সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে শত শত যাত্রী অপেক্ষা করছে, কিন্তু কোনো গণপরিবহন নেই। বাধ্য হয়ে কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ রিকশা-ভ্যানে করে, আবার কেউ বিকল্প কোনো মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে কোনো ধরনের গণপরিবহন চলছে না। তবে প্রাইভেটকার ও কিছু সিএনজি চলতে দেখা গেছে। সকাল থেকে সাইনবোর্ড, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল মেডিকেল, কাজলা বাস স্ট্যান্ডে শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে মোহাম্মদপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া সব বাস। কয়েকটি বিআরটিসি বাস ছাড়া কোনো গণপরিবহন নেই। তবে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শ্যামলী রুটে চলাচল করছে লেগুনা।
ইজিবাইক ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে গাবতলী থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়কে। একইভাবে বসিলা, ঘাটারচর, কেরানীগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে পরিবহন শ্রমিকরা এই কর্মসূচিকে কর্মবিরতি বললেও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট তারা অন্য যানবাহন চলাচলেও বাধা সৃষ্টি করছেন। বিআরটিসিরি ডিপোগুলো থেকে জানানো হয়, তাদের বাসগুলো আটকে দেয়া হচ্ছে। এমনকি বিক্ষোভরত পরিবহনশ্রমিকরা এসব বাসের চালক ও সহকারীদের মারধর করছে।
গাবতলী ডিপোর ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান অভিযোগ করেন, পরিবহনশ্রমিকরা কোনো গাড়িগুলোকে পথে আটকে দিচ্ছে। সকাল থেকে অনেকগুলো বাস ছাড়া হলেও সেগুলো পথের বিভিন্ন জায়গায় আটকে আছে।
মতিঝিলে একটি সরকারি অফিসে চাকরি করেন আহমদ আলী সকাল সাড়ে সাতটার দিকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় এসে দেখেন কোনো গণপরিবহন নেই। বাধ্য হয়ে তিনি একটি সিএনজিতে উঠেন কয়েকজনের সঙ্গে। কিন্তু কিছুদূর আসার পর সিএনজিটি থামিয়ে দেয় শ্রমিকরা। পরে বাধ্য হয়ে তিনি পায়ে হেঁটেই মতিঝিলে আসেন।
পরিবহন শ্রমিকরা এবার ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে তাদের এই কর্মসূচি শেষ হবে। তবে দাবি আদায় না হলে এরপর অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, এই কর্মসূচি তারা বাধ্য হয়ে নিয়েছেন। এই আইনের বেশ কিছু ধারা শ্রমিক স্বার্থের বিরুদ্ধে করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদরে। এর মাধ্যমে পরিবহন শ্রমিকদের চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তাদের।
শ্রমিকদের আপত্তির কারণ, আইনে সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে জামিন অযোগ্য করা হয়েছে। আর দুর্ঘটনা যদি ইচ্ছাকৃত হত্যা প্রমাণ হয়, তাহলে বিচার হবে ৩০২ ধারায়, সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ফাঁসি।
পরিবহন শ্রমিককের কর্মসূচিতে বলা হয়েছে, এমনিতেই প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি চালান। তার ওপর আবার বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুর ঝুঁকি। এ কারণে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পেশা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা শুরু করে দিয়েছেন।
এ অবস্থায় এই আইনের সংশোধন করা ও বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমস্যা নিরসনে আট দফা দাবি জানায় শ্রমিক ফেডারেশন। এর মধ্যে আছে:
১. সড়ক দুর্ঘটনায় সব ধরনের মামলা জামিনযোগ্য করা;
২. শ্রমিকদের অর্থদ- পাঁচ লাখ টাকা করা যাবে না;
৩. সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে;
৪. ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করা;
৫. ওয়াস্কেলে (ওজন স্কেল) জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল করা;
৬. সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ;
৭. গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকের নিয়োগপত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকা;
৮. সব জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপকহারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা এবং লাইসেন্স ইস্যুও ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করা।