ঢাকা ০৮:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

দুই নৌপথ সচলে আগ্রহী ভারত

সাশ্রয়ী পণ্য পরিবহনে জলপথ স্বীকৃত। পৃথিবীর প্রায় বেশির ভাগ পণ্য এখনও জলপথেই পরিবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারতের ১০টি নৌ রুটের মধ্যে ভারত থেকে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মাত্র দুইটি রুট চালু রয়েছে। তবে গোদাগাড়ি-ময়া ও দাউদকান্দি-সোনামুড়া নৌপথ সচলে আগ্রহী ভারত।

গত অর্থবছর এবং চলতি বছরের এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রায় চার হাজারের বেশি পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করেছে। যার মধ্যে ৯৫ শতাংশ জাহাজই বাংলাদেশের। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) হিসাব মতে গত অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী জাহাজের সংখ্যা ৩২৬২। মাত্র ৭০টি জাহাজ ছিল ভারতের।

দু’দেশের জলপথগুলো সচল করে বারো মাস পণ্য পরিবহনে আগ্রহ রয়েছে উভয় দেশের। তবে এরমধ্যে ভারত এগিয়ে আসছে। বন্ধ থাকা দাউদকান্দি-সোনামুড়া এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ির সুলতানগঞ্জ ও পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানের ময়া জলপথটি চালু করতে চায় ভারত। এ জন‌্য ভারতের একটি প্রতিনিধি দল গত ১৬ মার্চ ত্রিপুরা আসেন এবং গোমতী নদী পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় আসেন। ২০-২৩ মার্চ পর্যন্ত রাজশাহীর গোদাগাড়ির সুলতানগঞ্জ পরিদর্শন শেষে জলপথে ঈশ্বরদী নদীপথ পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান। ২৮ মার্চ ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের।

জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির ভারতের প্রতিনিধি দলে আছেন এ সিলভা কুমার, জয়দেব মুখার্জি, অনিকুমার ও কে কে শাহু। বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন যুগ্ম সচিব এটিএম মোনেমুল হক। বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) বিআইডব্লিউটিএ ভবনে জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ভারতের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন, তারা সোনামুড়া-দাউদকান্দি এবং রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ-ময়া জলপথটি পরিদর্শনে আসেন। এই দুটো রুট চালু করতে আগ্রহী ভারত। ২০২০ সালের মে মাসে দাউদকান্দি-সোনামুড়া ও সুলতানগঞ্জ-ময়া প্রেটোকল রুটে যোগ হওয়ার পর ৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলক চালান গিয়েছে ত্রিপুরা। এই জলপথটি ত্রিপুরা থেকে উৎস গোমতী নদীর ওপরে ভরসা করেই চালু করা হয়েছে। সোনামুড়া প্রান্তে জেটি বসানো হলেও বাংলাদেশ প্রান্তে বিবিরবাজার বন্দরে কোনো পল্টুন বা জেটি নেই। যেমনটি নেই আশুগঞ্জ-করিমগঞ্জ, চিলমারি-ধুবড়ি রুটে। অবশ্য জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর তীরে বিআইডব্লিউটিএ’র একটি পাইলট হাউজ রয়েছে। আর সুনতানগঞ্জ-ময়া জলপথটি আরিচা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়েছে। সম্ভবনাময় জলপথটি চালু করতে গত বছরের অক্টোবর থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছে বিআইডব্লিউটিএ। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরীক্ষামূলক পণ্য চালান পাঠানোর আগে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত বছর ১২ অক্টোবর সুলতানগঞ্জ যায়। তারা পদ্মা নদীর ভারতীয় সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। এ পথটির দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার।
নদীপথ পরিদর্শন শেষে কমডোর গোলাম সাদেক বলেছিলেন, গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়ে নৌ-পথ চালু হলে দুই দেশই উপকৃত হবে। খুব ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। এক মাসের মধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে জলপথটি চালু প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানান তিনি। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তা হয়ে ওঠেনি। এরই মধ্যে কেটে যাচ্ছে প্রায় ছয় মাস।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের পণ্যবাহী নৌযানের সংখ্যা বেশি। গত অর্থবছরে বাংলাদেশি জাহাজে প্রায় ২৮ লাখ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করা হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে সিমেন্টের কাঁচামাল ফ্লাইঅ্যাশ, পাথর, স্টিল গার্ডার, কনটেনার রয়েছে। দিন দিন জলপথে পণ্য পরিবহনের পরিধি বাড়ছে। দিল্লি, কলকাতা ও অন্যান্য স্থান থেকে পণ্যবাহী একটি ট্রাক ত্রিপুরা পৌঁছোতে যেখানে কম করে হলেও ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে, সেখানে জলপথে ২০ গুণ বেশি পণ্য নিয়ে কলকাতা থেকে একটি জাহাজ মাত্র ৮ দিনে ত্রিপুরা পৌঁছোনো সম্ভব। এতে সময় ও অর্থের বিশাল সাশ্রয় হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মির্জাগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘর লুটপাট

দুই নৌপথ সচলে আগ্রহী ভারত

আপডেট টাইম : ১২:৪৫:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১

সাশ্রয়ী পণ্য পরিবহনে জলপথ স্বীকৃত। পৃথিবীর প্রায় বেশির ভাগ পণ্য এখনও জলপথেই পরিবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারতের ১০টি নৌ রুটের মধ্যে ভারত থেকে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মাত্র দুইটি রুট চালু রয়েছে। তবে গোদাগাড়ি-ময়া ও দাউদকান্দি-সোনামুড়া নৌপথ সচলে আগ্রহী ভারত।

গত অর্থবছর এবং চলতি বছরের এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রায় চার হাজারের বেশি পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করেছে। যার মধ্যে ৯৫ শতাংশ জাহাজই বাংলাদেশের। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) হিসাব মতে গত অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী জাহাজের সংখ্যা ৩২৬২। মাত্র ৭০টি জাহাজ ছিল ভারতের।

দু’দেশের জলপথগুলো সচল করে বারো মাস পণ্য পরিবহনে আগ্রহ রয়েছে উভয় দেশের। তবে এরমধ্যে ভারত এগিয়ে আসছে। বন্ধ থাকা দাউদকান্দি-সোনামুড়া এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ির সুলতানগঞ্জ ও পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানের ময়া জলপথটি চালু করতে চায় ভারত। এ জন‌্য ভারতের একটি প্রতিনিধি দল গত ১৬ মার্চ ত্রিপুরা আসেন এবং গোমতী নদী পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় আসেন। ২০-২৩ মার্চ পর্যন্ত রাজশাহীর গোদাগাড়ির সুলতানগঞ্জ পরিদর্শন শেষে জলপথে ঈশ্বরদী নদীপথ পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান। ২৮ মার্চ ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের।

জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির ভারতের প্রতিনিধি দলে আছেন এ সিলভা কুমার, জয়দেব মুখার্জি, অনিকুমার ও কে কে শাহু। বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন যুগ্ম সচিব এটিএম মোনেমুল হক। বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) বিআইডব্লিউটিএ ভবনে জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ভারতের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন, তারা সোনামুড়া-দাউদকান্দি এবং রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ-ময়া জলপথটি পরিদর্শনে আসেন। এই দুটো রুট চালু করতে আগ্রহী ভারত। ২০২০ সালের মে মাসে দাউদকান্দি-সোনামুড়া ও সুলতানগঞ্জ-ময়া প্রেটোকল রুটে যোগ হওয়ার পর ৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলক চালান গিয়েছে ত্রিপুরা। এই জলপথটি ত্রিপুরা থেকে উৎস গোমতী নদীর ওপরে ভরসা করেই চালু করা হয়েছে। সোনামুড়া প্রান্তে জেটি বসানো হলেও বাংলাদেশ প্রান্তে বিবিরবাজার বন্দরে কোনো পল্টুন বা জেটি নেই। যেমনটি নেই আশুগঞ্জ-করিমগঞ্জ, চিলমারি-ধুবড়ি রুটে। অবশ্য জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর তীরে বিআইডব্লিউটিএ’র একটি পাইলট হাউজ রয়েছে। আর সুনতানগঞ্জ-ময়া জলপথটি আরিচা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়েছে। সম্ভবনাময় জলপথটি চালু করতে গত বছরের অক্টোবর থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছে বিআইডব্লিউটিএ। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরীক্ষামূলক পণ্য চালান পাঠানোর আগে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত বছর ১২ অক্টোবর সুলতানগঞ্জ যায়। তারা পদ্মা নদীর ভারতীয় সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। এ পথটির দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার।
নদীপথ পরিদর্শন শেষে কমডোর গোলাম সাদেক বলেছিলেন, গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়ে নৌ-পথ চালু হলে দুই দেশই উপকৃত হবে। খুব ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। এক মাসের মধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে জলপথটি চালু প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানান তিনি। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তা হয়ে ওঠেনি। এরই মধ্যে কেটে যাচ্ছে প্রায় ছয় মাস।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের পণ্যবাহী নৌযানের সংখ্যা বেশি। গত অর্থবছরে বাংলাদেশি জাহাজে প্রায় ২৮ লাখ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করা হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে সিমেন্টের কাঁচামাল ফ্লাইঅ্যাশ, পাথর, স্টিল গার্ডার, কনটেনার রয়েছে। দিন দিন জলপথে পণ্য পরিবহনের পরিধি বাড়ছে। দিল্লি, কলকাতা ও অন্যান্য স্থান থেকে পণ্যবাহী একটি ট্রাক ত্রিপুরা পৌঁছোতে যেখানে কম করে হলেও ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে, সেখানে জলপথে ২০ গুণ বেশি পণ্য নিয়ে কলকাতা থেকে একটি জাহাজ মাত্র ৮ দিনে ত্রিপুরা পৌঁছোনো সম্ভব। এতে সময় ও অর্থের বিশাল সাশ্রয় হবে।