মু,হেলাল আহম্মেদ(রিপন), পটুয়াখালী
পটুয়াখালী জেলার শহরস্থ ফার্মেসিগুলোতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে ব্যপকহারে।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এই ওষুধ কিনতে না পারায় দুর্ভোগে পড়ছেন দূরদুরান্তের রোগীরা। এ বিষয়ে ফার্মেসি মালিকরা জানান, চাহিদা অনুযায়ী ওষুধের সরবরাহ নেই বলে তারা বিক্রি করতে পারছেন না,এবং ক্রেতাদের চাহিদা ও মেটাতে পারছেন না।
এদিকে, জেলায় দিনবা দিন করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সংক্রমণের হার ৪০ দশমিক ৪২ ভাগ। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোতে বেড়েই চলেছে রোগীর চাপ, সেই সঙ্গে বাড়ছে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের চাহিদা। এতে করোনায় আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি সাধারণ রোগীর চাহিদা অনুযায়ী নাপা, নাপা এক্সট্রা, নাপা এক্সটেন্ড, এইস প্লাস, নাপা সিরাপসহ প্যারাসিটামল এই জাতীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে জেলা শহরের ফার্মেসিগুলোতে।
৩ দিনের সরেজমিন অনুসন্ধানে ঘুরে দেখামেলে, চাহিদা অনুযায়ী প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সরবরাহ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মাদার বুনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সবুজ মিয়া বলেন, ‘আমার রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে। সোমবার ১৩ জুলাই) সকালে জ্বরের ওষুধ নাপার জন্য হাসপাতালের সামনের ফার্মেসিতে যাই। পাঁচটি ফার্মেসি ঘুরে তারপরে ওষুধ পেয়েছি। তাও আবার দাম বেশি রেখেছে দোকানদার।’
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বাসিন্দা আসমা বেগম বলেন, ‘আমার ১০ বছরের ছেলে মো. আরিফ হোসেনের টাইফয়েড হয়েছে। তাকে নিয়ে সেমবার সকালে ডাক্তার দেখতে এসেছি পটুয়াখালীতে। বেশ কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরেও প্রেসক্রিপশনের সব ওষুধ পাইনি। বিশেষ করে জ্বরের জন্য নাপা খুঁজে পায়নি।’
জ্বরের ওষুধ খুঁজতে ছিলেন স্কুল শিক্ষক রহমান। তিনি বলেন, ‘কলেজ রোড এলাকা থেকে ওষুধ খুঁজতে খুঁজতে সদর রোডে এসেছি, এরপরে এক পাতা নাপা ওষুধ সংগ্রহ করেছি। কিন্তু দোকানি দাম বেশি নিয়েছেন।’
পটুয়াখালী পৌরশহরের নিউমার্কেটের ফার্মেসি মায়ের দোয়া মেডিক্যাল হলের মালিক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘জ্বরের ওষুধ এইস, এইস প্লাস, এইস এক্সআর ট্যাবলেট, ফাস্ট, ফাস্ট এক্সআর ওষুধের সঙ্কট আছে। কোম্পানি যে পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করে তা চাহিদার তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। গত কয়েকদিন ধরে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই কোম্পানিগুলোতে ওষুধের জন্য অর্ডার দিচ্ছি। আমি আজ দুই বক্স ওষুধ পেয়েছি। তা সকালেই বিক্রি হয়ে গেছে। সরবরাহ না থাকায় আমাদের কিছু করার থাকছে না।’
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে জামাল ফার্মেসির মালিক জামাল জানান, হঠাৎ করে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে জ্বরের ওষুধের চাহিদা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। এতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। এই সময় নাপা ও এইস ট্যাবলেট ও সিরাপের সরবরাহ না থাকলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।’
নতুন বাজার এলাকার সোনালি মেডিক্যাল হলের মালিক মলয় কুমার কর্মকার বলেন, ‘বর্তমানে যার এক পাতা প্যারাসিটামল ওষুধ প্রয়োজন সে ১০ পাতা ওষুধ কিনছে। প্যারাসিটামল ওষুধ সংকট দেখা দেওয়ার এটাই মূল কারণ। যাদের প্রয়োজন নেই তারাও ওষুধ কিনে ঘরে রেখে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘বিষয়টা আমি শুনেছি কিন্তু ওষুধ সংকট হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখবো।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, ‘আমাদের সরকারি ওষুধের কোনও সংকট নেই। কেন ফার্মেসিতে ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে সে বিষয়ে ড্রাগ সুপার ভালো বলতে পারবেন।’
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, কোনও ফার্মেসি এই ওষুধগুলোর কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে এবং বেশি দামে বিক্রির কেন প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি ।