ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহীতে চলতি আগস্টের শুরু থেকেই পদ্মার পানি বাড়ছে। এতে শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় দুই হাজার পরিবার জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বুধবার সকালে রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, উজান থেকে আসা ঢলের কারণে পদ্মায় পানি বেড়েছে, আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ‘৮৮ রামপুর-বোয়ালিয়া, রাজশাহী’ স্টেশনে মঙ্গলবার সকাল ৬টায় পদ্মার পানি ছিল ১৭ দশমিক ৫৯ মিটার উচ্চতায়। বেলা ৩টায় এই পানি ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে ১৭ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার উচ্চতায় ওঠে। বুধবার সকাল ৬টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ৭১ সেন্টিমিটার।
রাজশাহী পাউবোর হাইড্রোলজি বিভাগের পানি পরিমাপক এনামুল হক বলেন, উজানে ঢলের কারণে পদ্মায় পানি বাড়ছে। আগস্ট মাসজুড়েই পানি এভাবে বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে তীরবর্তী নিচু এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। নগরের রানিনগর এলাকায় অবস্থিত প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত আলোর পাঠশালার মাঠ সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রায় হাঁটুপানি।
বিদ্যালয়ের পাশে জরিনা বেগমের বাড়িতে কোমরপানি। তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৌকায় করে বাড়ির মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরমান আলী বলেন, পঞ্চবটি এলাকা থেকে হাদির মোড় পর্যন্ত তাঁর ওয়ার্ডের প্রয় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। পদ্মা নদীর ধারে ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতেন রাবেয়া বেগম (৫৫)।
তিনি বলেন, খাওয়ার যেমন কষ্ট, তার চেয়ে বড় কষ্ট ঘুমানোর। সারা রাত বসেই কাটাতে হয়। পানি বাড়লে বিপদও বাড়বে। তখন কীভাবে চলবেন, বুঝতে পারছেন না।
রাজশাহী নগরের কেশবপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নৌকায় করে বালু ভর্তি বস্তা এলে বাঁধের পাশে ফেলা হচ্ছে। মনজুর রহমান নামের এক ব্যক্তির বাড়ির সামনে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছিল।
মনজুর বলেন, এই এলাকায় বাঁধ করা হয়েছে ২০০০ সালে। পদ্মায় পানি এসে স্রোতের ধাক্কা খাওয়ায় পুরনো এসব বাঁধ এখন নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। বাঁধের দেবে যাওয়া ঠেকাতে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।
এদিকে, রাজশাহী নগরীর ওপারে চর খিদিরপুর এলাকা এখনও ভাঙছে। এলাকার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে নৌকায় করে এপারে আসছেন। রাজশাহীর বাঘা এবং গোদাগাড়ী উপজেলায় পদ্মার ওপারের চর ভাঙছে। নতুন করে গোদাগাড়ীর নিমতলা এলাকায় পদ্মার এপার ভাঙছে। এই এলাকাটি আগে কখনও ভাঙেনি। এবার ভাঙন দেখে এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। কয়েকদিন আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন।
পাউবোর রাজশাহীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রিফাত করিম বলেন, রাজশাহী নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। টি-গ্রোয়েন এবং আই বাঁধ ও কেশবপুর এলাকায় এই কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। তালাইমারী শহিদ মিনারের যে এলাকায় পানি ঢুকেছে সেখানে প্রতিরক্ষামূলক কিছু করার উপায় নেই। পদ্মার ওপারের চর খিদিরপুরেও কিছু করার নেই। তবে বাঘার ভাঙন রোধে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিফাত করিম।
তিনি আরও জানান, গোদাগাড়ীর নিমতলা এলাকাটি নতুন করে ভাঙতে শুরু করায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেওয়া হবে। এখন জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করে এলাকার ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।