ঢাকা ০৫:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাউফলের নসিমনকে বিয়ে করে, সেই আলোচিত চেয়ারম্যান বরখাস্ত হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে কাজী

মু,হেলাল আহম্মেদ(রিপন), পটুয়াখালী
পটুয়াখালীর বাউফলে সেই কিশোরী বধূ নাজমিন আক্তার নসিমনকে বিয়ের ঘটনায় সারা দেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে চলছে অত্র এলাকায়।
বিচারপ্রার্থী অসহায় ওই কিশোরীকে প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করায় কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে ইতিমধ্যে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
কিন্তু এ ঘটনায় জড়িত দুই কাজীর বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় সচেতন নাগরিকদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যদিও আলোচিত ওই বাল্য বিয়ের ঘটনায় নাজিরপুর ও কনকদিয়া ইউনিয়নের দুই কাজী নিজেদেরকে বাঁচাতে বিভিন্ন মহলে দেনদরবার শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৮ মে কনকদিয়া ইউনিয়নের চুনারপুল এলাকার নজরুল ইসলামের মেয়ে নাজমিন আক্তার নসিমনের সাথে নাজিরপুর ইউনিয়নের তাঁতেরকাঠী গ্রামের ফারুক আকনের ছেলে মোঃ সোহেলের দুই লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে প্রথম বিয়ে হয়। নসিমন তার স্বামী সোহেলকে তালাক দিয়ে প্রেমিক রমজানের কাছে ফিরে যেতে চায়। নসিমনের পিতা নজরুল ইসলাম প্রেমিক রমজানের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি মীমাংসার জন্য গত ২৪ জুন কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদারের মধ্যস্থতায় সালিশ-বৈঠকে বসেন। সেখানে নসিমনকে দেখে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন। নসিমনকে একটি কক্ষে নিয়ে চেয়ারম্যান নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিয়েতে রাজী করান। নসিমন রাজী হওয়ার পর চেয়ারম্যান কাজী ডেকে তার স্বামী সোহেলের সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ করান।
গত ২৫ জুন শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর একই কাজী ডেকে নসিমনকে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। এ খবর পেয়ে নসিমনের প্রেমিক রমজান কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরের দিন শনিবার ভোরে চেয়ারম্যান ফের কাজী ডেকে তালাকনামায় নসিমনের একটি সই রেখে তাকে প্রেমিক রমজানের কাছে পাঠিয়ে দেন। প্রেমিক রমজান শনিবারই নসিমনকে বিয়ে করেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপণী পরীক্ষা পাশের সার্টিফিকেট অনুযায়ী নসিমন ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল জম্মগ্রহণ করেন। সেক্ষেত্রে তার বয়স মাত্র ১৪ বছর। বতর্মানে নসিমন কনকদিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। করোনাকালীন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় নসিমনকে বিয়ে দেন তার বাবা মা।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নাজিরপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) সাখাওয়াত হোসাইনের পরামর্শে নসিমনের বাবা নজরুল ইসলাম একটি নকল জম্মসনদ তৈরি করে নসিমনকে বিয়ে দেন। নকল ওই জম্মসনদে নসিমনের বয়স দেখানো হয় ২০০৩ সালের ১১ এপ্রিল।
পরে কনকদিয়া ইউনিয়নের কাজী মোঃ আইয়ুব একই জম্মসনদ ব্যবহার করে চেয়ারম্যানের সঙ্গে নসিমনের বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। যদিও কাজী আইয়ুব ও কাজী শাখাওয়াত জাল জম্মসনদের দায় নিতে রাজী নন।
তারা বলেন, বিয়ের সময় জম্ম সনদ নিয়ে আসেন বর কনের অভিভাবক। যদি অন্যায় করে থাকেন তাহলে অভিভাবকরা করেছেন। আমরা কেন করবো।
এদিকে বিয়ের তালাকনামা কার্যকর হতে কমপক্ষে ৩ মাস (৯০দিন) অপেক্ষা করতে হয়। এক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। নসিমনের কাছ থেকে তালাকনামা রেখে পরের দিন চেয়ারম্যান শাহিন তাকে বিয়ে করেছেন। কাজী কোন ভাবেই এই বিয়ে রেজিষ্ট্রি করতে পারেন না।
কনকদিয়া ইউনিয়নের কাজী আইয়ুব বলেন, আমি বিয়ের সময় ঢাকায় ছিলাম। আমার সহকারি হয়তো কাজটি করেছেন। আপনার সহকারি বিয়ের কাজ সম্পন্ন করলে তার দায়ভার আপনার কি-না এমন প্রশ্নে বলেন, বিয়ের কাবিননামায় আমার কোন স্বাক্ষর নেই।
বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতের কয়েকটি নির্দেশনা রয়েছে। নসিমনের বিয়ে এবং জন্ম নিবন্ধনের বিষয়গুলো তদন্ত চলছে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

বাউফলের নসিমনকে বিয়ে করে, সেই আলোচিত চেয়ারম্যান বরখাস্ত হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে কাজী

আপডেট টাইম : ০১:০৪:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ জুলাই ২০২১
মু,হেলাল আহম্মেদ(রিপন), পটুয়াখালী
পটুয়াখালীর বাউফলে সেই কিশোরী বধূ নাজমিন আক্তার নসিমনকে বিয়ের ঘটনায় সারা দেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে চলছে অত্র এলাকায়।
বিচারপ্রার্থী অসহায় ওই কিশোরীকে প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করায় কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে ইতিমধ্যে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
কিন্তু এ ঘটনায় জড়িত দুই কাজীর বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় সচেতন নাগরিকদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যদিও আলোচিত ওই বাল্য বিয়ের ঘটনায় নাজিরপুর ও কনকদিয়া ইউনিয়নের দুই কাজী নিজেদেরকে বাঁচাতে বিভিন্ন মহলে দেনদরবার শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৮ মে কনকদিয়া ইউনিয়নের চুনারপুল এলাকার নজরুল ইসলামের মেয়ে নাজমিন আক্তার নসিমনের সাথে নাজিরপুর ইউনিয়নের তাঁতেরকাঠী গ্রামের ফারুক আকনের ছেলে মোঃ সোহেলের দুই লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে প্রথম বিয়ে হয়। নসিমন তার স্বামী সোহেলকে তালাক দিয়ে প্রেমিক রমজানের কাছে ফিরে যেতে চায়। নসিমনের পিতা নজরুল ইসলাম প্রেমিক রমজানের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি মীমাংসার জন্য গত ২৪ জুন কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদারের মধ্যস্থতায় সালিশ-বৈঠকে বসেন। সেখানে নসিমনকে দেখে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন। নসিমনকে একটি কক্ষে নিয়ে চেয়ারম্যান নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিয়েতে রাজী করান। নসিমন রাজী হওয়ার পর চেয়ারম্যান কাজী ডেকে তার স্বামী সোহেলের সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ করান।
গত ২৫ জুন শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর একই কাজী ডেকে নসিমনকে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। এ খবর পেয়ে নসিমনের প্রেমিক রমজান কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরের দিন শনিবার ভোরে চেয়ারম্যান ফের কাজী ডেকে তালাকনামায় নসিমনের একটি সই রেখে তাকে প্রেমিক রমজানের কাছে পাঠিয়ে দেন। প্রেমিক রমজান শনিবারই নসিমনকে বিয়ে করেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপণী পরীক্ষা পাশের সার্টিফিকেট অনুযায়ী নসিমন ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল জম্মগ্রহণ করেন। সেক্ষেত্রে তার বয়স মাত্র ১৪ বছর। বতর্মানে নসিমন কনকদিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। করোনাকালীন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় নসিমনকে বিয়ে দেন তার বাবা মা।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নাজিরপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) সাখাওয়াত হোসাইনের পরামর্শে নসিমনের বাবা নজরুল ইসলাম একটি নকল জম্মসনদ তৈরি করে নসিমনকে বিয়ে দেন। নকল ওই জম্মসনদে নসিমনের বয়স দেখানো হয় ২০০৩ সালের ১১ এপ্রিল।
পরে কনকদিয়া ইউনিয়নের কাজী মোঃ আইয়ুব একই জম্মসনদ ব্যবহার করে চেয়ারম্যানের সঙ্গে নসিমনের বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। যদিও কাজী আইয়ুব ও কাজী শাখাওয়াত জাল জম্মসনদের দায় নিতে রাজী নন।
তারা বলেন, বিয়ের সময় জম্ম সনদ নিয়ে আসেন বর কনের অভিভাবক। যদি অন্যায় করে থাকেন তাহলে অভিভাবকরা করেছেন। আমরা কেন করবো।
এদিকে বিয়ের তালাকনামা কার্যকর হতে কমপক্ষে ৩ মাস (৯০দিন) অপেক্ষা করতে হয়। এক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। নসিমনের কাছ থেকে তালাকনামা রেখে পরের দিন চেয়ারম্যান শাহিন তাকে বিয়ে করেছেন। কাজী কোন ভাবেই এই বিয়ে রেজিষ্ট্রি করতে পারেন না।
কনকদিয়া ইউনিয়নের কাজী আইয়ুব বলেন, আমি বিয়ের সময় ঢাকায় ছিলাম। আমার সহকারি হয়তো কাজটি করেছেন। আপনার সহকারি বিয়ের কাজ সম্পন্ন করলে তার দায়ভার আপনার কি-না এমন প্রশ্নে বলেন, বিয়ের কাবিননামায় আমার কোন স্বাক্ষর নেই।
বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতের কয়েকটি নির্দেশনা রয়েছে। নসিমনের বিয়ে এবং জন্ম নিবন্ধনের বিষয়গুলো তদন্ত চলছে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।