স্পোর্টস ডেস্ক : ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের খাতায় যোগ হতে পারতো আরো বড় কোন সংখ্যা। সেটা হয়তো বাংলাদেশের জন্য সুখকর হতো না। কিন্তু সেই সুযোগ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
৪১ ও ৪৩- এই দুই ওভারে ৫ বলের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের চাকা আটকে দিয়েছেন ভালোভাবেই। এ ধাক্কায় এই ওভারটা আর ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৫০ ওভারে ক্যারিবীয়দের স্কোর ছিলো ৯ উইকেটে ২৬১ রান। ক্যারিবীয়দের করা ২৬১ রানের জবাবে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের ফিফটিতে সহজ হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়।
আরো পড়ুন : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত পরীক্ষার নতুন সময়সূচি ঘোষণা
আরো পড়ুন : বিশ্ব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস আজ
আরো পড়ুন : কবিগুরুর ১৫৮তম জন্ম জয়ন্তী আজ
আড়াইশ রানের আশেপাশে টার্গেটগুলো বরাবরই বেশ ঝামেলার হয়ে থাকে। লক্ষ্যটা সহজ মনে হলেও হিসেবের বাইরে ব্যাটিং করলেই ম্যাচ চলে যায় প্রতিপক্ষের হাতে। কিন্তু সেই ঝামেলায় পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। ২ উইকেট হারিয়ে ৪৫ ওভারে নিজেদের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। সাকিবের ব্যাটে চার দিয়েই লক্ষে পৌঁছে যায় টাইগাররা। তার সাথে অন্যপ্রান্তে ছিলো মুশফিকুর রহিম।
যে ত্রীদেশীয় সিরিজে ৪০০ করেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেই তাদের সাথেই সাদামাটা জয় তুলে নিল টাইগাররা।
এদিকে মঙ্গলবার ডাবলিনের ক্লোনটার্ফ স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান নেন উইন্ডিজ দলপতি জ্যাসন হোল্ডার। শুরুতে উইন্ডিজদের ব্যাটে রান বন্যা বইলেও শেষদিকে এসে বাংলাদেশি বোলাররা ঘুরে দাঁড়ানোর কারনে বেশি বড় সংগ্রহের দিকে যেতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। উদ্বোধনী জুটিতে শাই হোপ এবং সুনিল অ্যামব্রিস, পরে তৃতীয় উইকেটে রস্টোন চেজের সঙ্গে মিলে টাইগারদের রান পাহাড়ে চাপা দেয়ার প্রাথমিক কাজটা প্রায় সেরেই ফেলেছিলেন হোপ।
বরাবরের মতো আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে বোলারদের সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, নিয়েছেন ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। যে কারণে হোপের সেঞ্চুরি এবং চেজের ফিফটির পরেও ৯ উইকেট হারিয়ে ২৬১ রানের বেশি করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ জিততে বাংলাদেশকে করতে হবে ২৬৩ রান।
ডাবলিনের ক্যাসেল এভিনিউতে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে রীতিমতো টাইগার বোলারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচের প্রথম ঘণ্টায় ১৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮৫ রান তুলে নেয় ক্যারিবীয়রা।
তবে তাদের ব্যাটিংয়ের শুরুটা এতোটা সহজ ছিল না। ইনিংসের প্রথম বলেই চার হাঁকালেও দুই ডান হাতি পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং মাশরাফি বিন মর্তুজার মাপা লাইন-লেন্থের বিরুদ্ধে শুরুর দিকে ধুঁকতে হয়েছে হোপ-অ্যামব্রিসকে।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম দুই বলেই অ্যামব্রিসের বিপক্ষে লেগ বিফোরের শক্ত আবেদন করেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু আম্পায়ার নাকচ করে দেন সে আবেদন। প্রথম ১০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৪৮ রান।
১১তম ওভারে প্রথমবারের মতো মোস্তাফিজুর রহমান আক্রমণে এলে হাত খুলে খেলার সুযোগ পান দুই ক্যারিবীয় ওপেনার। তবে বাঁ হাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান সাধ্যমতো চেষ্টা করেন রানের চাকা আটকে রাখার। সাকিবের এ প্রচেষ্টার সুফল ভোগ করেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
ঠিক পরের ওভারেই ড্যারেন ব্রাভোকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন সাকিব আল হাসান। আউট হওয়ার আগে ৪টি বাউন্ডারি মেরে ৫০ বলে ৩৮ রান করেছেন অ্যামব্রিস। ব্রাভো আউট হয়েছেন ৪ বলে মাত্র ১ রান করে।
পরপর দুই উইকেট পড়লেও তৃতীয় উইকেটে রস্টোন চেজকে নিয়ে ফের লম্বা জুটি গড়েন শাই হোপ। আড়াই বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২০০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছতে ৫৩ রানের প্রয়োজন ছিলো শাই হোপের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭০ রানের ইনিংস খেলায় আজ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশের বিপক্ষেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি।
ধারাবাহিকতা বজায় রেখে টাইগারদের বিপক্ষে টানা তৃতীয় ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলার পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২১তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ারের দুই হাজার রানও পূরণ করে ফেলেছেন হোপ। একইসঙ্গে ভেঙে দিয়েছেন দুই সাবেক ক্যারিবীয় তারকা স্যার ভিভ রিচার্ডস এবং ব্রায়ান লারার রেকর্ড।
এতদিন ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবচেয়ে কম ইনিংসে ২০০০ ওয়ানডে রান করার রেকর্ড ছিলো স্যার ভিভের। তিনি করেছিলেন ৪৮ ইনিংসে। আজ নিজের ৪৭তম ইনিংসেই ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন শাই হোপ। নিচে নামিয়ে দিলেন কিংবদন্তি ভিভকে।
এছাড়াও ক্যারিবীয়দের হয়ে সবচেয়ে কম সময়ে ২০০০ ওয়ানডে রান পূরণ করার নতুন রেকর্ডও নিজের করে নিয়েছেন ডানহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হোপ। অভিষেকের ২ বছর ১৭৩ দিনের মাথায় ২০০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। আগের রেকর্ড ছিল বাঁহাতি তারকা ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারার, ২ বছর ৩৬১ দিনে।
দুই কিংবদন্তির রেকর্ড ভাঙার পর চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজে দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা তৃতীয় সেঞ্চুরিটিও তুলে নেন হোপ। গত অক্টোবরের আগে ৩৭ ম্যাচের ৩৪ ইনিংসে মাত্র ১টি সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান শাই হোপ। সেই তিনিই গত ৬ মাসে মাত্র ১৪ ম্যাচের ১৩ ইনিংসে হাঁকালেন আরও ৫টি সেঞ্চুরি।
যার তিনটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে, টানা তিন ইনিংসে! আজ ডাবলিনের ক্যাসেল এভিনিউতে ব্যক্তিগত ৫৩ রানের মাথায় স্যার ভিভ রিচার্ডস এবং ব্রায়ান লারার রেকর্ড ভাঙেন হোপ। এরপর সেঞ্চুরিত তুলে নিয়ে চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা তৃতীয় সেঞ্চুরি করলেন ২৫ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান।
এর আগে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মাটিতে খেলতে এসে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে ১৪৬ এবং ১০৮ রানের দুইটি অপরাজিত শতক হাঁকিয়েছিলেন হোপ। সে ধারাবাহিকতায়। প্রায় ৫ মাস পরেও হাঁকালেন সেঞ্চুরি। যা কিনা তার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি।
দেখেশুনে খেলে ১২৬ বলে ১০ চার ও ১ ছয়ের মারে পূরণ করেছেন নিজের ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিটি। এছাড়া আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে হোপের ব্যাট থেকে এসেছে ১৭০ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।
তবে সেঞ্চুরির পর বেশিদূর যাওয়া হয়নি হোপের। মাশরাফি বিন মর্তুজার দুর্দান্ত শেষ স্পেলে কক্ষচ্যুত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে যেখানে ৩০০ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ উঁকি দিচ্ছিল, সেখানে মাশরাফির দারুণ বোলিংয়ে পরপর তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ইনিংসের ৪১তম ওভারে প্রথম ৫১ রান করা চেজকে ফেরান মাশরাফি। বড় শট খেলতে গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন চেজ। নিজের পরের ওভারের প্রথম বলেই সেঞ্চুরিয়ান হোপকে মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন টাইগার অধিনায়ক।
আউট হওয়ার আগে ১১ চার এবং ১ ছক্কার মারে ১৩২ বলে ১০৯ রান করেন হোপ। উইকেটে আসেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। মাশরাফির প্রথম বলেই চার হাঁকান তিনি। তবে পরের বলেই তাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ২ উইকেটে ২০৫ থেকে ৫ উইকেটে ২১১ রানের দলের পরিণত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ইনিংসের ৪৫তম ওভারে উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন সাইফউদ্দিন, ফিরিয়ে দেন অভিষিক্ত শেন ডাওরিচকে। তবু মোস্তাফিজের লাইন-লেন্থহীন বোলিংয়ের ফায়দা নিয়ে রান করতে থাকেন অ্যাশলে নার্শ এবং জোনাথন কার্টার। ৪৮তম ওভারে ৭ উইকেটে ২৫০ পূরণ হয় তাদের।
শেষ দুই ওভারে আরও ১১ রান নিয়ে দলীয় সংগ্রহটাকে ২৬১ রানে নিয়ে ঠেকায় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা। বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফির ৩ উইকেট ছাড়াও ২টি করে উইকেট নেন সাইফউদ্দিন এবং মোস্তাফিজ। দুই স্পিনার মিরাজ ও সাকিব নেন ১টি করে উইকেট।