ঢাকা ০৮:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪

চকরিয়া-পেকুয়া ও কক্সবাজার সদরে কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে লোকসানে লবণচাষীরা

পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধিঃ কক্সাবাজার জেলার লবন শিল্প মৌসূমের প্রথম বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে । দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী জেলা কক্সবাজারে লবণ উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে এ বৃষ্টিতে কয়েক কোটি টাকার লবণ ভেসে গিয়ে ব্যাপক লোকসানের শিকার হয়েছে লবণ চাষী ও উদ্যোক্তারা। গত ৪ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যারাত থেকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে রাত এগারোটা নাগাদ প্রচন্ড ঝড় ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়। টানা ঘন্টা ধরে বৃষ্টিতে জেলার চকরিয়া-পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় লবণ মাঠের উৎপাদিত হাজার হাজার টন লবণ বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। পলিথিন পদ্ধতিতে উৎপাদিত সাদা লবণ গলে যাওয়ায় চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বেশী।হঠাৎ বৃষ্টির ফলে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। লবণ চাষী বেশ কয়েকজন মুরব্বি জানান, বৃষ্টিতে কক্সবাজার সদর উপজেলা, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় কয়েক হাজার একর লবণ মাঠে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় মৌসুমে উৎপাদিত লবণ বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে।মাটির গর্তে জমা রাখা পলিথিতে উৎপাদিত লবণ গলে গিয়েছে বৃষ্টির পানিতে। বৃষ্টি হওয়ায় অনেকে মাঠে স্তুপকৃত লবন রক্ষা করতে পারেননি চাষীরা। লবণ উৎপাদনের জন্য মাঠে বসানো পলিথিন সিট গুলো গুটিয়ে রেখেছেন চাষীরা।ঈদগাঁওর লবন চাষী আবদুল কইয়ুম জুয়েল বলেন, চলতি মৌসুমে লবণ চাষ শুরু হওয়ার পর থেকে অনুকূল আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাজমান থাকায় প্রচুর লবণ উৎপাদন হয়েছে।টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এলাকার লবণ চাষী আলী হেসাইন জানিয়েছেন, রাতের বৃষ্টিতে লবণ মাঠে পানি জমে লবণ উৎপাদন কাজ সপ্তাহ খানেক পিছিয়ে গেল। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে চাষীরা তাড়াহুড় করে মাঠে জমাকৃত লবণ পলিথিন মুড়িয়ে বৃষ্টি হতে রক্ষার চেষ্টা করে লবণ চাষিরা। কিন্তু এতেও অনেক চাষী শেষ রক্ষা করতে পারেনি।বাংলাদেশ লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক) সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় ৭০ হাজার একর জমিতে ১৮ লক্ষ টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে বলে জানা গেছে। অচমকা এ বৃষ্টিতে লবণ মাঠে আপাতত উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।লবন চাষী হামিদ উল্লাহ সিকদার বলেন, টানা ৪ মাস বৃষ্টি না হওয়ায় এক ঘন্টার বৃষ্টিতে লবণ মাঠের তেমন বড় ক্ষতি হবে না, বরং বৃষ্টির মিঠা পানি পাওয়ার পরে গ্রীষ্মের কড়া রোদ মাঠে পড়লে লবন মাঠ গরম হয়ে আগের চেয়ে অনেক গুন উৎপাদন বেশি হবে। দেশের একমাত্র লবন শিল্পজোন কক্সবাজারের ইসলামপুর শিল্প এলাকার মিল মাকিকরা জানান, লবনের উৎপাদন ও সরবরাহে বৃষ্টির কোন প্রভাব পড়বেনা। প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে লবণ বোঝাই শতাধিক কার্গোবোট বিভিন্ন মিলের জেটিঘাটে নোঙ্গর করে আছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে লবণচাষিরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সময় গুনলেও পান, মরিচ, তরমুজ ও শাক সবজি চাষিরা খুশি। যেহেতু এ বৃষ্টিতে আসছে ১ সপ্তাহ ক্ষেতে পানি দিতে হবে না।কক্সবাজার বিসিক সুত্র জানায়, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী (আংশিক) উপজেলার ১৩টি কেন্দ্রের অধীনে ৬৮হাজার একর জমিতে লবণ চাষ করা হয়। তারমধ্যে চকরিয়া উপজেলার দরবেশকাটা কেন্দ্রে ও পেকুয়া মিলে ১২ হাজার ৩৭৫হাজার একর, চকরিয়া-ডুলাহাজারা কেন্দ্রে ৪৭৫ একর, খুটাখালী ফুলছড়ি কেন্দ্রে ৪ হাজার ৩৭৬ একর, কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশীখালী কেন্দ্রে ৬ হাজার ৪৪৪ একর, মহেশখালী উপজেলার উত্তর নলবিলা কেন্দ্রে ৭ হাজার ৪শত একর, গোরকঘাটা কেন্দ্রে ৮ হাজার ৫৭৭একর, মাতারবাড়ি কেন্দ্রে ৫হাজার ৮০৬ একর, কক্সবাজার সদর উপজেলার গোমাতলী কেন্দ্রে ৪হাজার এক একর, চৌফলদন্ডি কেন্দ্রে ৩হাজার ২শত একর, বাঁশখালী উপজেলার সরল কেন্দ্রে ১হাজার ৪২১ একর, পুর্ব বড়ঘোনা কেন্দ্রে ৬হাজার ৯০একর, টেকনাফে ৩ হাজার ৯শত একর ও বিসিকের প্রদর্শনী কেন্দ্রে ৮৬একর জমিতে পলিথিন ও সনাতন পদ্ধতিতে লবণ চাষ হয়ে আসছে। বিরুপ আবহাওয়া ও বৃষ্টি থেমে গিয়ে লবন উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে এলে আবারো মাঠে নামবেন জেলার লবন চাষীরা।বাংলাদেশ লবন চাষী সমিতির সভাপতি হান্নান মিয়া বলেন, সোমবার সারাদিন আকাশ মেঘলা থাকায় চাষীরা তেমন মাঠে নামেননি। এখন ঝড় বৃষ্টি না হলেও মাঠে নতুন করে লবণ উৎপাদন শুরু হতে ১ সপ্তাহ প্রয়োজন হতে পারে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

গ্রাম পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা

চকরিয়া-পেকুয়া ও কক্সবাজার সদরে কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে লোকসানে লবণচাষীরা

আপডেট টাইম : ০৮:১৮:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ এপ্রিল ২০২১

পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধিঃ কক্সাবাজার জেলার লবন শিল্প মৌসূমের প্রথম বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে । দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী জেলা কক্সবাজারে লবণ উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে এ বৃষ্টিতে কয়েক কোটি টাকার লবণ ভেসে গিয়ে ব্যাপক লোকসানের শিকার হয়েছে লবণ চাষী ও উদ্যোক্তারা। গত ৪ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যারাত থেকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে রাত এগারোটা নাগাদ প্রচন্ড ঝড় ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়। টানা ঘন্টা ধরে বৃষ্টিতে জেলার চকরিয়া-পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় লবণ মাঠের উৎপাদিত হাজার হাজার টন লবণ বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। পলিথিন পদ্ধতিতে উৎপাদিত সাদা লবণ গলে যাওয়ায় চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বেশী।হঠাৎ বৃষ্টির ফলে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। লবণ চাষী বেশ কয়েকজন মুরব্বি জানান, বৃষ্টিতে কক্সবাজার সদর উপজেলা, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় কয়েক হাজার একর লবণ মাঠে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় মৌসুমে উৎপাদিত লবণ বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে।মাটির গর্তে জমা রাখা পলিথিতে উৎপাদিত লবণ গলে গিয়েছে বৃষ্টির পানিতে। বৃষ্টি হওয়ায় অনেকে মাঠে স্তুপকৃত লবন রক্ষা করতে পারেননি চাষীরা। লবণ উৎপাদনের জন্য মাঠে বসানো পলিথিন সিট গুলো গুটিয়ে রেখেছেন চাষীরা।ঈদগাঁওর লবন চাষী আবদুল কইয়ুম জুয়েল বলেন, চলতি মৌসুমে লবণ চাষ শুরু হওয়ার পর থেকে অনুকূল আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাজমান থাকায় প্রচুর লবণ উৎপাদন হয়েছে।টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এলাকার লবণ চাষী আলী হেসাইন জানিয়েছেন, রাতের বৃষ্টিতে লবণ মাঠে পানি জমে লবণ উৎপাদন কাজ সপ্তাহ খানেক পিছিয়ে গেল। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে চাষীরা তাড়াহুড় করে মাঠে জমাকৃত লবণ পলিথিন মুড়িয়ে বৃষ্টি হতে রক্ষার চেষ্টা করে লবণ চাষিরা। কিন্তু এতেও অনেক চাষী শেষ রক্ষা করতে পারেনি।বাংলাদেশ লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক) সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় ৭০ হাজার একর জমিতে ১৮ লক্ষ টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে বলে জানা গেছে। অচমকা এ বৃষ্টিতে লবণ মাঠে আপাতত উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।লবন চাষী হামিদ উল্লাহ সিকদার বলেন, টানা ৪ মাস বৃষ্টি না হওয়ায় এক ঘন্টার বৃষ্টিতে লবণ মাঠের তেমন বড় ক্ষতি হবে না, বরং বৃষ্টির মিঠা পানি পাওয়ার পরে গ্রীষ্মের কড়া রোদ মাঠে পড়লে লবন মাঠ গরম হয়ে আগের চেয়ে অনেক গুন উৎপাদন বেশি হবে। দেশের একমাত্র লবন শিল্পজোন কক্সবাজারের ইসলামপুর শিল্প এলাকার মিল মাকিকরা জানান, লবনের উৎপাদন ও সরবরাহে বৃষ্টির কোন প্রভাব পড়বেনা। প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে লবণ বোঝাই শতাধিক কার্গোবোট বিভিন্ন মিলের জেটিঘাটে নোঙ্গর করে আছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে লবণচাষিরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সময় গুনলেও পান, মরিচ, তরমুজ ও শাক সবজি চাষিরা খুশি। যেহেতু এ বৃষ্টিতে আসছে ১ সপ্তাহ ক্ষেতে পানি দিতে হবে না।কক্সবাজার বিসিক সুত্র জানায়, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী (আংশিক) উপজেলার ১৩টি কেন্দ্রের অধীনে ৬৮হাজার একর জমিতে লবণ চাষ করা হয়। তারমধ্যে চকরিয়া উপজেলার দরবেশকাটা কেন্দ্রে ও পেকুয়া মিলে ১২ হাজার ৩৭৫হাজার একর, চকরিয়া-ডুলাহাজারা কেন্দ্রে ৪৭৫ একর, খুটাখালী ফুলছড়ি কেন্দ্রে ৪ হাজার ৩৭৬ একর, কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশীখালী কেন্দ্রে ৬ হাজার ৪৪৪ একর, মহেশখালী উপজেলার উত্তর নলবিলা কেন্দ্রে ৭ হাজার ৪শত একর, গোরকঘাটা কেন্দ্রে ৮ হাজার ৫৭৭একর, মাতারবাড়ি কেন্দ্রে ৫হাজার ৮০৬ একর, কক্সবাজার সদর উপজেলার গোমাতলী কেন্দ্রে ৪হাজার এক একর, চৌফলদন্ডি কেন্দ্রে ৩হাজার ২শত একর, বাঁশখালী উপজেলার সরল কেন্দ্রে ১হাজার ৪২১ একর, পুর্ব বড়ঘোনা কেন্দ্রে ৬হাজার ৯০একর, টেকনাফে ৩ হাজার ৯শত একর ও বিসিকের প্রদর্শনী কেন্দ্রে ৮৬একর জমিতে পলিথিন ও সনাতন পদ্ধতিতে লবণ চাষ হয়ে আসছে। বিরুপ আবহাওয়া ও বৃষ্টি থেমে গিয়ে লবন উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে এলে আবারো মাঠে নামবেন জেলার লবন চাষীরা।বাংলাদেশ লবন চাষী সমিতির সভাপতি হান্নান মিয়া বলেন, সোমবার সারাদিন আকাশ মেঘলা থাকায় চাষীরা তেমন মাঠে নামেননি। এখন ঝড় বৃষ্টি না হলেও মাঠে নতুন করে লবণ উৎপাদন শুরু হতে ১ সপ্তাহ প্রয়োজন হতে পারে।