ষাঁড়ের মালিক শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার জপসা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কোব্বাস মাদবরের কান্দি গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রী গৃহিণী হাবিবুন্নেছা (২৪)। তিনি কোরবানির ঈদে ষাঁড়টি বিক্রি করবেন। এটি দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় করছেন লোকজন।
২০১৭ সালে ৫০ হাজার টাকায় একটি গাভি কিনে পালন শুরু করেন হাবিবুন্নেছার বাবা নুর মোহাম্মদ ঢালী। হলেস্টিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়ের সিমেন ব্যবহার করে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ২০১৮ সালে জন্ম হয় ‘নবাবের’। জন্মের পর বাছুরটি দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। পরে নুর মোহাম্মদ ঢালীর কাছ থেকে বাছুরটি ৪৫ হাজার টাকায় কিনে আনেন তার মেয়ে হাবিবুন্নেছা। প্রয়োজন মতো খাবার ও পরিচর্যায় গরুর আকৃতি বাড়তে থাকে।
দিন দিন গরুটির ওজন বেড়ে ৭২০ কেজিতে এসে দাঁড়ায়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে গরুটির ওজন নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ বছর গরুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হাবিবুন্নেছার স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী ইসমাইল মাদবর (৩৩) বলেন, ষাঁড়টির খাদ্য তালিকায় রয়েছে কাঁচা ঘাস, খড়, গমের ভুসি, চালের কুঁড়া, ভুট্টা, ডালের গুঁড়া ও ছোলা। সব মিলিয়ে দিনে ২০-২৫ কেজি খাবার খায় গরুটি। খাবার কম খেলেও দিনে দিনে তার খাবারের চাহিদার পরিমাণ বেড়ে যায়।
বর্তমানে ‘শাকিল এগ্রো ফার্ম’ নামের খামারটিতে ২০টি গরু রয়েছে। এরমধ্যে হলেস্টিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের পৌনে ২ লাখ টাকা দামের একটি ষাঁড় রয়েছে। কোরবানির ঈদে বিক্রি করার জন্য নবাবসহ দুটি গরুটি প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ইসমাইল মাদবর বলেন, ‘এ ধরনের গরু লালন-পালন খুবই কষ্টকর। আমি মালেশিয়া থাকা অবস্থায় আমার স্ত্রী হাবিবুন্নেছা নবাবকে লালন-পালন করেছেন। আমি গত মে মাসের ১৯ তারিখে বাংলাদেশে আসি। নবাবকে আমাদের পরিবারের একজন সদস্যের মতো করে আমার স্ত্রী পালন করেছেন। পরিবারের সবাই মিলে যত্ন নিয়ে বড় করেছেন। অনেক শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। ৯ লাখ টাকায় গরুটি বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গরুটি কোনো হাটে না নিয়ে বাড়িতে খামারে রেখে অনলাইনে ছবি ও বিবরণ দিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করছেন এই প্রবাসী। বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্রেতারা গরুটির দাম কম বলছেন বলে জানান তিনি।
জপসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য (মেম্বার) নুরজামাল মাদবর বলেন, ‘গৃহবধূ হাবিবুন্নেছা নবাবকে লালন-পালন করে বড় করেছেন। এই কোরবানিতে গরুটি বিক্রি করবেন। এর দাম ধরা হয়েছে ৯ লাখ টাকা। তবে এখই পাইকাররা দাম বলছেন চার লাখ টাকা। এতো বড় গরু আগে দেখিনি।’
হাবিবুন্নেছা বলেন, “আদর করে ষাঁড়টির নাম রেখেছি ‘নবাব’। আমার খুব আদরের নবাব। যত্ন করে লালন-পালন করেছি। সে আমার পরিবারের সদস্যর মতো।”
নড়িয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, আমার জানামতে, শরীয়তপুর জেলার কোথাও এতো বড় ষাঁড় নেই। আমরাও ষাঁড়টির খোঁজখবর নিচ্ছি। ষাঁড়টির মালিক হাবিবুন্নেছা একজন ভালো উদ্যোক্তা।’