাবি, আমাদের এইখানে যেন বেড়িবাঁধ কইরা দেয়। তাইলে আমরা পয়-পোলাপান নিয়ে থাকতে পারুম।’১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার খাদিজা বেগম বলেন, চার-পাঁচ দিন যাবত এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। চোখের পলকেই বাড়িঘর নদীতে নিয়ে যায়। কেউ সরাতে পারে, কেউ পারে না। এভাবে নদী ভাঙতে থাকলে এই চর এলাকা থাকবে না।

স্থানীয় এনজিও এসডিএসে এর জোনাল ম্যানেজার মো. মনির হোসেন বলেন, কুন্ডেরচর এলাকায় নদী ভাঙন শুরুর সময় থেকেই এসডিএস ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে তাৎক্ষণিকভাবে দুটি ট্রলারের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় কুন্ডেরচর ইউনিয়নের প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। এর আগে ওই এলাকায় জিওটিউব ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়েছিলো। আবার ওই এলাকায় জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলা হবে।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে মেম্বার চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া সরেজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।