ঢাকা ০৫:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মঠবাড়িয়ায় শিশু ধর্ষণের সেই ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত- ২ আসামী হাইকোর্টে খালাস

মো. সাইদুর রহমান
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া হাতেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা আক্তার ইতি (৯)কে ২০১৪ সালে ধর্ষণের পর হত্যা ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোট। খালাসপ্রাপ্তরা হলো- উপজেলার মেহেদি হাসান স্বপন (২২) ও সুমন জমাদ্দার (২০)।

আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে বুধবার (৩০ জুন) বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এসএম আব্দুল মবিনের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মো. মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।

আপিল শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির আদালতকে বলেন,“আসামী সুমন জমাদ্দার ঘটনার সময় শিশু ছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর।

তার পক্ষে আসামির জন্মসনদ, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার কাগজপত্র, তার মা-বাবার বিয়ের কাবিননামা আদালতে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু পিরোজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিচার করে এবং তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে। এ আইনজীবী বলেন, “এসব তুলে ধরে আপিল শুনানিতে বলেছি, সুমন জমাদ্দারের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের বিচার আইনসম্মত হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আইনগত ভুল করেছে। সেই সঙ্গে তার স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করেই আরেকজনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। এক্ষেত্রে আমি বলেছি যে,শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সাক্ষ্যগত কোনো মূল্য নেই। হাই কোর্ট আমাদের এসব যুক্তি শুনে সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে দুজনকে খালাসের রায় দিয়েছেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান বলেন, “এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আসমি সুমন জমাদ্দারের জন্মসনদ সংগ্রহ করেছিলেন। তা আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু আদালত তা গ্রহণ করেনি। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে যাবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে নোট পাঠানো হয়েছে।”

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের ৯ বছর বয়সী শিশুটি উপজেলার বুখাইতলা বান্ধবপাড়া গ্রামে তার নানা বাড়িতে থেকে স্থানীয় হাতেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো। ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে শিশুটি তার নানার একটি গরু স্কুল মাঠে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায়। দুপুর গড়িয়ে গেলেও সে ঘরে ফিরে না আসায় নানাবাড়ির লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরুকরে। পরদিন দুপুরে প্রতিবেশী শাহজাহান জমাদ্দার বাগানে বিবস্ত্র অবস্থায় ওড়না পেঁচানো ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

ময়না তদন্তকারী ডাক্তার ননী গোপাল রায় তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরে ইতির বাবা ২০১৪ সালের ৬ অক্টোবর একটি মামলা করেন।

এ মামলায় তদন্ত শেষ করে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি উপরোক্ত দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। একই বছরের ৭ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামি সুমন জমাদ্দার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পরবর্তীতে এই জবানবন্দি প্রত্যাহার করেন। রাষ্ট্রপক্ষ সর্বমোট ১৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে। অপরপক্ষে আসামিদ্বয় ১১ জন সাক্ষী হাজির করে।
পরে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া আসামী দুইজনকে ফাঁসির আদেশ দেন।

পরে এ মামলায় মৃত্যুদন্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। একইসঙ্গে আসামিরাও আপিল দায়ের করে। সে আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সেরর শুনানি শেষে হাইকোর্ট আসামিদের খালাসের রায় দিলেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

মঠবাড়িয়ায় শিশু ধর্ষণের সেই ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত- ২ আসামী হাইকোর্টে খালাস

আপডেট টাইম : ০৪:৩৯:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই ২০২১

মো. সাইদুর রহমান
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া হাতেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা আক্তার ইতি (৯)কে ২০১৪ সালে ধর্ষণের পর হত্যা ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোট। খালাসপ্রাপ্তরা হলো- উপজেলার মেহেদি হাসান স্বপন (২২) ও সুমন জমাদ্দার (২০)।

আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে বুধবার (৩০ জুন) বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এসএম আব্দুল মবিনের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মো. মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।

আপিল শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির আদালতকে বলেন,“আসামী সুমন জমাদ্দার ঘটনার সময় শিশু ছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর।

তার পক্ষে আসামির জন্মসনদ, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার কাগজপত্র, তার মা-বাবার বিয়ের কাবিননামা আদালতে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু পিরোজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিচার করে এবং তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে। এ আইনজীবী বলেন, “এসব তুলে ধরে আপিল শুনানিতে বলেছি, সুমন জমাদ্দারের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের বিচার আইনসম্মত হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আইনগত ভুল করেছে। সেই সঙ্গে তার স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করেই আরেকজনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। এক্ষেত্রে আমি বলেছি যে,শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সাক্ষ্যগত কোনো মূল্য নেই। হাই কোর্ট আমাদের এসব যুক্তি শুনে সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে দুজনকে খালাসের রায় দিয়েছেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান বলেন, “এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আসমি সুমন জমাদ্দারের জন্মসনদ সংগ্রহ করেছিলেন। তা আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু আদালত তা গ্রহণ করেনি। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে যাবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে নোট পাঠানো হয়েছে।”

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের ৯ বছর বয়সী শিশুটি উপজেলার বুখাইতলা বান্ধবপাড়া গ্রামে তার নানা বাড়িতে থেকে স্থানীয় হাতেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো। ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে শিশুটি তার নানার একটি গরু স্কুল মাঠে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায়। দুপুর গড়িয়ে গেলেও সে ঘরে ফিরে না আসায় নানাবাড়ির লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরুকরে। পরদিন দুপুরে প্রতিবেশী শাহজাহান জমাদ্দার বাগানে বিবস্ত্র অবস্থায় ওড়না পেঁচানো ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

ময়না তদন্তকারী ডাক্তার ননী গোপাল রায় তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরে ইতির বাবা ২০১৪ সালের ৬ অক্টোবর একটি মামলা করেন।

এ মামলায় তদন্ত শেষ করে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি উপরোক্ত দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। একই বছরের ৭ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামি সুমন জমাদ্দার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পরবর্তীতে এই জবানবন্দি প্রত্যাহার করেন। রাষ্ট্রপক্ষ সর্বমোট ১৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে। অপরপক্ষে আসামিদ্বয় ১১ জন সাক্ষী হাজির করে।
পরে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া আসামী দুইজনকে ফাঁসির আদেশ দেন।

পরে এ মামলায় মৃত্যুদন্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। একইসঙ্গে আসামিরাও আপিল দায়ের করে। সে আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সেরর শুনানি শেষে হাইকোর্ট আসামিদের খালাসের রায় দিলেন।